বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

লিবিয়ায় দাসের জীবনে বাংলাদেশিরা

শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২১
382 ভিউ
লিবিয়ায় দাসের জীবনে বাংলাদেশিরা

কক্সবাংলা ডটকম(৯ ডিসেম্বর) :: মানব পাচারের চারণভূমিতে পরিণত হওয়া লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নির্যাতন থেকে বাঁচতে দেশে থাকা ভিটামাটি ও পরিবারের শেষ সম্বল বেচে দিয়ে দিতে হয় মুক্তিপণ। কীভাবে এই দুর্বিষহ নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশিরা লিবিয়ায় দাসত্বের জীবন কাটাতে বাধ্য হন তা উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনে এক বাংলাদেশি তরুণের দালালদের মাধ্যমে প্রলুব্ধ হয়ে লিবিয়ায় যাওয়া, সেখানে বন্দী হয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া এবং বন্দী শিবির থেকে পালানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণ বর্তমানে সিসিলির রাজধানী পালমারো শহরে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়া এই বাংলাদেশি যেন আর বিরূপ অবস্থায় না পড়ে সেজন্য তার আসল নাম প্রচার করা হয়নি। ছদ্মনাম দেওয়া হয়েছে আলী। ঢাকার পাশের একটি এলাকায় ছোট একটি কসমেটিক্সের দোকান চালাত আলী। এই দোকান দিয়ে ভালোই চলছিল আলীর। ফেসবুকে আলীকে বিদেশে নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল এক দালাল। আলীর সঙ্গে যে দালালের পরিচয় হয়েছিল, সে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিয়মিত লিবিয়া যাওয়ার প্ররোচনা দিত। এমনকি তাকে বাড়িতে রাতের বেলা দাওয়াত করেও খাওয়াত। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত লিবিয়া সম্পর্কে কিছুই জানত না আলী।

দালালরা আলীর বাবা-মাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, লিবিয়ার কারখানায় কাজ করে তাদের ছেলে মাসে ৫০০ ডলার আয় করতে পারবে। আলীর বাবা-মা দালালদের বলেছিল, লিবিয়া যাওয়ার খরচ তারা জোগাতে পারবেন না। কিন্তু তাদের তিনটি বড় আকারের গরু দেখে দালালরা সেখান থেকে একটি বিক্রি করে টাকার ব্যবস্থা করার বুদ্ধি দেয়। সেই টাকা দিয়েই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আলীর এই সর্বনাশা জীবন শুরু হয়। ঢাকা থেকে বাসে যাত্রা শুরু করে ভারতের কলকাতায় পৌঁছানোর পর উড়োজাহাজে কয়েক দফায় মুম্বাই, দুবাই এবং কায়রো হয়ে লিবিয়া পৌঁছাতে আলীর সময় লেগেছিল এক সপ্তাহ। লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর আলীর মনে হয়েছিল নিরাপত্তা আর পুলিশবিহীন বিশৃঙ্খল একটি জায়গা সেটা।

দালালের লোকেরা তাকে সেখান থেকে দ্রুত একটি বন্দীশালায় নেওয়ার পর তার কাছে থাকা সব টাকা নিয়ে নেয়। এরপর তাকে মুক্তিপণের জন্য সেখানে আটকে রাখে। তাকে মুক্ত করার জন্য আলীর বাবা-মাকে শেষ গরুটিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। আলী বলেছেন, বন্দীশালায় ছোট একটি কক্ষে তার সঙ্গে আরও ১৫ জন বাংলাদেশি ছিলেন। যারা মুক্তিপণের টাকা দিতে পারত না তাদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না এবং মারধর করা হতো। তারা আমার সামনে একজনকে পিটিয়েছিল, এক সময় তার ঊরুসন্ধি থেকে রক্তপাত শুরু হয়। তারা ওই ব্যক্তিকে কোনো চিকিৎসা দেয়নি, হাসপাতালেও নেয়নি। মুক্তিপণ দেওয়ার পর বন্দীশালা থেকে মুক্তি দিয়ে আলীকে বিনাবেতনে বেনগাজিতে পাচারকারীদের একটি পানি বোতলজাত করার কারখানায় কাজ দেওয়া হয়।

পরে ত্রিপোলিতে গিয়ে একটি টালি কারখানায় কাজ করতে হয়। সেখানে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া দুর্বিষহ এক পরিবেশে থাকা আলী বলেন, কাজ থামালেই আমাদের মারধর করা হতো, লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিত। একবার আমাদের একজন একটা টালি ভেঙে ফেলায় একজন এসে তাকে লাথি মারতে শুরু করে। টালি কারখানার মালিক কিশোর বয়সীদের বাসায় তালা দিয়ে আটকে রাখতেন জানিয়ে তিনি বলেন, মালিক আমাদের কাজে নিয়ে যেতেন এবং কাজ শেষ হলে বাসায় ফিরিয়ে নিতেন।

আমাদের নজরদারির জন্য দুজন পাহারাদার ছিলেন। কাজের জন্য আমাদের কোনো মজুরি দেওয়া হতো না এবং পর্যাপ্ত খাবারও পেতাম না। যে কারণে আমরা পালিয়ে যেতে চাইতাম, আমাদের একজন পালানোর চেষ্টা করে তিনতলা থেকে পড়ে পা ভেঙে ফেলে। কয়েক দফা পালানোর ব্যর্থ চেষ্টার পর লিবিয়ার এক ব্যক্তি আলীকে মসজিদে আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেন। তখন আলী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানার জন্য আবারও পাচারকারীদের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে বাধ্য হয়। আলীর বাবা-মাকে আবারও টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে ইতালি পর্যন্ত দুর্ভোগের এই যাত্রায় সব মিলিয়ে তার পরিবারকে প্রায় ৪ লাখ টাকা জোগাড় করতে হয়েছে। সেজন্য নিতে হয়েছে সুদের ওপর ঋণ। গত বছর জুলাই মাসে আরও ৭৯ জনের সঙ্গে ডিঙি নৌকায় ভূমধ্যসাগর পারি দেওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করে আলী। সেখানে আরও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় আলীকে। আলী বলেন, দুই দিন আমরা সাগরের পানি ছাড়া কিছু দেখি নাই, কোনো কূলকিনারা নাই। একপর্যায়ে আমরা দূরে দুটি হাঙর দেখতে পাই। কয়েকজন বলে, তারা আমাদের খেতে আসছে। ভাবলাম, আমরা শেষ। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্ধার করে ল্যাম্পেদুসা দ্বীপে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পৌঁছান সিসিলি। আলী এখন সিসিলির প্রধান শহর পালেরমোতে অভিবাসীদের একটি শিবিরে থাকেন। নাইজেরিয়া, গাম্বিয়া এবং সেনেগাল থেকে আসা তরুণ অভিবাসীরাও রয়েছেন সেখানে।

তিনি জানান, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের নিজেদের মধ্যে কিংবা অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। পাচারকারীদের ওই বন্দীশালায় বিভিন্ন দেশের মানুষকে আলাদা আলাদা রাখা হতো। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভালো রোজগার আর একটু ভালো থাকার আশায় আলীর মতো অনেক বাংলাদেশি তরুণ লিবিয়া হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের একটি অংশের সলিল সমাধি ঘটছে ভূমধ্যসাগরে।

গত কয়েক বছরে লিবিয়ায় পাচারকারীদের হাতে আটক বাংলাদেশিদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছে মিজদাহ শহরে একটি গুদামে ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যার মধ্যে ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশের। ওই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাদের পরিবার মুক্তিপণের অর্থ দিতে পারেনি। তাই তাদের এই মৃত্যু।

382 ভিউ

Posted ১২:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com