কক্সবাংলা ডটকম :: ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ায় নতুন রেকর্ড হয়েছে। সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ জুন (১১ মাস ২৪ দিন) পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এটি এক অর্থবছরের হিসাবেও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
আর আলোচ্য অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে জুন মাসের ২৪ দিনেই নেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি প্রথমবারের মতো ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অর্থবছরের শেষ সময়ে ঢালাওভাবে ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই নেওয়া হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কড়াকড়ি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি নেতিবাচক ধারায় নেমেছে। বৈদেশিক ঋণ ছাড়েও কাক্সিক্ষত গতি নেই। সরকারের রাজস্ব আদায়েও ছিল ধীরগতি। ফলে প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকার বাধ্য হয়েই ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।
সাধারণত সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। এতে বেসকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়। তবে এবার বাংক ঋণের সিংহভাগেরই জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কারণ তারল্যে টান পড়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দিতে তেমন আগ্রহ দেখায়নি।
এ পর্যন্ত নেওয়া ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশেরই জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এই ঋণ নতুন টাকা ছাপিয়ে দিতে হয়েছে। এতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে তা মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলেছে।
সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে ব্যাংক ঋণ বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২৪ জুন শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। গত ২০২২ সালের ৩০ জুনে যা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ফলে সদ্য বিদায় নেওয়া অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস ২৪ দিনে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ২৭ লাখ ৪৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুন মাসের ২৫ দিনেই নেওয়া হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা।
এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। যদিও গত মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার কোনো ঋণই নিতে পারেনি। উল্টো আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করে আসছিল। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার রেকর্ড ১ লাখ ১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকার নিট ঋণ নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৯ হাজার ৮৯১ কোটি এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছিল ২৮ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এটি তার আগের তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। তবে এবার সেই রেকর্ডও ভাঙল সরকার।
এই অবস্থায় সদ্য শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
Posted ২:৩০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta