শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ই-কমার্সে প্রতারিত লাখো গ্রাহক

শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
259 ভিউ
ই-কমার্সে প্রতারিত লাখো গ্রাহক

কক্সবাংলা ডটকম(১৮ সেপ্টেম্বর) :: মোটা অঙ্কের মূল্যছাড়ের অফারে ই-কমার্সভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগাম অর্থ পরিশোধ করে এখন আহাজারি করছেন লাখ লাখ গ্রাহক। তদারকি সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে কেনাকাটা করে প্রতারিত হয়েছেন গ্রাহকরা। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারদের বেশিরভাগই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন। কিন্তু গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ ও ধামাকার মতো ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আরও আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। এক বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করলেও অদৃশ্য চাপে থেমে যায় তদন্ত। ফলে নির্দেশনা আসতেও সময় লেগেছে।

তারা আরও বলছেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নানা জায়গায় খরচ করত ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির লোপাট করা অর্থের ভাগ পেয়েছে অনেক নীতিনির্ধারক ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। ফলে তারা ছিল নমনীয়।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, ‘আরও আগে ব্যবস্থা নিলে গ্রাহকের লোকসান কম হতো, এটা যেমন সত্য, তেমনি এক বছর আগে কমিটি করলেও কমিটিকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি এটাও সত্য। ওই সময় ব্যবস্থা নিতে পারলে ভালো হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ ওঠার পরও “ইভ্যালি হবে বাংলাদেশের অ্যামাজন” এ ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে উৎসাহিত করার দায়িত্বে থাকা সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে ইক্যাবও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা নিয়েছে। ইভ্যালির অর্থে অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করত। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়েছে। তারপরও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় একটি নির্দেশনা তৈরি করা গেছে। আমাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

ইক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ ইভ্যালির কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন ইভেন্টে ইক্যাবের সদস্যরা কনট্রিবিউট করে। ইভ্যালিও করেছে। কিন্তু ইভ্যালিসহ অন্যরা যে মডেলে ব্যবসা করছিল, আমরা তার বিরুদ্ধে ছিলাম। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইসিটি বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছিল এক বছর আগে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে আমরা এখনো বলছি, ইক্যাব কখনো এসব নিয়ে নমনীয় ছিল না।’

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সভা শেষে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভাটি হয়।

সভায় সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতামত পাওয়ার পর ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীনকে (রাসেলের স্ত্রী) তাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সভায় ইভ্যালি ছয় মাসের মধ্যে দায়দেনা পরিশোধের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির এমডি রাসেলকে সময় দেওয়ার বিষয়ে কেউ মত দেননি। সবাই বলেছেন, আলোচ্য সময়ে দায়দেনা কোনোভাবেই শোধ করা সম্ভব নয়।

সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, যেহেতু কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এবং একই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ই-অরেঞ্জ শপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাই ইভ্যালির ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে। ওই আইনজীবী আরও বলেন, ইভ্যালিকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিলে তা প্রশ্নের মুখে পড়বে। যদি ইভ্যালি কোনো সুযোগ পায়, তবে অন্যান্য কোম্পানিও একই রকম সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় এ ধরনের আইনি মতামতের পরই মূলত ইভ্যালির শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ উঠে আসে।

তারা আরও জানায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি জানান, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সংক্রান্ত পরিপত্র জারির পর ইভ্যালির কার্যক্রম কিছুট নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হলেও আগে যে অনিয়ম হয়েছে তা সমাধান করা কঠিন। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালির দেওয়া হিসাব পর্যালোচনা করে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছে ১০৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা চলতি সম্পদ।

অন্যদিকে অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্র্যান্ড মূল্যই ৪২২ কোটি টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর এই সম্পদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা ৫৪৩ কোটি টাকা। ইভ্যালি ৩ বছর ধরে লোকসান দিচ্ছে। অথচ ওই দায়দেনা আগামী ৫ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে বিনিয়োগ লাভের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এটা অসম্ভব বিষয়। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে কোনোভাবেই তারা গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায়দেনা পরিশোধ করতে পারবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি সভায় জানান।

বৈঠক সূত্র জানায়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সভায় জানান, যেহেতু ইভ্যালি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ ও মার্চেন্টদের দেনা শোধ করতে পারছে না, তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধি জানান, বাজারে অসম অফার দিয়ে ভারসাম্যহীন পরিবেশ তৈরি করাও একটা অপরাধ।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন ইক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, ইভ্যালির মতো ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান বিধিবিধান অমান্য করলে তা কোনোভাবেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ইক্যাব শুধু তার সদস্যপদ বাতিল করতে পারে, আর কোনো ক্ষমতা নেই। সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। তবে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের স্বার্থ দেখতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মানুষকে অনলাইনে কেনাকাটা ও ই-পেমেন্ট সিস্টেমে সংযুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের সো­গান বাস্তবায়নে ইভ্যালির মতো প্রতারক প্রতিষ্ঠানকেও পেট্রোনাইজ করার কোনো মানে হয় না। কেন আগে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, তার সদুত্তর না আসা পর্যন্ত দায় এড়াতে পারে না সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘যেসব গ্রাহক ইভ্যালির কাছে টাকা পায়, তাদের টাকা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলো। আদালতের নির্দেশে গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার আইন আছে। কিন্তু আগে যুবক, ডেসটিনি, ইউনিটুপের টাকা গ্রাহকরা ফেরত পায়নি। এ জন্য ইভ্যালি, ধামাকা বা ই-অরেঞ্জের টাকা ফেরত পাবে কি না, সন্দেহ রয়েই যায়।’

 

259 ভিউ

Posted ৩:০৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com