রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

২৯ এপ্রিলের ত্রিশ বছর পূর্ণ : উপকূল রক্ষায় প্রয়োজন দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১
407 ভিউ
২৯ এপ্রিলের ত্রিশ বছর পূর্ণ : উপকূল রক্ষায় প্রয়োজন দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড

এম. আমীরুল হক পারভেজ চৌধুরী :: ২৯ এপ্রিল ত্রিশ বছর পূর্ণ হচ্ছে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের। ২৯ এপ্রিল রাতে এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে; যা ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আঘাতের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়ে ৩০ এপ্রিল বিলুপ্ত হয়। এ ঘূর্ণিঝড়ে ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূল ও দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় ফসলের ক্ষেত, লাখ-লাখ গবাদি পশু। কর্ণফুলি নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নৌবাহিনীর জাহাজ। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় নৌবাহিনীর অনেক অবকাঠামো। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ। শিশু-সন্তান ও পরিবার নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় জলোচ্ছ্বাসে আটকা পড়ে নৌ ও বিমান বাহিনীর বহু সদস্য। বানে ভেসে যায় আদরের ছোট্ট ছোট্ট শিশু; কোথাও গোটা পরিবার হারায়ে যায় পানির স্রোতে। নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ২৯ এপ্রিল একটি। ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন লাশের স্তূপ জমেছিল দ্বীপগুলোতে। শুধু মানুষ নয়; গরু-ছাগল-মহিষ আর মানুষের মৃতদেহে একাকার হয়ে ছিল। কোনও রকম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মানুষ ও পশু মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল সেদিন।

ঘূর্ণিঝড়ের আড়াই যুগ পরেও সেই দুঃসহ দিনটি স্মৃতি থেকে অনেকেই মুছে ফেলতে পারেন না। নিহতদের লাশ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বার বার ফিরে আসে দুঃস্বপ্নের মতো উপকূলের যাপিত জীবনে। ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে উপকূলীয় মানুষের কাছে দিনটি ফিরে আসে বার বার। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এ ঘূর্ণিঝড়ে। ধারণা করা হয়, এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ১ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ভোলা, হাতিয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, হালিশহর, আগ্রাবাদ, কাটঘর, বন্দর, পতেঙ্গা, কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায়।

এ দিনটির কথা আজও ভোলেনি ক্ষতিগ্রস্থ ও স্বজনহারা উপকূলবাসী। প্রান্তিক বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল ও দ্বীপের মানুষকে বাঁচানোর জন্য বেড়িবাঁধে ঝুঁকিপূর্ণ জীবন-যাপন বন্ধ, আরও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং আশ্রয় কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সাফল্যের সাথে কাজ করছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী এবং অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগকে উৎসাহিত ও নিয়োজিত করতে হবে।

১৭৯৭ থেকে শুরু করে ২০২০ সালের ‘আমফান’ পর্যন্ত সময়ের শুমার-পর্যালোচনায় মোট ৪৮৩ বার মাঝারি ও মোটা দাগের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি দুর্যোগ বাংলাদেশের উপকূলকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ১৭৩ বছরে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ৩২৯ বার। এসেছে গড়ে ৫-১০ বছর পরপর। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের গত ৫০ বছরে ১৫৪টি ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস ঘটেছে ঘন ঘন। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপ সমূহ প্রকৃতির বিরূপ আচরণের প্রথম ও প্রত্যক্ষ শিকার সব সময়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০ বছরে অন্তত ৬৫ বার হৃদয়ে দাগ কাটার মতো বড় ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। দেশে উপকূলীয় অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা। এর মধ্যে সুন্দরবন ১২৫ কিলোমিটার; নদীর মোহনা ও ছোট-বড় দ্বীপমালা ২৭৫ কিলোমিটার; সমতল ও সমুদ্রসৈকত ৩১০ কিলোমিটার। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা উপকূল। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে গড়ে ৭৪৩ জন।

স্বাধীনতা লাভের পাঁচ দশকে দেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক অগ্রগতি বা সাফল্য থাকলেও উপকূলীয় অঞ্চলের অবদান তুলনামূলক নিম্নমুখী। বিশেষত তিনটি সামুদ্রিক বন্দর, প্রাকৃতিক সম্পদের স্বর্গ সুন্দরবন, পর্যটন সম্ভাবনাসমৃদ্ধ কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও ছোট-বড় দ্বীপাঞ্চলকে কার্যকর অবস্থায় পাওয়া জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অভিযাত্রায় কত জরুরি; তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমতল ও সমুদ্রসৈকত ছাড়াই উপকূলীয় অঞ্চলের নদীর মোহনাসহ ছোট-বড় দ্বীপমালার দৈর্ঘ্য ২৭৫ কিলোমিটার।

ভোলা, মনপুরা, হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, সন্দ্বীপ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্ট মার্টিন, চরকুকরী-মুকরী, নীলকমল, সোনার চর, পাতার চর, মাঝের চর, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, সুবর্ণ চর, বঙ্গবন্ধু দ্বীপ এরকম অসংখ্য ছোট-বড় দ্বীপমালার দৃষ্টি নন্দন প্রকৃতির আবহ পর্যটন শিল্প বিকাশ, বহুমুখী অর্থনৈতিক অভিযোজন, জীব বৈচিত্র্য ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষায় ‘দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের বিকল্প নেই। দুর্যোগ মোকাবেলাসহ বহুমুখী জীবন-জীবিকায় ‘দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড’ সৃষ্টি হলে উপকূলের সুরক্ষা ও মানুষের কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ নাগরিক উপকূলে বসবাস করে যেমন; তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির কমবেশি ২৫ শতাংশ অবদান উপকূলের। সমস্যা ও সংকট যেমন রয়েছে; তেমনি অফুরন্ত সম্ভাবনার ভান্ডার উপকূল। নদ-নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ শাসন প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক রাখতে পারলে উপকূল অঞ্চল জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রখতে সক্ষম হতো। উপকূলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চরাঞ্চল জুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং পুরনো বাঁধ সংস্কার জরুরি। ক্ষেত্রবিশেষ ছয় থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিটার পর্যন্ত বাঁধ উঁচু করতে হবে।

উপকূলীয় বাঁধগুলো টেকসই এবং নির্মাণ কাজে যথাযথ তদারকি করলে আগামী ১০০ বছরেও এ বাঁধের কোনো ক্ষতি হবে না। টেকসই বাঁধ নির্মাণে উপকূল, উপকূলের চরাঞ্চল ও দ্বীপের মানুষের জীবন ও জীবিকার গতিপথ ত্বরান্বিত হবে। উপকূলের সকল বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা চরগুলোর অফুরন্ত সম্ভাবনা যথাযথ কাজে লাগিয়ে ‘দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ উপকূল গড়ে উঠুক। দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও শক্তিশালী হোক আমাদের প্রিয় দেশ।

লেখক : পিএইচ.ডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারম্যান, উপকূল ফাউন্ডেশন

mail : ahcparvezdu@gmail.com

407 ভিউ

Posted ৯:০৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com