কক্সবাংলা ডটকম(২২ সেপ্টেম্বর) :: রাশিয়া থেকে যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র কেনায় চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি চীন ১০টি রাশিয়ান সুখই সু-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার পরই এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো।
এ ঘটনায় ক্রুদ্ধ মস্কো এবং বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনকে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আরোপিত শুল্কের কারণে বাণিজ্য ইস্যুতে দেশটির সঙ্গে একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করেছে চীন। খবর বিবিসি, এএফপি ও সিএনবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, চীন যদি রাশিয়া থেকে কোনো ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনে, তাহলে তা হবে মস্কোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার আচরণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে মস্কোর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যদিও ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার ওপর বিদ্যমান যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্রদের নিষেধাজ্ঞা পাত্তা দেয়নি চীন।
চীনের ইকুইপমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ইডিডি) এবং এর প্রধান লি শ্যাংফু রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র রফতানিকারক রসোবোরনেক্সপোর্টের সঙ্গে ‘লেনদেন’ করায় তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ইডিডি এবং লিকে ব্লকড পারসনস লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, এতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এদের সব সম্পদ জব্দ করা হবে এবং মার্কিন নাগরিকরাও ইডিডি ও লির সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসা করতে পারবেন না। এছাড়া ইডিডিকে রফতানি লাইসেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ৩৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে বৃহস্পতিবার একটি নির্বাহী আদেশ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার মূল নিশানা রাশিয়া। তবে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়ে আলোচনা করছে তুরস্ক।
মস্কোর একজন রাজনীতিবিদ বলেন, যুদ্ধবিমান ও মিসাইল বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে না।
রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থাকে রুশ পার্লামেন্টের সদস্য ফ্রাঞ্জ ক্লিন্তসেভিচ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত এই চুক্তিগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এই সামরিক সরঞ্জামগুলো চীনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
অস্ত্র বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থ রাশিয়ার আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গত বছর বিভিন্ন দেশে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি অস্ত্র বিক্রি করেছে দেশটি। রাশিয়ার অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর জন্য এশিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ২০০০ সাল থেকে রফতানিকৃত অস্ত্রগুলোর ৭০ শতাংশই এশিয়ায় বিক্রি হয়েছে। এ অঞ্চলের মধ্যে ভারত, চীন ও ভিয়েতনামে রাশিয়ায় নির্মিত অস্ত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
এদিকে রাশিয়া থেকে চীনের অস্ত্র কেনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো ও বেইজিং। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মস্কোকে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতাদের প্রধান প্রতিযোগীকে বাজার থেকে সরিয়ে দিতেই ব্যবসাবহির্ভূতসুলভ আচরণ করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির বিরুদ্ধ আচরণ।’ তবে নিষেধাজ্ঞার জবাবে কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে থাকা বেইজিং দ্রুত এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শোয়াং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলনীতির গুরুতর লঙ্ঘন এবং এতে দুই দেশ ও তাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি হবে। তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ভুল অতি দ্রুত শুধরে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি, অন্যথায় তাদেরকে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
বিশ্বের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে সম্প্রতি চীন ও রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো মজবুত করছে। কিছুদিন আগেই দেশ দুটি সপ্তাহব্যাপী যৌথ সামরিক মহড়ার আয়োজন করে, যা ছিল মস্কোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মহড়া।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতার সমাপ্তি টানবে তারা। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এর আগে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলা বোকার মতো কাজ, এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’
Posted ১:৩২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta