কক্সবাংলা ডটকম(২২ জুন) :: সিঙ্গাপুর থেকে পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে আসা জাহাজ কালামাতাট্রেডার চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় প্রবেশ করে ১০ জুন। দীর্ঘসময় বহির্নোঙরে অপেক্ষার পর জাহাজটি পণ্য খালাসের জন্য জেটিতে ভেড়ার সুযোগ পায় গত বুধবার। এর মধ্যে সময় পেরিয়ে গেছে ১০ দিন। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় জেটিতে ভিড়তে পণ্যবাহী জাহাজের একদিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি হওয়া পণ্য সময়মতো বন্দরের জলসীমায় পৌঁছালেও তা খালাসে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বেশি। বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষা করছে। এর বিপরীতে কনটেইনার ওঠানামার কার্যক্রম চালু রয়েছে ১২টি জেটিতে। পণ্য খালাসের জন্য জেটি খালি না পাওয়ায় বন্দরের বহির্নোঙরে এখন তীব্র জাহাজজট দেখা দিয়েছে। জেটিতে ভিড়তে একেকটি জাহাজের এখন ১০ দিন পর্যন্তও সময় লেগে যাচ্ছে।
জাহাজজটের পাশাপাশি বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যাও এখন ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। রোজার মাসে পণ্য সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে ঈদ-পরবর্তী সময়ে চাপ বেড়ে এ সংকট দেখা দিয়েছে। তথ্যমতে, বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ২৬ হাজার ৮৫৭টি। এর বিপরীতে এখানে কনটেইনার জমেছে ৩৭ হাজার ৩১৬টি। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কনটেইনার এখন বন্দরের অভ্যন্তরে আটকে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরে অন্যান্য মাসের তুলনায় দৈনিক গড়ে ৫ ঘণ্টা কাজ কম হয়েছে রোজার মাসে। ফলে ঈদের পরপর কাজের চাপ অনেকখানিই বেড়ে গেছে। দুর্যোগকালীন আবহাওয়ার কারণেও পরিচালন কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং চাহিদার প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘গত সপ্তাহে বিশেষ করে বন্দরের কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির ছিল। ডেলিভারির অ্যাসাইনমেন্ট কম ছিল। পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করেননি। এতে ইয়ার্ডেও পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়েছে। এখন পুরোদমেই কাজ চলছে। খুব দ্রুতই বহির্নোঙরে জাহাজজটের নিরসন হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, দেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশই ঘটে সমুদ্রপথে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এখান দিয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল প্রায় ২৪ লাখ ১৯ হাজারটি। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৮৯ হাজার।
প্রতি বছর যে পরিমাণে কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে, তার জন্য বন্দরে বছরে কমপক্ষে একটি করে নতুন জেটি নির্মাণ প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে সমুদ্রগামী কনটেইনার জাহাজের জন্য কোনো জেটি নির্মাণ করা হয়নি।
এছাড়া বন্দরের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত বছরগুলোয় আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের বিষয়েও কর্তৃপক্ষ উদাসীন ছিল। এতে করে বন্দরে প্রতিনিয়ত জাহাজজটের কারণে ক্ষতি বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি স্থাপন ও বেশকিছু নির্মাণকাজ শুরু হলেও এগুলো শেষ হতে তিন-পাঁচ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানান বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বন্দর ব্যবহারকারী ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘জাহাজজটের কারণে আগের চেয়ে বেশি সময় বন্দরে অবস্থান করতে হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজকে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের যেমন দ্রুত পণ্য খালাসের উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করাটাও বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে দুই লাখ কনটেইনারে পণ্য আমদানি হয়। সাধারণত একটি জাহাজে গড়ে এক হাজার কনটেইনার ভর্তি আমদানি পণ্য থাকে। এসব কনটেইনারে আমদানি করা পণ্যের বড় অংশই বিভিন্ন শিল্পসহ পোশাক শিল্পের কাঁচামাল (কাপড়, তুলা, সুতা, বোতামসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম)। জাহাজজটের কারণে আমদানি পণ্য দেরিতে হাতে পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তৈরি পোশাক খাত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর বন্দর ও জাহাজীকরণ-বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বন্দরে দ্রুত সক্ষমতা না বাড়ালে পোশাক খাতের ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের এখানে এ ব্যবসা থাকবে না। কারণ পোশাক খাতে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর এ সমস্যা নেই।’
Posted ৩:১২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta