কক্সবাংলা ডটকম(১০ জানুয়ারী) :: ভয়াবহ পতনের ফলে শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে করুণ দশা। নিয়মিত বড় দরপতনের সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। মারাত্মক তারল্য সংকটে পড়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চারশ কোটি টাকার লেনদেনের দেখা পাচ্ছে না ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
ধারাবাহিক পতনের কারণে ইতোমধ্যে ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক শুরুর অবস্থান থেকেও নিচে নেমে গেছে। প্রধান মূল্য সূচক এবং ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক প্রায় শুরুর অবস্থানে চলে এসেছে।
শেয়ারবাজারের এমন করুণ দশায় বিনিয়োগকারীদের হাহাকার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষা করতে না পেরে অনেকেই মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন।
আগের চার কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এদিন ডিএসইতে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে কমেছে ১৭৩টির। ৫৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে চার হাজার ১৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ দিনের বড় পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ২৬১ পয়েন্ট। এতে প্রায় শুরুর কাছাকাছি চলে এসেছে সূচকটি।
ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স চার হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ হিসাবে শুরুর অবস্থান থেকে সূচকটি এখন মাত্র ১৪২ পয়েন্ট বেশি। অথচ ২০১৩ সালে সূচকটি যাত্রা শুরুর পর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) পুঁজিবাজারে ৮৪টি নতুন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। সূচক গণনার সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান যুক্ত না হলে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক শুরুর অবস্থান থেকে অনেক নিচে নেমে যেত।
এদিকে শেয়ারবাজারের করুণ দশার মধ্যে ২০১৩-১৯ সালের মধ্যে আইপিও অথবা রাইট শেয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি ৮৫৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ৬৪১ কোটি ৯৩ লাখ, ২০১৮ সালে ৬৫৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৭ সালে ১৪৪১ কোটি ৩৯ লাখ, ২০১৬ সালে ৯৫০ কোটি ১২ লাখ, ২০১৫ সালে ৬৭৫ কোটি ৭২ লাখ, ২০১৪ সালে ৩২৬৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং ২০১৩ সালে ৯১০ কোটি ৮০ লাখ তুলেছে বিভিন্ন কোম্পানি।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি যুক্ত হচ্ছে। আইপিও এবং রাইটের মাধ্যমে কোম্পানি টাকা তুলছে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছেন। আমরা তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ২০১৩ সালের থেকে অনেক খারাপ। কারণ ২০১৩ সালে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান ছিল এখন তার থেকে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সূচক ওই সময়ের কাছাকাছি অবস্থান করছে। অর্থাৎ নতুন নতুন কোম্পানি বাজারে না এলে দেখা যেত এতদিন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক চার হাজার পয়েন্টের অনেক নিচে নেমে গেছে।
প্রধান মূল্য সূচকের থেকেও করুণ দশা বিরাজ করছে ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসই-৩০। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালুর সময় এ সূচকটি ছিল এক হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে এ সূচকটি বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে এক হাজার ৪০৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
ডিএসইর আরেকটি সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ্’। ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সূচকটি সাত পয়েন্ট কমে ৯৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বৃহৎ বা বড় মূলধনের কোম্পানির জন্য চলতি বছরে ‘সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি)’ নামে নতুন সূচক চালু করেছে ডিএসই। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে এ সূচকটি ৮৪৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
সূচকের করুণ দশার মধ্যে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকটও। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর চারশ কোটির ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে আটকে রয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ৩০১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই অবস্থা। বাজারে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৬৮ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৪০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৭টির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির।
Posted ১:১৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta