শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

শম্বুকগতির পর্যটনশিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
651 ভিউ
শম্বুকগতির পর্যটনশিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

কক্সবাংলা ডটকম(২৬ সেপ্টেম্বর) :: করোনার এই সময়ে ইদানীং মানসিক প্রশান্তির খোঁজে ঘুরতে বের হওয়া শুরু করেছেন মানুষ। কেউ যাচ্ছেন সমুদ্রে, কেউ যাচ্ছেন পাহাড় কিংবা সমতলের দর্শনীয় স্থানগুলোতে। আর পর্যটক আকর্ষণে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউসগুলোতেও চলছে মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা। ফলে এসব লুফে নিচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠা শুরু করেছে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এর মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটনশিল্প। সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, পর্যটনশিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ অবদান রাখা পর্যটনশিল্পে করোনার আঘাতে গভীর সংকট দেখা দিলেও, তার ৮০ শতাংশ উত্তরণ ঘটেছে। কারণ পর্যটন নগরী ও সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য খুলেছে গত ১৭ আগস্ট।

সূত্র বলছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেশির ভাগ হোটেলে অতিথির সংখ্যা ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এলেও, এখন চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। তারকা হোটেল ব্যতীত সারা দেশের হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে ব্যাপক পর্যটক রয়েছেন। যদিও করোনাকালে বাংলাদেশে প্রায় ২ লাখের বেশি মানুষ চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছেন। পর্যটনশিল্পে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার তথ্যও দিয়েছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-টোয়াব।

এ প্রসঙ্গে টোয়াব সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, স্থানীয় পর্যটনশিল্প সচল হয়েছে। এই শিল্পের অংশীজনরা কর্মযজ্ঞে ফিরেছেন। কিন্তু ট্যুর অপারেটররা নিষ্ক্রিয়। যতদিন বিদেশিরা না আসবেন এবং বাংলাদেশিরা বিদেশে না যাবেন, ততদিনে পর্যটন খাত পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে না। তার মতে, জনজীবন যখন স্বাভাবিক হবে, স্বস্তি ও শান্তিময় হবে, তখনি মানুষ ঘুরতে বেড়াবেন।

কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, সত্যিকার অর্থেই এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউসের অধিকাংশ রুম বুকিং রয়েছে। সবাই এখন ব্যবসা ভালো করছেন। এককথায় কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকা পর্যটকদের জমজমাট অবস্থা। আসলে গত ছয় মাসের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে মানুষ এখন মানসিক প্রশান্তির জন্য ঘুরতে বের হচ্ছেন।

এদিকে পর্যটন খাতের সংকট উত্তরণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে দেওয়া চিঠিতে টোয়াব বলেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটনশিল্প। এই ভাইরাসের কারণে আউটবাউন্ড, ইনবাউন্ড ও অভ্যন্তরীণ পর্যটনের শতভাগ বুকিং বাতিল হয়েছে। এ কারণে শুধু ট্যুর অপারেটররা নয় বরং এ শিল্পসংশ্লিষ্ট সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জীবিকা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইনস, পর্যটক পরিবহন, ক্রুজিং ও গাইডিং সংশ্লিষ্ট অন্তত ৪০ লাখ পেশাজীবী। অন্যদিকে করোনায় বিপর্যয়ের মুখে দেশের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেল খাত বাঁচাতে সরকারের কাছে ছয় দফা সুপারিশনামা দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন-বিআইএইচএ।

জানা গেছে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান মাত্র ৪.৪ শতাংশ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার গুরুত্ব দিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল; কিন্তু বাস্তবায়ন চিত্রে সেই গুরুত্বের প্রতিফলন নেই। এমনকি একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নেই লেগে যাচ্ছে সাত থেকে আট বছর, তা-ও অনিশ্চিত।দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা (ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান) তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১৫ সালে। জাতীয় পর্যটন পরিষদের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুরু হয় চিঠি চালাচালি। অবশেষে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর পরামর্শক নিয়োগে ২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আইপিই গ্লোবাল লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)। কিন্তু করোনাভাইরাসের অজুহাতে এই কাজও নির্ধারিত সময়ে (২০২১ সালের ৩০ জুন) শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

পর্যটন খাতে এশিয়ার অন্য দেশগুলো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের পর্যটন খাতে এখনো শম্বুকগতি। অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জিডিপিতে এই খাতের অবদান এখনো ৩ শতাংশের নিচে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনায় পর্যটনের যথেষ্ট প্রতিফলন না থাকা, পর্যটনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আমলান্ত্রিক জটিলতা, পর্যটনকেন্দ্রগুলোর দুর্বল অবকাঠামো এবং খাতটিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশের পর্যটনশিল্প এগোতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বরং ২০১৬ সালে পর্যটন বর্ষে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক আনার ঘোষণা দিয়ে না পারার মতো ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশেরজিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ২.২ শতাংশ। এই খাতের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান ১.৮ শতাংশ। ২০১৭ সালে পরোক্ষ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মোট কর্মসংস্থানের ৩.৮ শতাংশ অবদান এসেছে পর্যটন খাত থেকে। অন্যদিকে নেপালের মতো দেশে জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৪০ শতাংশের বেশি।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং সৈকতে বিদেশি পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন (বিশেষ পর্যটন পল্লী)। এতে অর্থ সহায়তার ব্যাপারে ২০০৯ সালের ৩০ জুন সরকারের সঙ্গে আইডিবির চুক্তি হয়। এ জন্য ১৩৫ একর সৈকতসহ আশপাশের অতিরিক্ত আরো এক হাজার ১৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে অগ্রগতি সামান্য।

বিটিবির গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ও পর্যটন বিশ্লেষক জামিউল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এত দিনেও একক পর্যটন আইন, ন্যাশনাল ট্যুরিজম ডাটাবেইস, টিএসএ (ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট), কিউটিএস (কোয়ালিটি ট্যুরিজম সার্ভিস), প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ও গবেষণা সেল করতে পারিনি। সারা পৃথিবীতে পর্যটন চলে পর্যটনের নিয়মে আর আমাদের পর্যটন চলে আমলাদের ইচ্ছায়। ফলে এতে না আছে ব্যবস্থাপনা, না আছে কোনো শৃঙ্খলা। মহাপরিকল্পনার আশায় থেকে স্বল্প মেয়াদের পরিকল্পনাও যথাযথ বাস্তবায়িত হচ্ছে না।’

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘পর্যটন খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আমরা একটি টাকাও পাইনি। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েও সদুত্তর মেলেনি। ছোট ছোট ট্যুর অপারেটর তাহলে কিভাবে টিকে থাকবে?’

বেসরকারি পর্যটন প্রতিষ্ঠান জার্নি প্লাসের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌফিক রহমান বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যানকে বলা হয় পর্যটনের বাইবেল, যা আরো ২০ বছর আগে হওয়া উচিত ছিল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আমাদের সব কিছু বুঝতে সময় লেগে যায়। আর বাস্তবায়ন হতে লাগে আরো বেশি সময়।’

পর্যটন খাতের উন্নয়নে নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘পর্যটনের উন্নয়নে কিছু করতে গেলে আমরা দেখেছি ১৯টি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আছে। মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে গিয়ে আমরা নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা পর্যটন খাত নিয়ে বেশি সচেতন।’

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘পর্যটন খাতের উন্নয়নে ধীরগতির নানা কারণ আছে। সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে আমাদের কাজ করতে হয়। তবে আমরা টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখতে পাচ্ছি।’

 

651 ভিউ

Posted ৩:৪৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com