বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ও রূপরেখা

রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭
405 ভিউ
বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ও রূপরেখা

কক্সবাংলা ডটকম(২৫ নভেম্বর) :: কূটনৈতিকভাবে দেখলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির ক্ষেত্রে দুটি বিষয় ইতিবাচক বলা যায়। এ চুক্তি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনা হচ্ছিল। রোহিঙ্গারা যখন থেকে বাংলাদেশে আশা শুরু করেছে, তারপর থেকেই তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে বা কীভাবে সেই ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।

যেমন, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মিয়ানমার ঘুরে এসেছেন। এবার গিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত দুই-আড়াই মাস ধরে দু’পক্ষের মধ্যে যে সফর বিনিময় হচ্ছে, সেই ধারাবাহিকতায়ই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছে।

সেদিক থেকে এটি একটি অগ্রগতি। এটিকে উচ্চপর্যায়ের সফরগুলোর একটি ফল বলতে পারি আমরা। দ্বিতীয় যে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে মনে করা যায় তা হল, দু’পক্ষ আগামী ২ মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা নিয়ে একটি নীতিগত অবস্থান নিয়েছে। এ দুটি বিষয়কে আমরা কূটনৈতিক বিবেচনায় অগ্রগতি হিসেবে দেখতে পারি।

চুক্তির বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি। তবে একটি বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কথা চলছে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে, আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে দু’পক্ষ এ বিষয়ে কাজ শুরু করবে এবং এই ওয়ার্কিং গ্রুপই নির্ধারণ করবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে কী কী বিষয় থাকবে এবং তা কীভাবে পরিচালিত হবে। অনুমান করা যায়, এ লক্ষ্যে তারা একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে।

বস্তুত রোহিঙ্গারা কখন ও কীভাবে ফিরবে তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। বলা হচ্ছে, প্রত্যাবাসন শুরু হবে ২ মাস পর থেকে। কিন্তু কথা হল, এ ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাটা কী হবে? এ সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয় নিয়ে দেশে অনেক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। মিয়ানমার ১৯৯২ সালের চুক্তির শর্তগুলো বা চুক্তিটাকে একটি রূপরেখা হিসেবে ধরে বর্তমানে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে অথবা এ কাজটি সম্পন্ন করতে চায়। কথা হল, ১৯৯২ সালে যে চুক্তি হয়েছিল সেই রূপরেখাটি এখন কতটা কার্যকর? এ প্রশ্নের জবাব কিন্তু আমরা জানি না। এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য।

একটি হল ১৯৯২ সালের রূপরেখার আওতায় যেসব রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, তাদের অধিকাংশ গত ২৫ বছরেও ফিরে যেতে পারেনি। মিয়ানমার নিজেই তার ওই রূপরেখার প্রতি সম্মান দেখায়নি। কাজেই যেখানে তারা নিজেরাই ১৯৯২ সালের চুক্তির শর্তাবলী মানেনি, সেখানে এখন সেটা নতুন সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমার ভেরিফিকেশন বা যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলছে। এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় সু চি নিজেই বলেছেন, মিয়ানমারের অর্ধেক মুসলমান বাংলাদেশে চলে গেছে। যখন মিয়ানমার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এ কথা বলা হচ্ছে বা স্বীকার করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কেননা যে অর্ধেকসংখ্যক মুসলমান এসেছে, তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের একটা সুযোগ তৈরি হবে।

অন্যদিকে, ভেরিফিকেশনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিশ্রম করে রোহিঙ্গাদের, যারা নিজেদের মিয়ানমারের মানুষ বলে দাবি করছেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছে। তাহলে এ বিষয়টি ধরে আমরা এগোচ্ছি না কেন? আমার মনে হয় মিয়ানমার সরকার যদি এটি গ্রহণ করে, তাহলে যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি অনেক সহজ হতে পারে। এ বিষয়ে যখন মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা চলছে, তখন এর (রেজিস্ট্রেশন) ওপর ভিত্তি করে ভেরিফিকেশনের কাজটি অনেক বেশি সহজ হবে এবং আমরা দ্রুততর সময়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারব।

এবার অন্য একটি বিষয়। রোহিঙ্গারা ফেরত যাবে, এটা আমরা তাত্ত্বিকভাবে বলছি। দু’দেশের সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা কী প্রেক্ষাপটে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসছে সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে দু’-তিনটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। একটি হল, যারা নির্যাতনের মুখে, যেটাকে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা বলা হচ্ছে- এ ধরনের এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে- তাদের ফিরে যাওয়ার মতো যথেষ্ট আস্থার পরিবেশ সেখানে কীভাবে তৈরি হবে, এর কোনো ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই। আমি মনে করি, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ যখন কাজ শুরু করবে তখন এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে এবং তাদেরকে সেই আস্থা তৈরির উপায় খুঁজে বের করতে হবে। কী কী কাজ করলে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আস্থা তৈরি হবে, সেই কাজগুলো মিয়ানমার সরকারের দিক থেকে করা হয়েছে কিনা বা কীভাবে করা হবে, এর একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা বাঞ্ছনীয়।

দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা যে যাবে, সেখানে তাদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে? আমরা জানি, সেখানে রাখাইন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সংঘাত হয়েছে, সামরিক বাহিনী তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, সরকারের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। এ নানামুখী বিরোধপূর্ণ পরিবেশে কীভাবে তাদের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হবে, সে ব্যাপারেও সুস্পষ্ট বক্তব্য দরকার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিক থেকে বলা হয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সেখানে আন্তর্জাতিক বা বাইরের একটি সংস্থার সম্পৃক্ততা দরকার। আমি বলব, এটি শুধু বাংলাদেশের বক্তব্য নয়, যে কোনো স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষই এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন। কারণ সেখানে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি থাকলে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার পর তাদের নিরাপদ ভাবার একটা সুযোগ তৈরি হবে। সেটা জাতিসংঘ, আসিয়ান, কমনওয়েলথ বা ওআইসি- যে কোনো ধরনের সংস্থা হতে পারে। তা না হলে রোহিঙ্গাদের মনে স্বস্তির জায়গাটি তৈরি করা যাবে না। এবং সেটা না হলে তারা ফিরে যেতেও চাইবে না। ফিরে যদি যায়ও, সেখানে টিকে থাকতে পারবে না, আবার তারা বাংলাদেশে চলে আসবে। কাজেই তাদের নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির জন্য তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিটা জরুরি। এটা শুধু বাংলাদেশ বলছে বলে নয়, রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক নিরাপত্তার যে চাহিদা সেটা মনে রেখেই এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া দরকার।

তৃতীয়ত, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কাজ করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা। কাজেই রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার পর তাদের মিয়ানমারের সমাজে আত্তীকৃত করা প্রয়োজন, যে বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। নাগরিকত্ব প্রদান, অধিকার সংরক্ষণ এবং আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সেখানে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের জন্য যে ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, তারও রূপরেখা এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপকে তৈরি করতে হবে। এ কাজগুলো করা গেলে, সময় যা-ই লাগুক, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। আর তা যদি না হয়, তাহলে আমরা এ ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মধ্যেই থেকে যাব।

সবশেষে যা বলতে চাই তা হল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই বলছে, এমনকি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিও বলছেন কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কথা। এ লক্ষ্যে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা যায় এবং তার ভিত্তিতে ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চায়, সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ওই তিনটি বিষয়- ভেরিফিকেশন, নিরাপত্তা এবং মিয়ানমারের সমাজে রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণের বিষয়ে- যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। এটি করা গেলে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। আমি আশা করি, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ আগামী দিনে যখন বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবে তখন এ বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দেবে। তাহলেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে সুস্পষ্ট অগ্রগতি হতে পারে।

এম হুমায়ুন কবির : সাবেক রাষ্ট্রদূত

405 ভিউ

Posted ৩:০২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com