কক্সবাংলা ডটকম(২২ সেপ্টেম্বর) :: ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মোট কাস্টম হাউজের সংখ্যা ১৭টি। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এর কোনোটিই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি কাস্টম হাউজ।
ফলে জুলাই-আগস্টে শুধু শুল্ক খাতেই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
চলতি অর্থবছরের জন্য কাস্টমস বা শুল্ক খাতে ৮৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর।
এর মধ্যে দেশের ছয়টি পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউজ, দুটি বন্ড কমিশনারেট ও নয়টি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটকে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় ১৩ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।
গত বছরের রাজস্ব আহরণ ও আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার প্রথম দুই মাসে আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে রাখা হয়েছিল।
এর পরও জুলাই-আগস্টের শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময় ৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা আহরণ করেছে কাস্টম হাউজগুলো। এ সময় শুল্ক খাতে প্রবৃদ্ধি তো হয়ইনি, উল্টো গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬০ কোটি টাকার রাজস্ব কম পেয়েছে এনবিআর।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো এক অজানা কারণে অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। প্রথম দুই মাসে খাদ্যদ্রব্যসহ প্রায় সব পণ্যের আমদানিই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। কমেছে রফতানির পরিমাণও। ফলে কাস্টম হাউজগুলোর রাজস্ব আহরণ বাড়েনি।
অন্যদিকে কয়েকটি আমদানিকৃত গাড়ি খালাস না হওয়ায় কাস্টম হাউজে শুল্ক আহরণও কমেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার কারণে এ বছর আমদানি-রফতানিতে ভাটা পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে দেশের বৃহৎ একটি কাস্টম হাউজের কমিশনার বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চিনি, গুঁড়ো দুধ, সয়াবিন তেল, সিমেন্ট ক্লিংকার, ওষুধ, আপেল, কমলাসহ বেশকিছু পণ্যের আমদানি কমেছে।
রাজস্ব আহরণের বড় উৎস তামাকপণ্যেরও রফতানি কমেছে। পাশাপাশি নির্বাচনের বছর হওয়ায় চলতি বছরের বাজেটে অনেক পণ্যে শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব আহরণও কমেছে। ফলে এনবিআরের জন্য এবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণও বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
এনবিআরের দেয়া কাস্টম হাউজগুলোর সর্বশেষ রাজস্ব চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে শুল্ক আহরণে সবচেয়ে পিছিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ।
জুলাই-আগস্টে ৯ হাজার ২৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি আদায় করতে পেরেছে ৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২ হাজার ৪৯৪ কোটি পিছিয়ে কাস্টম হাউজটি। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আহরণ কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে থাকার দিক থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের পরই রয়েছে ঢাকা বন্ড কমিশনারেট। ৯২৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কমিশনারেটের আহরণ দাঁড়িয়েছে ৩৬৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৫ শতাংশ অর্জনে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া বেনাপোল কাস্টম হাউজ ৯৬৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ করেছে ৭২২ কোটি টাকা, ঢাকা কাস্টম হাউজ ৭৯৬ কোটির বিপরীতে ৫৯৪ কোটি, কমলাপুর আইসিডি ৪৭৩ কোটির বিপরীতে ৩৫৪ কোটি, মোংলা কাস্টম ৭৪৪ কোটির বিপরীতে ৪৮০ কোটি, পানগাঁও কাস্টম হাউজ ২০৫ কোটির বিপরীতে ৯৫ কোটি ও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট ৭৩ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৮ কোটি টাকার শুল্ক আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাস্টম হাউজগুলোর মতোই বেশ পিছিয়ে রয়েছে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটগুলোও।
সারা দেশের নয়টি কমিশনারেটের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ কমিশনারেটের জন্য প্রথম দুই মাসে ১ কোটি টাকার কিছু কম লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও তা আহরণ করতে পারেনি এ দুটি কমিশনারেট।
এছাড়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি কুমিল্লা, রাজশাহী, যশোর, খুলনা, সিলেট কমিশনারেটও। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি শুল্ক আহরণ করেছে চট্টগ্রাম ও রংপুর কমিশনারেট।
Posted ২:০২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta