শুক্রবার ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে IRI এর ৮ সুপারিশ : কতটা প্রস্তুত প্রশাসন?

শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
0 ভিউ
জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে IRI এর ৮ সুপারিশ : কতটা প্রস্তুত প্রশাসন?

কক্সবাংলা ডটকম(৭ নভেম্বর) :: আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এক ‘গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।

তারা ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা ও অন্যান্য শহরে সরকারের অন্তর্বর্তী প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে এক প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে আইআরআই বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন বেশকিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সরকারের প্রচেষ্টার পরও প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে প্রতিবেদনে আটটি সুপারিশ তুলে ধরেছে সংস্থাটি।

সংস্থাটি ‘জুলাই জাতীয় সনদ’কার্যকরের ব্যাপারে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার কথা বললেও সতর্ক করেছে যদি আইনি ও কাঠামোগত সংস্কারগুলো অসম্পূর্ণ থাকে, তাহলে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আইআরআই মনে করে যদি রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও নাগরিক সমাজ একসঙ্গে স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে, তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও দৃঢ় ভিত্তি পাবে।

১৯৮৩ সাল থেকে ২৫৮টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা আইআরআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে মতপ্রকাশ ও নাগরিক অংশগ্রহণের পরিবেশ ‘উল্লেখযোগ্যভাবে উন্মুক্ত’ হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১১টি কমিশনের মাধ্যমে একটি সংস্কারমুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ ও এর প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’।

জুলাই সনদ বা চার্টারে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ৮৪ দফা সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন।

আইআরআই জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ, প্রবাসী ভোটের জন্য প্রস্তুতি, ব্যালট মুদ্রণ ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ নানা দিক থেকে অগ্রগতি দেখিয়েছে। নাগরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি প্রক্রিয়াও আগের তুলনায় খোলামেলা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

তবে ইতিবাচক অগ্রগতির পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা তুলে ধরেছে আইআরআই।

সংস্থাটি বলছে, নির্বাচনের আইনি ভিত্তি এখনও অসম্পূর্ণ; নতুন গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পাস হয়নি, যা প্রার্থিতা ও তদারকির স্বচ্ছতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছতার অভাব, নারীর অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বাচনী ভূমিকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইআরআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণকে অনেকেই কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেখছেন, তবে এটি ‘নাগরিক প্রশাসনের ভারসাম্যে প্রশ্ন তুলতে পারে।’ প্রবাসী ভোটাধিকার উদ্যোগকেও ‘সাহসী কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে আইআরআই।

সংস্থাটি বলছে, ডাকযোগে ভোট পাঠানো ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়া এখনও পর্যাপ্তভাবে স্পষ্ট নয়, যা ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

নির্বাচনকে এগিয়ে নিতে সুপারিশ

নির্বাচন কমিশন, সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য নির্বাচনী অংশীদারদের বিবেচনার জন্য প্রতিবেদনে আট দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচন-পূর্ববর্তী বাকি সময়কালে এবং তার পরেও যদি এই ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে বলে সংস্থাটি মনে করছে।

১. জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চূড়ান্ত করা

রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’কার্যকর করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করতে হবে। সময়সীমা নির্ধারণ, অমীমাংসিত বিধানগুলোর সমাধান এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ্যে জানানো প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে একযোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করে গণভোটের জন্য আইনগতভাবে শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করতে হবে। গণভোটের সময়সূচি ও পদ্ধতি স্বচ্ছ আইনগত ব্যাখ্যা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা উচিত, যাতে সংস্কার প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের প্রতি জনআস্থা বজায় থাকে।

২. নাগরিক শিক্ষা জোরদার করা ও গণতান্ত্রিক সংস্কারকে সমর্থন দেওয়া

জুলাই সনদ ও প্রস্তাবিত সংস্কার সম্পর্কে জনগণের স্পষ্ট ধারণা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী নাগরিক শিক্ষা অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত যৌথভাবে দেশব্যাপী প্রচারণা চালানো, যাতে ভোটাররা সাংবিধানিক পরিবর্তন ও নতুন নির্বাচনী পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন। এই কার্যক্রমগুলো এমনভাবে পরিচালিত হওয়া দরকার, যাতে প্রথমবারের মতো ভোটার, তরুণ, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহজে এর আওতায় আসে।

৩. নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো 

রাজনৈতিক ক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া, নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সংরক্ষিত আসনের বাইরেও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

দলগুলোকে মনোনয়ন ও প্রচারণার সময় নারীদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণে জোর দিতে হবে।

৪. প্রার্থী নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা

রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছ, ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। বলপ্রয়োগ, অর্থপ্রভাব বা পক্ষপাতিত্বমুক্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দলীয় গণতন্ত্র জোরদার করা প্রয়োজন। মনোনয়ন পর্বে স্থানীয় সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ ও নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।

৫. সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা

নির্বাচন কমিশনের উচিত সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধ ও স্থানীয় উত্তেজনা প্রশমিত হয়। নির্বাচনের আগে ও চলাকালে জননিরাপত্তা রক্ষায় স্পষ্ট যোগাযোগব্যবস্থা, যৌথ প্রতিক্রিয়া কাঠামো এবং দায়িত্ব বণ্টন থাকা প্রয়োজন।

৬. নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো

নির্বাচন কমিশনকে নাগরিক পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদনের জন্য স্পষ্ট, সহজলভ্য ও সময় সীমাবদ্ধ মানদণ্ড প্রকাশ করতে হবে। যদি কোনো সংস্থাকে অনুমোদন না দেওয়া হয়, তাহলে কারণ লিখিতভাবে জানাতে হবে, যাতে জবাবদিহিতা ও আস্থা বৃদ্ধি পায়। স্বীকৃত পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে তাদের অঙ্গীকার প্রকাশ্যে পুনর্ব্যক্ত করা জরুরি। নির্বাচনের আগে কমিশনের উচিত পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে তা জানানো ও সর্বোত্তম চর্চা নিশ্চিত করা।

৭. রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা

নির্বাচন কমিশনের উচিত রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার আইনি উদ্যোগ নেওয়া। এতে নাগরিক ও গণমাধ্যম সহজেই অর্থের উৎস ও ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। তহবিল সম্পর্কিত ভুল তথ্য প্রদান বা গোপন রাখার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি নির্ধারণ এবং স্বাধীন নিরীক্ষা ও নাগরিক সমাজের তদারকি উৎসাহিত করা উচিত।

৮. অবাধ, স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা

গণমাধ্যমের উচিত দলীয় পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং সম্পাদকীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা।

সাংবাদিকদের ওপর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক চাপমুক্তভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

নাগরিক সমাজ ও নির্বাচন কমিশন একসঙ্গে ভোটার শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য চিহ্নিত করতে সহায়তা করতে পারে, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও আস্থাযোগ্য হয়।

কতটা প্রস্তুত প্রশাসন?

প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে এখনও রয়েছে নানামুখী অসন্তোষ। রয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য। দানা বাঁধছে নতুন পে-স্কেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য কমানোর দাবি। অপরদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে মাঠ প্রশাসন সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশে নির্বাচনি হাওয়া বইছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা প্রশাসনের। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেই প্রশাসন কতটা প্রস্তুত? জনমনে এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে। রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। পদোন্নতি, ক্যাডার বৈষম্য, মহার্ঘ ভাতাসহ নতুন পে-স্কেলের বৈষম্য কমানোর দাবি জোরদার হচ্ছে। এর বাইরেও সচিবালয়ের কর্মচারীরা সোচ্চার নিজেদের আরও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে। এর মধ্যে চলছে বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি কার্যক্রম। সচিবালয়ে এখনও চলছে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ শনাক্তের অঘোষিত কার্যক্রম। সচিব বা সিনিয়র সচিব নিয়োগ পাওয়ার পরও বাধার মুখে যোগদান করতে পারছেন না অনেকে।

এসব নিয়ে প্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা। এই উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি। এর ফলে সরকারি কাজ-কর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্ন রয়েছে।

এদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে। অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ প্রশাসনকে পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। ফলে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা এই উদ্বেগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতা নেওয়ার পর মব ভায়োর‌্যান্সসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকে ঘিরেই বেশি সমালোচনা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে দেখা গেছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এসবের জবাবে সরকার কেবল হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েই দায় সারছে বলে সমালোচনা করছেন অনেকে। মব ভায়োল্যান্স বন্ধ করার জন্য যে ধরনের সদিচ্ছা থাকা দরকার, সরকারের কর্মকাণ্ডে সেসব উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।

জবাবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন সময় তার ভাষণে বলছেন, মবের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনও দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি করা বর্তমান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব পদোন্নতির সুপারিশ নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আপত্তি রয়েছে। প্রশাসন ক্যাডার বাদ দিয়ে বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ‘অস্পষ্ট রিপোর্ট ও জনবিরোধী’ প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ’ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ স্লোগানে ডিএস পুলে কোটা বাতিল এবং সব ক্যাডারের সমতার দাবি জানানো হয়েছে।

‘সংস্কার বা পুনর্গঠন প্রস্তাব’ না থাকায় বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) সাধারণ ক্যাডার সংশ্লিষ্ট বিবৃতিসহ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিবার পরিকল্পনা) অ্যাসোসিয়েশন ৫ দফা দাবি জানিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের ৩ দফা রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা ২০ শতাংশ এবং ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ৩০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতার দাবি জানিয়েছেন। এসব নিয়ে প্রশাসনে চলছে চরম অসন্তোষ ও অস্থিরতা।

বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নিজ নিজ সংগঠনের অসন্তোষের কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

এছাড়াও নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখা বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকরা তাদের নানা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নির্বাচনি কাজে যুক্ত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ‘মব’ কালচার, হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে ভয় ও শঙ্কা রয়েই গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

এদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে মাঠ প্রশাসন সাজানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে উপসচিবদের মধ্য থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পদায়নের জন্য নতুন তালিকা তৈরি করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক পদে পদায়নের জন্য ২৯ অক্টোবর ১০ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর ২০ জন উপসচিবের সাক্ষাৎ নেওয়া হয়েছে। আর ৩১ অক্টোবর (শুক্রবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও নেওয়া হয়েছে আরও ১০ জনের সাক্ষাৎকার। যে ৪০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিসিএস ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এদের মধ্য থেকে যারা ডিসি পদে নিযুক্ত হবেন তারাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবেন।

জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচনি প্রস্তুতি-সংক্রান্ত বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সবচেয়ে ‘ফিট’ কর্মকর্তাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডিসি পদে পদায়ন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি। নিজ জেলা বা শ্বশুরবাড়ির এলাকায় কাউকে পদায়ন করা হবে না। তাদের কোনও আত্মীয়স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কিনা পদায়নের ক্ষেত্রে সে বিষয়টিও লক্ষ রাখা হবে। গত ১ নভেম্বর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ডিসি, এডিসি, ইউএনওসহ বিচারিক দায়িত্বে এমন কাউকে পদায়ন করা হবে না, যিনি গত তিনটি নির্বাচনি কাজে যুক্ত ছিলেন। আগের তিন নির্বাচনে ন্যূনতম ভূমিকা থাকলেও তাকে এই নির্বাচনে দায়িত্বে রাখা হবে না। পদায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, শারীরিক যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, গণমাধ্যমে অনিয়মের প্রতিবেদন হয়েছে কিনা, তা দেখা হবে বলেও জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দফতর।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, ৬৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ করা যায়, এমন একটি ফিট লিস্ট ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে আছে। এরপরও সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে আরও কর্মকর্তাদের বাছাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের হাতে বেশি অপশন থাকে। সে অনুযায়ী নতুন ‘ফিট লিস্ট’ তৈরি করা হচ্ছে। চলতি নভেম্বরের মধ্যেই অধিকাংশ ডিসি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে একজন সাবেক ক্যাবিনেট সচিব বলেন, ‘প্রশাসনে কোনও ধরনের রাজনৈতিক ইন্ধন থাকা উচিত নয়। একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত প্রশাসন দরকার। এটি ঠিক করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বলেন, ‘একটা সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দক্ষ প্রশাসনের কোনও বিকল্প নাই। আমরা সেই প্রচেষ্টাই করছি। শুধু ডিসি নয়, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকার পুরো প্রশাসন ঢেলে সাজানোর কাজে যুক্ত হয়েছে।’

এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য গত রবিবার (২ নভেম্বর) রাজশাহী ও বগুড়া সফর করেছেন। তিনি সেখানে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণার্থী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।

এ সময় আইজিপি বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।’

0 ভিউ

Posted ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

SunMonTueWedThuFriSat
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com