রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সুইস ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮
319 ভিউ
সুইস ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে

কক্সবাংলা ডটকম(১৯ ডিসেম্বর) :: চলুন, একটু কল্পনা দিয়েই শুরু করা যাক। আপনি বলিউডের একটি ক্রাইম-থ্রিলার মুভি দেখছেন। এক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে সেগুলো তার সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছে। অন্যদিকে ছবির নায়ক, যিনি নিজে একজন পুলিশ অফিসার, তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেই রাজনীতিবিদকে কালো টাকা সমেত পাকড়াও করার জন্য। কিন্তু সুইস ব্যাংকে রাখার কারণে কেউ সহজে পৌঁছাতে পারছে না সেই টাকার কাছে!

এখন বলুন, এই দৃশ্য কল্পনা করে আপনার মাথায় কী কী প্রশ্ন এসেছে। একটু আন্দাজ করে নেওয়া যাক! প্রথমেই আসবে, এই সুইস ব্যাংকটা কোথায় ভাই? আর কী এমন ব্যাংক যে এত চেষ্টা করেও টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না? সিনেমা আর পত্রিকায় তো শুধু অপরাধী আর দুর্নীতিবাজদেরকে দেখি এই সুইস ব্যাংকটাতে টাকা রাখতে। এই ব্যাংক কি অপরাধীদের ব্যাংক? তাহলে এই ব্যাংক বন্ধ করে দেয় না কেন? তাহলে দেখা যাক, সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় কিনা!

সুইস ব্যাংক কী?

‘সুইস’ শব্দটি এসেছে ‘সুইজারল্যান্ড’ থেকে। সহজ করে বললে, সুইস ব্যাংক বলতে সুইজারল্যান্ডের কোনো ব্যাংককে বোঝায়। সুইস ব্যাংক বলতে আসলে কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যাংককে বোঝানো হয় না। বরং, এর মাধ্যমে একটি ব্যাংকিং নেটওয়ার্ককে নির্দেশ করা হয়। বাংলাদেশি ব্যাংক বলতে আপনি যা বোঝেন, সুইস ব্যাংকও সেটারই অনুরূপ।

সুইস কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্টও অন্য আরেকটি সাধারণ ব্যাংকের একাউন্টের মতোই। শুধু তফাৎ এই যে, সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করে। আর সকল সুইস ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করে সুইস ফেডারেল ব্যাংকিং কমিশন।

কারা সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারেন?

সিনেমায় দেখে দেখে অনেকেরই একটি বদ্ধ ধারণা থাকে যে, সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, মিলিয়নিয়ার কিংবা সরকারি আমলাদের জন্যই দেওয়া হয়ে থাকে। কিংবা বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা নিজের কালো টাকার খোঁজ-খবর কাউকে জানতে দিতে চান না। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। সাধারণ একটি ব্যাংকের মতোই সুইস একটি ব্যাংকে প্রায় যে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। অর্থাৎ, একেবারে সাধারণ কোনো লোকও চাইলে সুইস কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্টধারী হতে পারবেন। বিশেষ করে যেসব দেশের সরকার অস্থিতিশীল, সেসব দেশের লোকেরা প্রায়ই সুইস ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন।

গোপনীয়তার জন্যই বেশি ব্যবহৃত হয় সুইস ব্যাংকিং; Source: Independent BD

কেন সুইস ব্যাংক একাউন্ট?

  • গোপনীয়তা

একজন গ্রাহক এবং তার সুইস ব্যাংকের গোপন সম্পর্ককে তুলনা করা যায় একজন রোগী ও তার ডাক্তারের সম্পর্কের সাথে। একজন ডাক্তার যেমন তার রোগীর ব্যাপারে গোপন তথ্য প্রকাশ করবেন না, তেমনি একটি সুইস ব্যাংকও তার গ্রাহকের গোপন তথ্য গোপন রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সুইস আইন অনুসারে একজন ব্যাংকার কখনোই কোনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারেন না (শুধুমাত্র কয়েকটি পরিস্থিতি ব্যতীত, যা আমরা পরবর্তীতে জানবো)। এমনকি কারোর ঐ ব্যাংকে একাউন্ট আছে কিনা, সে বিষয়েও মুখ খুলতে পারেন না কোনো ব্যাংকার! আপনার ডাক্তার বা আইনজীবী গোপন তথ্য প্রকাশ করলে আপনি যেমন তাদের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ নিতে পারেন, একইভাবে সুইস কোনো ব্যাংক আপনার গোপনীয়তা ভঙ্গ করলে আপনি সে ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থায় যেতে পারবেন। যদি আপনার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে একজন ব্যাংকারের সর্বোচ্চ ৬ মাস জেল হতে পারে এবং তার সাথে হতে পারে ৫০,০০০ সুইস ফ্রাঙ্ক অর্থদণ্ড। অর্থাৎ, আপনার গোপনীয়তা রক্ষার জন্যই হোক কিংবা নিজেদেরকে জেলে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্যই হোক, একটি সুইস ব্যাংক তার গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এক পায়ে খাড়া থাকে!

সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তার সুবিধা নিয়ে মানি লন্ডারিং করা নতুন কিছু নয়। অপরাধীদের কালো টাকার প্রধান গন্তব্য হচ্ছে সুইস ব্যাংকগুলো। বলা বাহুল্য, এর একমাত্র কারণ হচ্ছে তাদের এই কঠোর গোপনীয়তা।

  • কম ঝুঁকি

আপনি যদি চান আপনার টাকার কথা কেউ না জানুক, তাহলে গোপনীয়তা অনেক বড় কিছু। আর আপনি যদি অপরাধ জগতের মানুষ না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তবে ব্যাপারটা অনৈতিক হলেও সত্য যে, অনেকেই নিজের কালো টাকা লুকানোর জন্য সুইস ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। তাই অনেকসময় শুধুমাত্র গোপনীয়তাই সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পেছনের একমাত্র কারণ নয়।

সুইস ফ্রাঙ্ক; Source: cnbc.com

সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতি ও অবকাঠামো খুবই স্থিতিশীল। ফলে স্বভাবতই ঝুঁকির পরিমাণও অনেক কম। একইসাথে সুইস ব্যাংকাররা খুবই দক্ষ এবং আপনার টাকা কীভাবে বিনিয়োগ করতে হবে, সে ব্যাপারেও তারা যথেষ্ট পারদর্শী। তাছাড়া, সুইস ফ্রাঙ্ককে পৃথিবীর অন্যতম স্থিতিশীল মুদ্রা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং আইন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেকোনো সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য পেতে পারেন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের ব্যবস্থাটাই এমন। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী কখনোই কোনো অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন না, এমনটাই নির্দেশ দেওয়া আছে সুইস সরকারের পক্ষ থেকে। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যাতে তথ্য প্রকাশ না করেন, সেজন্য একটি আইনই করা হয়েছিল ১৯৩৪ সালে।

তবে এই আইনের বাইরেও তথ্য প্রকাশ করতে হবে, এমন কিছু বাধ্যবাধকতা অবশ্যই আছে। তা না হলে, বিদেশি অপরাধীরা সহজেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। কর ফাঁকি কিংবা অপরাধ সম্পৃক্ততা রোধ করার জন্যই সুইস ব্যাংকারস’ অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া রয়েছে, যেসকল ক্ষেত্রে ব্যাংকাররা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য প্রকাশে বাধ্য থাকবে।

• দেওয়ানি মামলা (যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা)

• অপরাধ সম্পৃক্ততা (মানি লন্ডারিং, কর ফাঁকি ইত্যাদি)

অর্থাৎ যদি আপনি এমন কিছু করে থাকেন যা সুইস আইনে অবৈধ, তাহলে আপনার সম্পদের সুরক্ষা ঠিক কাজে আসবে না।

নিরাপত্তার স্তরে কমতি নেই! Source: Business Tech

কীভাবে খুলবেন একটি সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট?

যদি আপনি সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সকল সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ধারণা রেখে নতুন অ্যাকাউন্ট চালু করতে চান, তাহলে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জন্য তৈরী হতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা

অধিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সুইস ব্যাংকগুলো তাদের নতুন গ্রাহকদেরকে নিয়ে প্রচণ্ড অধ্যবসায়ী। আপনার বৈধ পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া ছাড়াও আপনাকে সমস্ত সম্পদের উৎস দেখাতে হবে। আপনি আয় কীভাবে করেন এবং আপনার সমস্ত অর্থ কোথা থেকে আসে, এই সমস্ত ব্যাপার পুরোপুরি জানার পরেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ধাপে যাবে।

বড় অঙ্ক ডিপোজিট করার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার অন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দেখানোর প্রয়োজনও হতে পারে এবং প্রয়োজনে সেই টাকার উৎসের যথাযথ কাগজপত্রও।

  • হিসাব খোলার জন্য আবেদন করা

বিদেশিদেরকে মূলত নিজে সশরীরে উপস্থিত হয়েই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করতে হয়। একটি কথা মনে রাখতে হবে, আপনাকে এবং আপনার সমস্ত সম্পদের উৎস সম্পর্কে ভালোভাবে না জানা পর্যন্ত কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার নতুন হিসাব খোলার অনুমতি দেবে না। তাই কেউ যদি এক নিমেষে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলার চিন্তা করে থাকেন, তাহলে সেটা ঠিক সমীচীন হবে না। ভালোভাবে নিজের কাগজপত্র সম্পর্কে জানুন এবং সুইস ব্যাংকে হিসাব খোলার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ কোনো এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন।

সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা

অধিকাংশ বিদেশি নাগরিকই প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন না। আপনি ডেবিট ও ক্রেডিট চাইলে নিতেই পারেন কিন্তু সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মূল সুবিধা হচ্ছে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা। আপনি যদি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেন এবং চেক ইস্যু করেন তাহলে আপনার গোপনীয়তা ভঙ্গ হলো। অর্থাৎ আপনার যে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এত আয়োজন, সেটা পুরোপুরি ভেস্তে গেল। তাই গোপনীয়তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে খোলা গ্রাহকরা সাধারণত অ্যাকাউন্ট সর্বসমক্ষে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন।

পাঠকরা কি আমাদের দেশীয় ব্যাংকে একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়ার সাথে সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলার পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন? হ্যাঁ, অনেক পার্থক্য। আর এর কারণ হচ্ছে তাদের বাড়তি গোপনীয়তা। তাই, অর্থের বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থাকলে সুইস ব্যাংকগামী হতেই পারেন, তা-ই নয় কি?

319 ভিউ

Posted ২:৪৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com