রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন : দর নিয়ে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক

শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩
72 ভিউ
ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন : দর নিয়ে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক

কক্সবাংলা ডটকম :: ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ফের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ডলারের বাজার। ব্যাংক কিংবা মানিচেঞ্জার কোথাও ঘোষিত মূল্যে ডলার বিক্রি হচ্ছে না। ব্যাংকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খোলাবাজারে ডলারের দরে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার একদিনের ব্যবধানে খোলাবাজারে ডলারের দর আড়াই টাকা বেড়ে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। আগের দিন বুধবার এ বাজারে ডলারের দর ছিল ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা।

এমনিতেই ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো হঠাৎ করে ১২ থেকে ১৪ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে রেমিট্যান্সে ডলারের দাম। ফলে রেমিট্যান্স সংগ্রহে ব্যাংকের দর উঠেছে ১২২ থেকে ১২৪ টাকা। আর রেমিট্যান্স কেনায় খরচ বাড়ায় গত দুদিনে আমদানিতেও ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এখন আমদানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২২ থেকে ১২৫ টাকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২২ থেকে ১২৪ টাকা দরে ডলার কেনার বিষয়টি জানাজানির পর খোলাবাজারেও নগদ ডলারের দর দ্রুত বাড়ছে। যদিও নির্ধারিত দাম অনুযায়ী খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। গত সপ্তাহে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২০ টাকার নিচে ছিল। এর আগে গত বছরের আগস্টে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা উঠেছিল ডলারের দাম।

দেশে গত দেড় বছর ধরে চলছে ডলার সংকট। সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডলার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া দুই সংগঠন বাফেদা এবং এবিবি। শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ করত। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই দুই সংগঠন ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করছে। তবুও সংকট কাটছে না। উল্টো ডলার বাজারের পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে বারবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে। মূলত ডলারের দাম নির্ধারণ নিয়ে সমন্বয়হীনতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আসলে রেট নির্ধারণ করে দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। এটা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে আসা উচিত। বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি ও স্বচ্ছতা বাড়াতে আগের মতো বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় ফেরত যেতে হবে। তা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করে রেখেও বাজারের অস্থিরতা কমানো গেছে এমনটিও নয়। বরং এর মাধ্যমে অনেক ধরনের ম্যানুপুলেশন এবং দেনদরবার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

গত ৩১ অক্টোবর এবিবি ও বাফেদার মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনবে। আর আন্তঃব্যাংক ও আমদানিতে সর্বোচ্চ ১১১ টাকায় ডলার বিক্রি করতে হবে। এ ছাড়া গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় নেওয়া রেমিট্যান্স সংগ্রহে আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সীমা তুলে দিয়ে নিজেদের মতো করে প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অবশ্য এসব প্রণোদনার টাকা ব্যাংকের নিজেদের পরিশোধ করতে হবে, গ্রাহকদের কাছে থেকে এই বাড়তি দাম নেওয়া যাবে না। এই সুযোগেই ব্যাংকগুলো ১২২ থেকে ১২৪ টাকা দামে প্রবাসী আয় কিনছে।যেসব ব্যাংকের আমদানি দায় মেটানোর চাপ আছে, তারা এই দামে ডলার কিনে দায় মেটাচ্ছে। এতে আমদানিতে ডলারের দাম এক ধাক্কায় ১২-১৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকায় ওঠে।

এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর গত বুধবার জরুরি সভা করে এবিবি ও বাফেদা। সেখানে ৩১ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করার তাগিদ দেওয়া হয়। আর প্রবাসী আয়ে ব্যাংকের নিজস্ব ও সরকারের প্রণোদনাসহ ডলারের দর কোনোভাবেই ১১৬ টাকার বেশি দেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর  বৃহস্পতিবার এই দুই সংগঠনের ২১ প্রতিনিধির (২১ ব্যাংকের এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মূলত ডলারসংক্রান্ত নির্দেশনা ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় সংগঠন দুটি। এতে তাদের আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এবিবির চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক চাইলে ১১৬ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স কিনতে পারবে। কিন্তু ১১১ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না।

তারপরও যারা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমরা একত্রে বাজারটাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসব। আমদানিকারকরা নির্ধারিত দামের ডলার পাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি কোনো আমদানিকারকের এ রকম অভিযোগ থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে। তা ছাড়া সব বিষয়ে লাইন বাই লাইন লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া যায় না বলেও মনে করেন এই ব্যাংকার।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, সংগঠন দুটির মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য সাহায্য চাইতে এসেছিলেন তারা। আমরাও জানিয়েছি সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। নির্দেশনার বাইরে কোনো ব্যাংক অথবা এক্সচেঞ্জ হাউস ডলার কেনাবেচা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খোলাবাজারে ডলারের দামে রেকর্ড :

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ মানিচেঞ্জারের কাছে ডলার নেই। যাদের কাছে আছে তারাও সরাসরি ডলার বিক্রি করছে না। পরিচিত কারও মাধ্যমে ডলার বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের একাধিক বিক্রেতা আমাদের সময়কে জানান, ডলারের অনেক সংকট। এক দিনে রেট বেড়েছে আড়াই টাকা। এর আগের দিন ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছিল।

আজকে (গতকাল) কোনো গ্রাহক ডলার বিক্রি করতে এলে রেট দিয়েছি ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা। আর যারা কিনেছে তাদের কাছ থেকে নিয়েছি প্রতি ডলার ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৬.৫০ টাকা।

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত :

ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছর এরই মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়।

ডলারের দর নিয়ে আবারো কঠোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে ডলারের দর নিয়ে আবারো কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রণোদনাসহ রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা পর্যন্ত দিতে পারবে। কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ব্যাংকগুলো যে দরেই ডলার কিনুক না কেন, বিক্রি করতে হবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকায়। আর ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত রেমিট্যান্সের ১০ শতাংশ অবশ্যই আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে হবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ২১টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের গতকাল এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ডলারের বিনিময় হার নিয়ে এসব সিদ্ধান্তের কথা উঠে আসে।

রেমিট্যান্সের ডলারের দর ১২৪ টাকা পর্যন্ত উঠে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে ওই বৈঠক আহ্বান করা হয়। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকটি ডাকা হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

বৈঠকে অংশ নেয়া ব্যাংক এমডি ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, দেশে ডলার সংকট নিয়ে গত এক বছরে বাফেদা ও এবিবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সংগঠন দুটির নেয়া কোনো সিদ্ধান্তই বাজারে কার্যকর হয়নি। উল্টো কিছু সিদ্ধান্ত ‘‌চাপিয়ে দেয়ার ঘটনায়’ বাফেদা ও এবিবির শীর্ষ নেতাদের ওপর সদস্যদের ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যাংকের এমডি সংগঠন দুটির নেতাদের এড়িয়েও চলছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার জন্য বাফেদা ও এবিবির নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২১ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীকে নিয়ে বৈঠকে বসেন গভর্নর।

ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন ২০২২ সালের শুরু থেকে এবিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আর পদাধিকারবলে বাফেদা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম।

এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বৈঠক শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক চাইলে ১১৬ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনতে পারবে। কিন্তু ১১১ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। তার পরও যারা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা সবাই মিলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসব।’

আমদানিকারকরা কেন নির্ধারিত দামে ডলার পাচ্ছেন না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‌যদি কোনো আমদানিকারকের এমন কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে। তাছাড়া সব বিষয়ে লাইন বাই লাইন লিখিতভাবে নির্দেশনা দেয়া যায় না।’

এবিবি ও বাফেদার নেতারা সংগঠন দুটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়তা চাইতে এসেছিলেন বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, ‘আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের দর কত হবে, সেটি নিয়ে এবিবি ও বাফেদার পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। সেসব সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য চাইতে এসেছিলেন। আমরা জানিয়েছি, সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। নির্দেশনার বাইরে কোনো ব্যাংক অথবা এক্সচেঞ্জ হাউজ ডলার কেনাবেচা করলে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়টি আগের চেয়ে শক্তভাবে তদারকি করা হবে।’

মেজবাউল হক বলেন, ‘‌কোনো ব্যাংক চাইলে ঘোষিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে। কেউ যদি বেশি দামে ডলার কেনে, তাহলে সর্বোচ্চ ১১১ টাকায় বিক্রি করতে হবে। অন্যথায়, বাংলাদেশ ব্যাংক আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’

এর আগেও ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনায় দেশের বেশকিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের নেয়া সিদ্ধান্তের ওপর অটল থাকতে পারেনি। রেমিট্যান্সের অস্বাভাবিক পতনের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

বাফেদা ও এবিবির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেমিট্যান্স আনার জন্য ব্যাংকগুলোর ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দেয়ার কথা। যদিও গত মঙ্গলবার দেশের অনেক ব্যাংক ডলারপ্রতি ১২৪ টাকা ৩৫ পয়সা পর্যন্ত পরিশোধ করেছে। ঘোষিত দরের চেয়ে ১২-১৪ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে ডলার কেনার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্ঞাতসারেই ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডলার বাজারের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার ‘সংকট আরো তীব্র; ১২৪ টাকায়ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ব্যাংক’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করে বণিক বার্তা। প্রতিবেদনে বিদেশী বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে ১২৩-১২৪ টাকায় রেমিট্যান্স কেনার বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ডলারের দর নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আবারো কঠোর অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলো।

গতকালের বৈঠকে অংশ নেয়া দেশের একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বলেছেন, এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত আগেও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডলারের তীব্র চাহিদার কারণে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। বাফেদা ও এবিবির নেতারা বলছেন, ১১৬ টাকায় রেমিট্যান্সের ডলার কেনা যাবে। কিন্তু আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে হবে ১১১ টাকায়। এটি পুরোপুরি অবাস্তব সিদ্ধান্ত। কারণ কেউ জেনেবুঝে লোকসানে ডলার বেচবে কেন? লোকসান করার চেয়ে রেমিট্যান্স না কেনাই ভালো। এটি হলে রেমিট্যান্সের বড় অংশ আবারো হুন্ডিতে চলে যাবে।

দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া শুরু হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই সময় বাফেদা ও এবিবির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডলার লেনদেনে সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালানো হয়। বেশি দামে ডলার লেনদেনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দেশী-বিদেশী ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব তৎপরতার মুখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় রেমিট্যান্স ৫০ কোটি ডলার কমে যায়।

২০২২ সালের আগস্টে ২০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এলেও সেপ্টেম্বরে তা ১৫৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। এরপর থেকে এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখনই ডলারের বিনিময় হার নিয়ে কঠোর হয়েছে, তখনই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপর্যয় দেখা গেছে।

চলতি বছরের আগস্টেও বেশি দামে ডলার বেচাকেনা ঠেকাতে দেশের ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অভিযানের মধ্যেই রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপর্যয় নেমে আসে। সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ১৩৩ কোটি ডলার, যা ছিল ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে যেকোনো মূল্যে রেমিট্যান্স আনার জন্য উৎসাহিত করা হয়।

এতে গত মাসে (অক্টোবর) দেশের রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে। মূলত ঘোষিত দরের চেয়ে অনেক বেশি পরিশোধের কারণেই গত মাসে রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

72 ভিউ

Posted ১২:৪৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com