কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জুন) :: সারাদেশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে শুরু করে জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রায় একযুগ আগে থেকে ধাপে ধাপে সব হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এমনকি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৩০ হাজার পদ শূন্য থাকলেও তাতে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও জনগণের কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বিভিন্ন সময়ে বাড়িয়ে ৮শ’ থেকে দুই হাজার ৬০০-তে উন্নীত করা হয়েছে। শয্যা সংখ্যা ১১শ’ করার সময় জনবল নিয়োগ করা হয়েছিল। এরপর গত একযুগে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও নতুন জনবল নিয়োগ হয়নি। ১১শ’ শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতালটি চালানো হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে গুরুতরভাবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, স্থায়ী পদের বাইরে কোর্সে ভর্তি হওয়া চিকিৎসক, ইন্টার্ন, অবৈতনিক চিকিৎসকদের নিয়ে রোগীর চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গত বছর নার্স নিয়োগের ফলে সংকট কিছুটা দূর হয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট সংকট এখনও রয়েছে। তবে নন-মেডিকেল পদ নিরাপত্তাকর্মী, আয়া, পরিচ্ছন্নকর্মীসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকটের কারণে রোগীর সেবা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ১১শ’ শয্যার অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী যে পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল সেখানেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫৬০টি পদ শূন্য আছে। ঢামেক পরিচালক মনে করেন, রোগীর সেবার মান বাড়াতে শয্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
জানা যায়, উচ্চ আদালতের আদেশে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধন বাতিল হওয়ার কারণেই স্বাস্থ্য খাতে নতুন করে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া আটকে গেছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধন বাতিল হওয়ার পরও ১৬৬টি অধ্যাদেশকে সংরক্ষণ করে ওই সময়ে জারি করা বিধিমালাগুলোকে ২০১৩ নামে দুটি আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন-মেডিকেল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ওই আইনে কেন অন্তর্ভুক্ত হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সরকার চাইলে ১৬৬টির সঙ্গে আরেকটি অধ্যাদেশ সংরক্ষণ করে স্বাস্থ্য খাতে দ্রুত জনবল নিয়োগ করতে পারে। অন্যথায় আগামী পাঁচ বছরেও স্বাস্থ্য খাতে জনবল নিয়োগ করা যাবে না।
জনবল সংকটের চিত্র:
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমান মেয়াদে একযোগে সাড়ে ৬ হাজার চিকিৎসক এবং প্রায় ১০ হাজার নার্স নিয়োগ করে তাদের গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পদায়ন করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। শুধু চিকিৎসক ও নার্সের ওপরই স্বাস্থ্যসেবা নির্ভরশীল নয়। এর সঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে দেশের সব হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবলের চরম সংকট রয়েছে। এ কারণে জনগণের কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত এ সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে।
যে কারণে জনবল নিয়োগ করা যাচ্ছে না:
ওই বৈঠকের পর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক চিঠিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিদ্যমান নিয়োগবিধি ‘স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন-মেডিকেল কর্মকর্তা এবং কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৫’ সংশোধন ছাড়া সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্য পদ পূরণের বিধিগত কোনো বাধা নেই। তবে চিঠিতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
চলতি মাসের ৬ তারিখ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্বাস্থ্য খাতের জনবল সংকটের চিত্র তুলে ধরেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দ্রুত জনবল নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। জনবল সংকট ও এ কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে তারা প্রধানমন্ত্রীকে একটি সারসংক্ষেপ দেন।
আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ চায় মন্ত্রণালয়:
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, বিধিমালা জটিলতার কারণে জনবল নিয়োগ দেওয়া না গেলে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করা হলে আপাতত সংকট কিছুটা দূর করা যাবে। নতুন নিয়োগ বিধি প্রণয়নের পর ওই জনবলের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমদ বলেন, যেভাবেই হোক হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে জনবল প্রয়োজন। সে জন্য আইনি জটিলতার কারণে স্থায়ী নিয়োগ সম্ভব না হলেও আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
Posted ১২:০২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta