কক্সবাংলা ডটকম :: চট্টগ্রাম বন্দরে এ মাসে গত ২০ দিনে ১০টি জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯৯ টন অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল। এছাড়া প্রায় ৪৩ হাজার টন সয়াবিন তেল নিয়ে আরও একটি জাহাজ রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের কুতুবদিয়ায় এসেছে। এটি থেকে তেল খালাসও শুরু হয়ে গেছে বলে শিপিং এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসেছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরে ভেড়া জাহাজগুলো থেকে স্বাভাবিকভাবেই ভোজ্য তেল খালাস চলছে। অস্বাভাবিক কোনো বিলম্ব নেই তেল খালাসে। প্রক্রিয়াগত কারণে কিছুটা সময় ব্যয় হচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একাধিক আমদানিকারক একসঙ্গে এক জাহাজে তেল নিয়ে আসেন। তারা সবসময় একসঙ্গে খালাস নেন না। কেউ হয়তো আগে নেন। কেউ দুয়েক দিন পর।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়লেও দেশে ভোজ্য তেলের সংকট নেই। বন্দর দিয়ে তেল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। পাইকারি বাজারেও তেলের সরবরাহ আছে পর্যাপ্ত। দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। যার সিংহভাগই আমদানি করতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, এ মাসে যে ১০টি জাহাজ এসেছে তার মধ্যে ৭টি জাহাজ ৮০ হাজার টন তেল খালাস করে চলে গেছে। এর মধ্যে এমটি এইউ লিও ৩ হাজার ৭০০ টন পাম, মেঘনা প্রাইড ১১ হাজার ৬০০ টন পাম, এমটি সুমাত্রা ১১ হাজার ৯৯৯ টন পাম, এমটি সানজিন ১২ হাজার টন পাম, এমটি নেপচুন ১২ হাজার টন পাম, এমটি উলাইয়া ১২ হাজার টন পাম, এমটি প্যাসিফিক রুবি ১৭ হাজার টন সয়াবিন নিয়ে এসেছে। বাকি তিনটি জাহাজে ৩৬ হাজার টন তেল রয়েছে, যা খালাসের পর্যায়ে।
এর মধ্যে আছে এমটি লুকাস ১২ হাজার টন সয়াবিন, এমটি ডোকোমো ১২ হাজার টন পাম ও এমভি প্লোবাল ভেনাস ১২ হাজার টন পাম তেল। মোট ১০ জাহাজে করে তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, শবনম ভেজিটেবল অয়েল, বে-ফিশিং করপোরেশন লিমিটেড, সুপার অয়েল রিফাইনারি, সিটি এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সয়াবিন তেল রান্নার কাজে ব্যবহৃত হলেও পাম অয়েলের বড় একটি অংশ সাবানসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। আবার দুবার রিফাইন করা সুপার পাম অয়েল ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি সয়াবিন তেলের মতোই স্বচ্ছ। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গ্রীষ্মকালে এই তেল সয়াবিনের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করেন। আবার শুধু পাম সুপারও বিক্রি হয়। তবে পাম ও পাম সুপার শীতকালে ঠান্ডায় জমে যায় বিধায় ওই সময়টাতে চাহিদা তেমন থাকে না। গরম পড়লে চাহিদা বাড়ে, কারণ জমে না।
বন্দর সূত্র জানায়, ভোজ্য তেলের জাহাজ বড় হলে বহির্নোঙরে ছোট আকারের বার্জের মাধ্যমে খালাসের পর রিফাইনারিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার ছোট জাহাজ ডলফিন জেটিতে সরাসরি ভিড়ে তেল খালাস করে। পরিশোধনের পর এগুলো বাজারজাত হয়। বন্দরে ভেড়ার পর কোনো কোনো জাহাজ তিন চারদিনে তেল খালাস করে চলে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো জাহাজের ১০-১২ দিনও লাগছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ভোজ্য তেল খালাসে কোনো জাহাজের অস্বাভাবিক বিলম্বের কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত আমাদের নজরে আসেনি। স্বাভাবিক সময়ের মতো এখনও তেল খালাস চলছে। সাধারণ একটি জাহাজে একাধিক আমদানিকারকের তেল থাকে। সেই তেল খালাসের জন্য তাদেরকে বার্জ জোগাড় করতে হয়। অনেক সময় বার্জ পেতে দেরি হলে খালাসে কিছুটা দেরি হতে পারে।
চট্টগ্রামে ভোজ্য তেলের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সয়াবিন তেলের সংকট নেই। তবে শীতকালে চাহিদা কম থাকায় পাম তেল কম আমদানি হয়েছে। এখন চাহিদা বাড়ছে। তাই পাম তেল বেশি আমদানি হচ্ছে। এই মুহূর্তে শিল্প উপকরণ ও ভোজ্য তেল হিসাবে পাম তেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বলেন, উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর পর সয়াবিনের দাম কিছুটা পড়তে শুরু করেছে। সয়াবিনের সরবরাহও আছে পর্যাপ্ত। সেই তুলনায় পাম অয়েল কিছুটা কম। রোববার একাধিক আমদানিকারকের ৪২ হাজার ৫৮০ টন সয়াবিন তেল নিয়ে বন্দর সীমানায় ভিড়েছে স্টেভেঞ্জার পাইওনিয়ার নামের একটি জাহাজ। এতে সিটি গ্রুপের ১৫ হাজার টন, বসুন্ধরার ৯ হাজার টন, সেনা কল্যাণ সংস্থার ৭ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপের ১১ হাজার ৫০০ টন তেল রয়েছে। কুতুবদিয়া এলাকায় কিছু তেল খালাসের পর এটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে ২৩ মার্চ থেকে বাকি তেল খালাস শুরু করবে।
Posted ৩:৪৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ মার্চ ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta