রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

হতাশায় চাকরি প্রার্থীরা

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১
545 ভিউ
হতাশায় চাকরি প্রার্থীরা

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ নভেম্বর) :: বহু দিন দেখা নেই ওদের সঙ্গে। করোনার জন্য নিজ নিজ গ্রামে ছিল। ক্যাম্পাস খোলার সুবাদে একের পর এক কুশল জিজ্ঞাসা করতে আসছে ওরা আমার অফিসে। ওদের ‘কেমন আছ তোমরা সবাই?’ বলতেই অনেকের মুখে নানা নতুন কথা শোনা গেল। তবে একজন কিছুই বলছিল না, মন ভারী করে দাঁড়িয়ে ছিল। স্বভাবতই আমার নজরটা ওর দিকে গেল। ওকে ‘তুমি কেমন ছিলে?’ জিজ্ঞাসা করতেই করুণ স্বরে উত্তর দিল, করোনাকালে সে ভালো ছিল না মোটেই, আজও ভালো নেই।

ওর কাছে জানা গেল, এক দিনে (৮ অক্টোবর) ১৪টি চাকরির লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষিত হয়েছিল। কোনোরকমে দুটিতে অংশ নিতে পেরেছেন। এসব চাকরিতে আবেদন করতে গড়ে প্রতি প্রার্থীর আড়াই হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। এতে ওর ধার করা দুই হাজার টাকা গেছে। ওর কথা শেষ না হতেই অন্যরা একই বিষয়ে কথা বলা শুরু করে দিল। তারা কেউ মাস্টার্স শেষ করে এমফিলে ভর্তি হয়েছে, কেউ বসে আছে। কেউবা অনার্স সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির আবেদন করেছে। প্রায় দুই বছর সবকিছু বন্ধ থাকার পর হঠাৎ হুড়মুড় করে সবকিছু একসঙ্গে শুরু হওয়ায় ওরা কোনটাতে কীভাবে অংশ নেবে, সে জন্য সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুদিনে ২২টি চাকরির পরীক্ষার তারিখ গেছে। এক চাকরিপ্রার্থী উচ্চশিক্ষিত যুবক আঙুলে গুনে গুনে হিসাব করে দেখাতে লাগল। ওরা ঢাকার বাইরের একটি বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে এবং করছে। সবাই মেধাবী। বিসিএস থেকে শুরু করে বড় বড় চাকরিতে ওদের অগ্রজরা আগেকার দিনে সাফল্যের পথ দেখিয়ে ওদের উৎসাহিত করে গেছে। ওরাও খুব আশাবাদী হয়ে চাকরিতে আবেদন করেছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ। একজন জানাল, সব পরীক্ষা ঢাকায় গিয়ে দিতে হয় কেন? করোনার ক্রিয়া তো এখনো শেষ হয়নি।

আয়ারল্যান্ডে আবারও লকডাউন দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ায় সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু চলছে। ডেঙ্গু তো এখনো ভয়াবহ। এ অবস্থায় মানুষ মনে করছে করোনা বিদায় নিয়েছে, আমরা এখন উন্মুক্ত জীবনে ফিরে গিয়েছি। মাস্ক পরা ছেড়েই দিয়েছে মানুষ। অথচ করোনার তৃতীয় ঢেউ ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে আবার জেঁকে বসতে শুরু করছে। টিকা নেওয়ার পরও সংশয় হলো টিকার কার্যকারিতার মেয়াদ নিয়ে। তাই জার্মানিতে শুধু বৃদ্ধদের কথা বলা হলেও ইউরোপের অন্যান্য দেশে সবাইকে বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। চীনে ছোট বাচ্চাদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কারণ, স্কুলগামী বাচ্চারা সংক্রমিত হওয়ার পর ওরা খুব উদ্বিগ্ন। অথচ আমরা সে বিষয়ে মোটেও আগাম কিছু ভাবছি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নেওয়া হলো। অথচ চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পুনরায় ঢাকায় মানুষ ছুটেছে গণপরিবহনে গাদাগাদি করে বসে। কেউ যাচ্ছে কক্সবাজার বা টেকনাফ থেকে কেউবা লালমনিরহাটের বুড়িমারী বা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা থেকে। পোশাকশিল্প বা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের জন্য গ্রামের হাট-বাজারে গিয়েও দালালেরা ঘোষণা দিচ্ছে। অনেকে এসব ঘোষণায় পুলকিত হয়ে নতুন জীবিকা লাভের আশায় ছুটছে ঢাকায়। গ্রামে ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে, অথচ এ সময় কৃষিশ্রমিকেরা ছুটছে রিকশা-অটো চালাতে বড় শহরে।

সামনে আসছে ধুলাবালু মিশ্রিত নির্মাণকাজের শুকনো দিন। শহরে দেশি-বিদেশি মানুষের চলাচল বেড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াত ও অসতর্কতায় এ সময় বৈশ্বিকভাবে পুনর্জাগরিত করোনার তৃতীয় ঢেউ আমাদের দেশে শুরু হলে আমরা নিজেদের সামলাতে পারব তো? কারণ টিকা প্রদান বা গ্রহণ সবিশেষ সমাধান নয়, চিরস্থায়ী নিরাপত্তাও নয়। সংক্রমিত জন থেকে নিরাপদ দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে সতর্ক চলাফেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করাটাই হচ্ছে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায়। সম্প্রতি রাশিয়ায় সাপ্তাহিক ছুটিতে সেখানকার জনগণের বেপরোয়াভাবে বিদেশভ্রমণ ও মাস্ক না পরার আন্দোলনকে করোনার পুনঃসংক্রমণের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমাদের এই সতর্কতার বিষয়টি ভুলে গেলে মহাবিপদ ঘটতে দেরি হবে না।

যাহোক, আবারও একজন কথা তুলল, দুদিনে ২৯টি পরীক্ষার তারিখ হওয়ায় একজন প্রার্থী দিনে দুই শিফট পরীক্ষা দিলেও মোট চারটির বেশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না। সেটা নির্ভর করে একটি কেন্দ্র থেকে আরেকটি পরীক্ষাকেন্দ্র কত দূরে এবং ট্রাফিক জ্যামের ওপর। ‘যারা বাকি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, সেসব প্রার্থীর আবেদন ফি কি ফেরত দেওয়া হবে?’ প্রশ্ন করল আরেকজন। অন্যজন বলল, অনেক প্রতিষ্ঠান চাকরি দেওয়ার নাম করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে চলেছে বেকার যুবকদের সঙ্গে। এসব ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন যাচাই করার মতো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোথাও কেউ কী আছে?

বেকারদের নিয়ে কেউ কি এসব কথা ভাবার অবকাশ মনে করে? একেকটি চাকরিতে আবেদন করার ফি বা টাকা জোগাড় করার জন্য তাদের কত কষ্ট স্বীকার করতে হয়, তা তো শুধু ভুক্তভোগীরাই অনুধাবন করতে পারে। তা-ও যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তাহলে কারও জন্য চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরা দেয়, সবার কপালে তা নয়।

হাজারো সমস্যা মাথায় নিয়ে বাবা-মায়েরা তাঁদের প্রাণপ্রিয় বায়োলজিক্যাল চাইল্ডদের কিছু অর্থ জোগাড় করে দিয়ে পাঠাচ্ছেন বাড়ির বাইরে–দুদিনে ২২টা না হোক অন্তত ৪-৫টি চাকরির পরীক্ষা দিতে পেরে যদি কিছু একটা অর্জন করতে পারে। তাঁদের নিকটজন ও সন্তানেরা ছুটছে ঢাকায়, কিছু পাওয়ার আশায়, কিছু করার আশায়। যেখানে তাদের সবার মামা-চাচার বাড়ি নেই, থাকা-খাওয়ার জায়গা নেই। নেই যাত্রাপথের নিরাপত্তা, আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং আরও নানা ভয়। আমরা যতটুকু জানি টিউশনি করে বা ধারদেনা করে অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী এই যুদ্ধে অংশ নেয়। তাই এসব বেকারের যেকোনো চাকরির আবেদন ফি ৫০ টাকার বেশি করা উচিত নয়। অথবা বিনা ফিতে চাকরিতে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার জন্য সরকার এক মহতী ঘোষণার উদ্যোগ নিতে পারে।

অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম, ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

545 ভিউ

Posted ৩:৪৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com