বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাশিয়ার এস-৪০০ : বড় পরীক্ষার মুখে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক

মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১
239 ভিউ
রাশিয়ার এস-৪০০ : বড় পরীক্ষার মুখে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ ডিসেম্বর) :: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সর্বশেষ নয়াদিল্লি সফরের ব্যাপ্তি ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার। তার স্বল্পদৈর্ঘ্যের এ সফরই ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অনেক বড় পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিয়েছে। তার সফরের ধারাবাহিকতায় রাশিয়া থেকে ভারতে এস-৪০০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ শুরু হয়েছে। এর বাইরেও অস্ত্র ক্রয় নিয়ে দুই দেশের একাধিক চুক্তি হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও হয়েছে।

মার্কিন বিধিনিষেধের ভয় থাকলেও এর তোয়াক্কা না করেই রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে জোরালো করে তুলেছে ভারত। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত এখন অনেকটাই রক্ষণশীল অবস্থানে চলে গিয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তেমন একটা ভরসা রাখতে পারছে না দেশটি। এ অবস্থায় ওয়াশিংটনের ছায়া থেকে বেরিয়ে ভারত এখন অনেকটাই স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতির ওপর জোর দিচ্ছে। পুতিনের সফরকালে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে এরই ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির নীতিনির্ধারকরা।

এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম ক্রয়ে ভারতের ব্যয় হচ্ছে ৫৪০ কোটি ডলার। এছাড়া পুতিনের সফরকালে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ভারতে ৬ লাখ রুশ একে-২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেল উৎপাদনে দুই দেশের ৬০ কোটি ডলারের একটি জয়েন্ট ভেঞ্চারও গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী এক দশকের জন্য দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিশ্চিতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছে। এসব চুক্তির যেকোনোটিকে বিবেচনায় নিলেই প্রচলিত সিএএটিসিএ (কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভার্সারিজ থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট) আইনের আওতায় ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ও বিধিনিষেধ জারি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও সেক্ষেত্রে কোয়াড জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো অবনতির দিকে যাওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে।

বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে এখন অনেকটাই বিব্রতকর অবস্থানে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। অনেকটা মার্কিন বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করেই রাশিয়া থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ে চুক্তি করেছিল ভারত। এতদিন পর্যন্ত চীনকে মোকাবেলায় ভারতকে পাশে পাওয়ার তাগিদে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি হোয়াইট হাউজের নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের শীতলতারও আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।

এস-৪০০ সরবরাহের চুক্তি পালন হওয়া নিয়েও অনেক সংশয় ছিল। তবে পুতিনের সর্বশেষ সফর সব হিসাব উল্টে দিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে এস-৪০০-এর সরবরাহ শুরুও হয়েছে। এ অবস্থায় ওয়াশিংটন চাইলেও নিজেকে নিষ্ক্রিয় রাখতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা। এর আগে একই অভিযোগে তুরস্কের বিরুদ্ধে অনেক কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা ধরে রাখতে হলে এর সপক্ষে ওয়াশিংটনের অনেক জোরালো যুক্তির প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শুরু থেকেই বেশ সংবেদনশীল আচরণ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এটিকে ধরা হয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা এফ-৩৫ জঙ্গি বিমানে সজ্জিত কোনো দেশ এস-৪০০ ক্রয় করলে, রুশ ইঞ্জিনিয়াররা সহজেই সেখান থেকে যুদ্ধবিমানটির নকশা সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন। এতে করে যুদ্ধবিমানটির দুর্বলতাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে সক্ষম হবে রাশিয়া। শুধু ন্যাটো জোটভুক্ত ও পরীক্ষিত মিত্রদের কাছেই যুদ্ধবিমানটি বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্কেরও এটি ক্রয় করার কথা ছিল। তবে এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এফ-৩৫ কনসোর্টিয়াম থেকে আঙ্কারার নাম কেটে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে নানা বিধিনিষেধও আরোপ করা হয় দেশটির বিরুদ্ধে। এর ঠিক পরের বছরেই ভারতও এস-৪০০ ক্রয়ের চুক্তি সই করে। তবে সে সময় দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি বিবেচনায় এ নিয়ে মৃদু আপত্তি তোলা ছাড়া খুব একটা উচ্চবাচ্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

বর্তমানে এ চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক, ভারত এখন আর ওয়াশিংটনের ছায়াতলে থাকতে চায় না। সাম্প্রতিক নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে কিছুটা আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বহুদিনের পুরনো ও পরীক্ষিত মিত্র মস্কোর প্রতি পুনরায় ঝুঁকেছে নয়াদিল্লি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নানা প্রতিবেদনেও এখন ইন্দো-মার্কিন সম্পর্কের এ আস্থার ঘাটতির বিষয়টি উঠে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ব্যবসা ও অর্থনীতিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিনাএফএনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ভারতকে নিয়ে গড়ে তোলা কোয়াড জোট গত বছর পুনরুজ্জীবিত করা হলেও দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক খুব একটা দৃঢ় হয়নি। স্নায়ুযুদ্ধকালে তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আগে থেকেই এক ধরনের অবিশ্বাস ছিল। এ অবিশ্বাসের বীজ ডালপালা ছড়ায় চলতি বছর ভারতে কভিডের প্রবাহ জোরালো হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে। ওই সময় ভারতের সহযোগিতায় করোনার টিকা ও টিকা তৈরির কাঁচামাল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেনি যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়াশিংটন টিকার কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে ভ্যাকসিন কূটনীতিতে লিপ্ত ভারতকে বড় ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দেশটির জন্য পরিস্থিতি আরো বিব্রতকর হয়ে ওঠে আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের সময়ে। চলতি বছরের মাঝামাঝি আফগানিস্তান থেকে পিছু হটার সময়ে দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক ও সম্মেলনের আয়োজন করেছে ওয়াশিংটন। এসব আয়োজনে অনেকটাই উপেক্ষিত ছিল ভারত। যদিও আফগানিস্তানের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

চীনকে মোকাবেলায় সর্বশেষ যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে অকাস জোট গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জোটে উপেক্ষিত থাকার বিষয়টিকেও সহজভাবে নেননি ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, অকাসের আবির্ভাব ইন্দো-প্যাসিফিকে কোয়াড জোটের গুরুত্বকে অনেকটাই খর্ব করেছে। উপরন্তু এ জোট গড়তে গিয়ে ফ্রান্সকে যেভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, সেটিও ভারতের কাছে নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতার ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের জন্য এর আগেও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ফাইভ আই জোট গঠন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেই জোট এখন পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে তেমন একটা কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোয়াড জোট অনেকটা সম্ভাবনা দেখিয়েছিল। তবে ভারতকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অকাস জোট গড়ে তোলায় কোয়াডও এখন অনেকটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চীনকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপগুলো একের পর এক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এ অবস্থায় ভারতও চীনের প্রতি অনেকটাই নমনীয় হয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত সপ্তাহেই চীনে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রি ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের বরাত দিয়ে বলেন, চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কৌশলগত বিচারে পরিবর্তন আনেনি ভারত। এছাড়া একে অন্যের মূল উদ্বেগের জায়গাগুলো অনুধাবনের মাধ্যমে উভয়কে লাভবান করতে ভারত চীনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

ওই সময় বিক্রম মিস্রি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কে মেঘাচ্ছন্নতার মধ্যে আলোর রেখার আভাস রয়েছে এবং চীন-ভারত সম্পর্ককে রক্ষা করে আরো এগিয়ে নিতে আমি কাজ করে যাব।’

এ সময় বিক্রম মিস্রির মন্তব্যের প্রশংসা করে ওয়াং ই বলেন, এ মেঘাচ্ছন্নতা কেটে যাবে।

239 ভিউ

Posted ৩:৩০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com