রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

WFP’র স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে কক্সবাজারে ২১১টি স্কুলের ৬০ হাজার শিশুর পুষ্টিপূরণ

শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
106 ভিউ
WFP’র স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে কক্সবাজারে ২১১টি স্কুলের ৬০ হাজার শিশুর পুষ্টিপূরণ

কক্সবাংলা রিপোর্ট :: জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি’র সহযোগীতায় এবং ইউএসডিএ এর অর্থায়নে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া এবং কুতুবদিয়াতে সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ২১১টি স্কুলে ৬০ হাজারের বেশি শিশুকে ২০১০ সাল থেকে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের আওতায় তিনটি বিষয়ে সহায়তা করে আসছে। এগুলো হচ্ছে ফুড ডিস্ট্রিবিউশন,লিটারেসি ইমপ্রুভ এবং হেলথ ও নিউট্রিশন।

জেলায় এ কর্মসূচির গোড়াপত্তন ও সফলতা সম্পর্কে গত ১৩ মার্চ উখিয়ায় খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা যায়, ডব্লিউএফপি’র এই কার্যক্রমগুলো চালু হওয়ার থেকেই পাল্টে দিয়েছে জেলার প্রাথমিক শিক্ষার প্রেক্ষাপট। এর ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। একসময় জেলার প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার ছিল নিম্নমূখী। প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থেকে যেত। যার প্রধান কারণ ছিল দারিদ্র্য।

তাছাড়া পারিবারিক অসচেতনতা, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মন্দ আচরণ ইত্যাদি কারণে স্কুল থেকে অনেক শিশু ঝরে পড়ত। কিন্তু ডব্লিউএফপি’র সহযোগীতায় ২১১টি বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু এবং শিশু ও শিক্ষকদের জন্য লিটারেসি ইমপ্রুভ এবং হেলথ ও নিউট্রিশন কার্যক্রম চালু করার পর থেকে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হতে শুরু করে। ডব্লিউএফপি’র সুরক্ষিত বিস্কুট ছাড়াও, প্রোগ্রামটি স্কুলে শিক্ষকদের জন্য পরিপূরক সাক্ষরতা এবং পুষ্টি সহায়তা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামগুলি শিশুদের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসাবে কাজ করে, অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের তালিকাভুক্ত করতে এবং তাদের স্কুলে রাখার জন্য একটি প্রণোদনা তৈরি করেছে। এই ধরনের প্রচেষ্টা পুষ্টির শূন্যতা পূরণ করতেও সাহায্য করেছে। যাতে স্কুলগামী শিশুদের আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অ্যাক্সেস থাকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, WFP তার স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে কক্সবাজার ক্যাম্প এবং ভাসান চরে ৩২০০টিরও বেশি শিক্ষাকেন্দ্রে প্রায় এক-চতুর্থ লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে সহায়তা করে।

স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের সফলতার ব্যাপারে উখিয়া জালিয়াপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম. এ. তাহের বলেন, ডব্লিউএফপি’র সহযোগীতায় স্থানীয়ভাবে এই কর্মসূচি চালু রাখা সত্যি প্রশংসনীয়। পৃথিবীর কোনো দেশে দুপুরে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাওয়ার নজির নেই। শিশুরা প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাঁচ ঘণ্টা ও তৃতীয় হতে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় প্রায় দশ ঘন্টা না খেয়ে স্কুলে অবস্থান করে।

ফলে প্রতি বছর শুধু ক্ষুধা আর অপুষ্টির তাড়নায় অসংখ্য শিশু স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়।কিন্তু ডব্লিউএফপি’র সহযোগীতায় ফুড ডিস্ট্রিবিউশন,লিটারেসি ইমপ্রুভ এবং হেলথ ও নিউট্রিশন প্রেগ্রাম সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় শিশুরা স্কুলমুখী হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির অভাবজনিত কোনো রোগে ভুগছে না।

উখিয়া কামারিয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা বেগম সহ অভিভাবকরা দাবি করছেন, ডব্লিউএফপি’র কার্যক্রমটি চালু হওয়ার পর থেকে এসব স্কুলে উপস্থিতির হার এখন প্রায় শতভাগ। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারে তিনবেলা খাবারের সামর্থা না থাকায় অনেক শিশুই অভুক্ত থেকে স্কুলে আসত। আবার অনেকে স্কুল কামাই দিত।

কার্যক্রমটি চালুর কারণে কোনো শিশুই অভুক্ত থাকছে না। সব শিশুই এখন নিয়মিত স্কুলে আসছে। ঝরে পড়ার রোধ হয়েছে।জেলার সর্বত্র ডব্লিউএফপি’রফুড ডিস্ট্রিবিউশন,লিটারেসি ইমপ্রুভ এবং হেলথ ও নিউট্রিশন কার্যক্রমটি শতভাগ বাস্তবায়িত করা সম্ভব হলে জেলার নিরক্ষরতা শূন্যবাগে নেমে আসবে আশা করা যায়।

এ ব্যাপারে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, ডব্লিউএফপি, কক্সবাজার জেলার প্রোগ্রাম এসোসিয়েট মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম বলেন,ইউএসডিএ এর অর্থায়নে এবং ডব্লিউএফপি’র সহযোগীতায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া এবং কুতুবদিয়াতে সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ২১১টি স্কুলে ৬০ হাজারের বেশি শিশুকে ২০১০ সাল থেকে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের আওতায় তিনটি বিষয়ে সহায়তা করে আসছে। এগুলো হচ্ছে ফুড ডিস্ট্রিবিউশন,লিটারেসি ইমপ্রুভ এবং হেলথ ও নিউট্রিশন।আর এগুলো বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা সহযোগিতা করছে।

এ প্রকল্পের আওতায় আমরা প্রত্যেক স্কুলে ৭৫ গ্রামের এক প্যাকেট ফোর্টিফাইড বিস্কুট দেয়া হয়। এছাড়া টিচারদের ক্লাস ইম্প্লেমেন্ট করার জন্য সাপ্লিমেন্টারি মেটেরিয়াল দেয়া হয়।এক্ষেত্রে আমরা গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২ শিশুদের বাংলা বিষয়ে পড়ার দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করি। এছাড়া সকল শ্রেণীতে একটা করে পাঠাগার দেওয়া আছে যেটা প্রাইমারি থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণীর বাচ্চাদের পড়ার জন্য আগ্রহ করে। এছাড়া টিচারদের ক্লাস ইম্প্লেমেন্ট করার জন্য তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করি এবং লার্ণিং মেটেরিয়াল দেয়া হয়। বাচ্চাদের আর খাতা,কলম,ওয়ার্ক বুক,স্টেরী বুক,পেনসিল,রাবার দেওয়া হয়।

এছাড়া প্রত্যেক স্কুলে আমাদের একটা লিটন ডক্টর গ্রুপ আছে যারা শিশুদের মাঝে স্বাস্থ্য বার্তা প্রেরণ করে। বিভিন্ন দিবস উদযাপনের শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করে। তারা শিক্ষার্থীদের বছরে দুইবার কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওজন উচ্চতা এবং তাদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে। সেটা রেকর্ড করে শিক্ষকদের সাথে শেয়ার করে। যদি কোন সমস্যা থাকে তারা যেন পরবর্তীতে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে পারে। এছাড়া হেলথ ইমপ্রুভমেন্টের জন্য প্রত্যেকটা স্কুলে একটা করে সবজি বাগান তৈরি করি যেখানে এফও’র টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস আছে সেই অফিসারও সহযোগিতা করে। এছাড়া প্রত্যেকটা স্কুলে আমরা এফও’র সহযেগীতায় একটা বাগান তৈরি করি যেখানে ১৫ সদস্যের ক্ষুদে কৃষিবিদ রয়েছে। যারা সবজিগুলোতে কি কি ভিটামিন আছে, কোন সময় কোন সবজি উৎপাদন করা হয় সে বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা টেকনিক্যাল জ্ঞান অর্জন পারে এবং এটা পরবর্তীতে সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে তারা এই বিষয়টা ছড়িয়ে দেয় । পরে তারা বাড়িতে গিয়ে তাদের বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার কর এবং বাবা-মায়েরা যাদের বাড়িতে এই ধরনের তাদের অল্প জায়গার মধ্যে উৎপাদন করতে পারে। এছাড়া কিভাবে একটা সুষম খাবারের প্লেট তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের এ বিষয়ে সহযোগিতা করে।

ব্যতিক্রমধর্মী এ কর্মসূচি পরিদর্শনে এসে  ডব্লিউএফপি(ইতালি) পার্টনারশিপ অফিসার নাথানিয়েল গ্লিডেন বলেন, আন্তর্জাতিক স্কুল খাবার দিবসের প্রতিফলন হিসাবে, বিশ্বজুড়ে ডব্লিউএফপি’র স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামগুলির অনেকগুলি ভ্রমণের বিবরণ দিতে হবে আমাকে।

বাংলাদেশে আজকে এই অনুষ্ঠানটি দেখলে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের গুরুত্বের একটি শক্তিশালী পন্থা। ক্ষুধার্ত শিশুরা শেখে না। স্বাস্থ্যকর এবং সুপুষ্ট শিশুরা আরও ভাল শিখে।এটি স্কুলের খাবারে বিনিয়োগের গুরুত্বের একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা, যাতে বাচ্চারা স্কুলে থাকে। এটি একটি উপায় যে শিশুরা তাদের জীবনে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে এবং পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।এটি একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ যা যেকোনো দেশ তাদের নিজেদের ভবিষ্যতে করতে পারে।

আমি আজকে দেখেছি শিশুরা কেমন আছে… বিস্কুট পেলে তাদের চোখ কেমন জ্বলে উঠেছিল, তারা কতটা কৃষিবিদ প্রোগ্রামে নিযুক্ত ছিল, তারা পুষ্টি শিক্ষার উপাদানে, শিক্ষার উপাদানগুলিতে কতটা ভালোভাবে অংশগ্রহণ করেছিল শিক্ষকদের দ্বারা। আমি এখানে সকলের প্রশংসা করতে চাই এমন একটি সুষ্ঠু কর্মসূচির জন্য এবং শিশুদের সবার আগে এবং শেষ পর্যন্ত মানবিক পুঁজি রাখার জন্য।

উল্লেখ্য ডব্লিউএফপি-এর স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে সহায়তা দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস্ অব আমেরিকা ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর ম্যাকগভার্ন-ডোল ইন্টারন্যাশনাল ফুড ফর এডুকেশন এন্ড চাইল্ড নিউট্রিশন প্রোগ্রাম। আর জাতীয় পর্যায়ে, ডব্লিউএফপি তার স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য সরকারকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে। যার লক্ষ্য নতুন সরকারি স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের সাথে সারা দেশে ৩৫ লাখ বাংলাদেশী স্কুল ছাত্রীদের সেবা করা।

 

106 ভিউ

Posted ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com