কক্সবাংলা ডটকম(২৩ এপ্রিল) ::যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এ তালিকায় প্রবীণদের সংখ্যাই বেশি। গত বুধবার পর্যন্ত নিউইয়র্কে মোট ১৭৪ জন বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর ৩৬ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি রাজ্যে এ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১৯০ বাংলাদেশির। মৃতদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়সী।
এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত অনেকে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সন্তানদের আবেদনে অভিবাসী (ইমিগ্রান্ট) হয়ে তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তবে তাদের জন্য এখন এ দেশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। উন্নত জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করা বাংলাদেশিরা তাদের মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের অভিবাসী হিসেবে এখানে নিয়ে আসেন। এক অজানা-অচেনা পরিবেশে এসে জীবন কাটানো শুরু করেন প্রবীণ মানুষগুলো।
তবে যে সন্তানের আবেদনে তারা অভিবাসী হয়ে আসেন তাদের বোঝা নন, বরং ছোট নাতি-নাতনিদের লালন-পালন বা বেবি সিটিংয়ের মতো ব্যয়বহুল কাজটি হাসিমুখে করেন। ধর্মকর্ম পালনের মধ্য দিয়ে দিন পার করা এ মানুষগুলো সাম্প্রতিক সময়ে সন্তানদের কাছে ওয়ে ওঠেন আরও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থসেবার নতুন পদ্ধতি সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবীণ ব্যক্তিদের ঘরে থেকে দেখাশোনার হোমকেয়ার সার্ভিস চালু হওয়ার পর তাদের জীবনযাপন হয় আরও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
গত তিন-চার বছর ধরে এই হোমকেয়ার সার্ভিস বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশ জনপ্রিয়। অনেকেই নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়াতে ঘরে মা-বাবার সেবা করে ভালো অঙ্কের অর্থ আয় করছিলেন। আর এ অতিরিক্ত আয়ের আশায় অনেক সন্তান যারা মা-বাবাকে দেশ থেকে আনেননি, তারাও তড়িঘড়ি করে নিয়ে আসেন। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে নিউইয়র্কে প্রবীণ বাংলাদেশিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ঘরে বসে মা-বাবার সেবা করে সপ্তাহে এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ডলার আয় করার এ সুযোগের কারণে সন্তানদের কাছে তারা হয়ে ওঠেন স্বাচ্ছন্দ্য লাভের মাধ্যম।
কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় এ প্রবীণরাই তাদের সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ান। এই বয়সীদের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় পরিবারকে করোনামুক্ত রাখতে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন অনেকে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে একে একে শতাধিক প্রবীণের মৃত্যুর ঘটনা কমিউনিটিতে এখন আলোচিত বিষয়। অনেকেই বলছেন, অনিচ্ছায় শুধু সন্তানদের আবদার রক্ষায় এ দেশে এসে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই।
জানা গেছে, ব্রুকলিনে প্রাণ হারানো ৭০ বছরের এক প্রবীণ ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কে আসার এক মাসের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এমন ঘটনা আরও প্রচুর।
অভিজ্ঞ মহল বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়ে নিউইয়র্কে না এসে অবসর জীবনটা বাংলাদেশে কাটালে তাদের অন্তত করোনায় মারা যেতে হতো না। ফলে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর তালিকাও এত দীর্ঘ হতো না।
সর্বশেষ গত বুধবার করোনায় নিউইয়র্কে আরও দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ব্রুকলিনের প্রবীণ হাজী শরীয়তুল্লাহ (৭৫) স্থানীয় সুনি ডাউন স্টেট হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভেনটিলেশনে থেকে মারা যান। আর মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (৬৫) নামে অপরজনের মৃত্যু হয় বেলভিউ হাসপাতালে।
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর লকডাউনের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে বাংলাদেশ।
শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০০ বাংলাদেশী নাগরিক দেশে ফিরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস। চার্টার্ড ফ্লাইটটি পরিচালনার জন্য সরকার কাতার এয়ারওয়েজের সঙ্গে আলোচনা করছে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ জানান, ‘আমরা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে এসে আটকা পড়েছেন এমন কেউ দেশে ফিরতে চান কিনা। এখন পর্যন্ত ২০০-এর মতো বাংলাদেশী দেশে ফিরতে চেয়েছেন। তাদের ফেরানোর জন্য একটি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করতে কাতার এয়ারওয়েজের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তবে এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।’
চার্টার্ড ফ্লাইটটি চূড়ান্ত হলে যেসব বাংলাদেশী দেশে ফিরবেন, তাদের নিজেদের খরচে দেশে ফিরতে হবে বলে জানান শামীম আহমেদ।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, বেলিজ, কলম্বিয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, গিয়ানা ও ভেনিজুয়েলার কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এর আগে দূতাবাস বাংলাদেশী নাগরিকদের কেউ এসব দেশে আটকা পড়লে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য হটলাইনের (+ ১-২০২-৭৪০-৬৩০৫) মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানায়।
দূতাবাস জানায়, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের পরিচয় প্রকাশ করে না। ফলে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে কতজন বাংলাদেশী মারা গেছেন কিংবা আক্রান্ত হয়েছেন, তার সঠিক চিত্র দূতাবাসের কাছে নেই।
তবে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটি থেকে যতটুকু জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৬০-১৮০ জন বাংলাদেশী কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া দেশটিতে প্রায় এক হাজারের বেশি বাংলাদেশী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
Posted ২:৪২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta