কক্সবাংলা ডটকম(১২ ফেব্রুয়ারি) :: কোনো দেশের ব্যাংক খাতের সক্ষমতা কেমন জেড-স্কোরে প্রাপ্ত নম্বর দেখেই তা বোঝা যায়। বিশ্বের সব দেশের ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে প্রতি বছরই জেড-স্কোর প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। মৌলিক এ সূচকে বেশি নম্বরপ্রাপ্ত দেশের ব্যাংকগুলোর ওপর ভরসা রাখে বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো, এড়িয়ে চলে কম নম্বর পাওয়া দেশের ব্যাংককে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থাও এখন এড়িয়ে চলার মতো। কারণ জেড-স্কোরের এ সূচকের একেবারেই তলানিতে দেশের ব্যাংক খাত। যদিও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে প্রতিবেশী দেশগুলো।
জেড-স্কোরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রাপ্ত নম্বর ৭ দশমিক ১। অথচ নেপাল ও ভুটানের মতো ছোট দেশগুলোর ব্যাংক খাতের নম্বর ২৭-এর বেশি। মৌলিক এ সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, এমনকি পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডাও। উগান্ডার ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর ১৩ দশমিক ৯। দেশটিতে খেলাপি ঋণের হারও ৫ শতাংশের নিচে। যদিও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো যেকোনো দেশের ঋণপত্র খোলার আগে সে দেশের ‘কান্ট্রি রিস্ক’ ও ‘ক্রেডিট রিস্ক’ আমলে নেয়। একই সঙ্গে আমলে নেয়া হয় ব্যাংক খাতের জেড-স্কোরকেও। কান্ট্রি রেটিং শক্তিশালী থাকলে জেড-স্কোরকে অনেক ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব দেয়া হয়। যদিও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জেড-স্কোরের মতোই কান্ট্রি রেটিংও দুর্বল। এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে বিদেশী ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক খাতের এ দুরবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেক দুর্বল অর্থনীতির দেশের তুলনায়ও খারাপ বাংলাদেশের অবস্থা। ঋণপত্রের গ্যারান্টি বাবদ প্রায় ৪ শতাংশ কমিশন নিচ্ছে বিদেশী ব্যাংকগুলো। যদিও বাংলাদেশের সমঅর্থনীতির অনেক দেশের ক্ষেত্রে এ কমিশন ১ শতাংশেরও কম। এলসি কমিশন বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পিছিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসায়িক সক্ষমতাও।
প্রতিটি দেশের ব্যাংক খাতের সক্ষমতার ভিত্তিতে জেড-স্কোর তৈরি করে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের ব্যাংক খাত শক্তিশালী, সেসব দেশ এ তালিকায় বেশি নম্বর পায়। জেড-স্কোর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য হলো, কোনো দেশের ব্যাংক খাতের অক্ষমতা প্রকাশ পায় তার জেড-স্কোরের মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় একটি দেশের ব্যাংক খাতের বাফার (মূলধন ও রিটার্ন) এবং রিটার্নের অনিশ্চয়তাকে তুলনা করা হয়। এটি পরিমাপের সূত্র হলো (আরওএ+(মূলধন/ সম্পদ))/ এসডি(আরওএ)। এখানে আরওএ বা রিটার্ন অন অ্যাসেট বলতে বোঝায় কোনো আর্থিক বছরে কোম্পানির মোট মুনাফার সঙ্গে মোট সম্পদের অনুপাত, যা শতাংশে প্রকাশ করা হয়।
এসডি (আরওএ) বলতে বোঝায় আরওএর গড় থেকে বিচ্যুতিকে। কোনো দেশের ব্যাংকের জেড-স্কোর পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যাংকভিত্তিক আলাদা তথ্য যোগ করার মাধ্যমে আরওএ, মূলধন ও সম্পদের হিসাব করা হয়। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বৈশ্বিক ব্যাংক খাতের ব্যাংকস্কোপ তথ্যভাণ্ডার থেকে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে বিশ্বে খুব কম ব্যাংকই আছে, যার মূলধন ১০ কোটি ডলারের নিচে। অথচ বাংলাদেশে রয়েছে অনেকগুলো ছোট ব্যাংক, যেগুলো দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় বোঝা। ব্যাংকের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতাও বাংলাদেশে খাতটিকে দুর্বল করছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে বিপদগ্রস্ত ঋণ (স্ট্রেসড লোন)। দেশের ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত চিত্রই বিশ্বব্যাংকের জেড-স্কোরে প্রতিফলিত হয়েছে।
বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিটিব্যাংক এনএ। ব্যাংকটির বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা এ ব্যাংকারের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো ওভার এক্সপোজার। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন সক্ষমতা খুবই কম। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ তিনজন গ্রাহক খেলাপি হলে ২১টি ব্যাংকের মূলধন শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টেই এ পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। দেশের প্রায় সব ব্যাংকই এলসি দায় পরিশোধে অনাকাঙ্ক্ষিত দেরি করছে। এটি বড় ধরনের অপরাধ না হলেও পদ্ধতিগত ত্রুটি। এসব পর্যালোচনা করেই বিশ্বব্যাংক জেড-স্কোর তৈরি করে। স্বাভাবিকভাবেই এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল।
তিনি বলেন, নেপাল-ভুটানের মতো দেশের অর্থনীতি ছোট হতে পারে। কিন্তু সে দেশের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের চেয়ে বেশি। এজন্য দেশ দুটির ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর অনেক ভালো।
মূলত দুটি কারণে বিশ্বের দেশে দেশে ব্যাংক খাত বিপদগ্রস্ত হয়। এর একটি খেলাপি ঋণের অনিয়ন্ত্রিত হার, অন্যটি স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যয়ন। মুদ্রার বড় অবমূল্যায়নের ফলে কয়েক বছর আগে বিপর্যয় দেখা গিয়েছিল গ্রিসের ব্যাংকগুলোয়। সাম্প্রতিক সময়ে একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে আর্জেন্টিনায়। জিডিপিতে বৈদেশিক ঋণের অংশগ্রহণ বেশি হলে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয় সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যাংক খাত। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিপর্যয়ের মূল কারণ খেলাপি ঋণের লাগামহীনতা।
দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়লেও সক্ষমতায় ঘাটতি নেই বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে মুনাফায়। ব্যাংকগুলোর আরওই ও আরওএ সূচক একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তারল্যে বড় ধরনের কোনো সংকট দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ব্যাংক যথাসময়ে এলসি দায় পরিশোধ করছে। গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো ব্যাংকের অক্ষমতা চোখে পড়ছে না।
খেলাপি ঋণের লাগামহীনতার কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে রাশিয়ার ব্যাংক খাতও। তবে রুশ মুদ্রা রুবলের বড় ধরনের অবমূল্যায়নও এ খাতের বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করেছে। দেউলিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে এমডিএম ব্যাংককে একীভূত করা হয়েছিল রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বিঅ্যান্ডএন ব্যাংকের সঙ্গে। যদিও একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি সুখকর হয়নি ব্যাংকটির ক্ষেত্রে। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে ব্যাংকটিকে জাতীয়করণ করে নিয়েছে রাশিয়া সরকার। বিঅ্যান্ডএন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া চলছে বেসরকারি খাতের শীর্ষ ব্যাংক ওতক্রিতিরও। এমডিএম ব্যাংকের মতোই খেলাপি ঋণের ভারে দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে ওতক্রিতি এফসি ব্যাংক।
রাশিয়ার এ দুটি বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিপর্যয় দুর্যোগে ফেলেছে রাশিয়ার অর্থনীতিকে। ২০১৩ সালে দেশটির ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০১৯ সাল শেষে তা প্রায় ১৮ শতাংশ ছুঁয়েছে। রেকর্ড মূল্যহ্রাস হয়েছে রুশ মুদ্রা রুবলেরও। ফলে দেশটির ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে।
অর্থনীতির খারাপ দিন যাচ্ছে আর্জেন্টিনারও। দুই-তৃতীয়াংশ অবমূল্যায়নের শিকার হয়েছে দেশটির মুদ্রা ‘পেসো’। মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ৩০ শতাংশে। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের হার ৪ থেকে বেড়ে ৬০ শতাংশ ছুঁয়েছে। আর্জেন্টিনাকে বাঁচাতে রেকর্ড ৫৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ)। এ সহায়তা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসেও সর্বোচ্চ। লাতিন আমেরিকার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির বিপর্যয়ের সূত্রপাতও ব্যাংক খাত থেকে। এক বছরের ব্যবধানে আর্জেন্টিনার ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ২ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে জেড-স্কোরে। দেশটির ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর ৬ দশমিক ৯।
অর্থনীতির বেহাল দশা ভারতের। বড় বড় কেলেঙ্কারি দুর্বল করে দিচ্ছে দেশটির ব্যাংক খাতের সক্ষমতা। প্রায় একই পরিস্থিতি তুরস্ক, গ্রিস, ইতালি, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশের। তবে দুর্বল ব্যাংক খাতের তালিকার শীর্ষে আছে বাংলাদেশের নাম। খেলাপি ঋণের ক্রমবর্ধমান হার ও ব্যাংকিং সক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট-২০১৯-২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের পরীক্ষায় বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাত। দেশটির প্রাপ্ত স্কোর ২৯ দশমিক ৮। ইউরোপের বৃহৎ দেশগুলোর মধ্যে শক্তিশালী ব্যাংক খাত জার্মানির। জেড-স্কোর সূচকে দেশটির ব্যাংক খাত পেয়েছে ২৪ দশমিক ৮ নম্বর। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফান্স ২২ দশমিক ৫, চীন ২২ দশমিক ৪, সুইজারল্যান্ড ১৫ দশমিক ৬, যুক্তরাজ্যে ১১ দশমিক ৮, জাপান ১৫ দশমিক ৯, অস্ট্রেলিয়া ১৪ দশমিক ৮ ও কানাডা ১৩ দশমিক ৪ স্কোর পেয়েছে।
ব্যাংক খাতের অবস্থান শক্তিশালী এশিয়ার বিস্ময় সিঙ্গাপুর ও কাতারেরও। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের ব্যাংক খাতের স্কোর ২২ দশমিক ২। ২১ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে কাতার। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়ার ব্যাংক খাতের স্কোর ১৮ দশমিক ৩। তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে ফিলিপাইন, ভারত, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকার নামও। অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি এসব দেশের ব্যাংক খাতও শক্তিশালী হয়েছে।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ছোট অর্থনীতির দেশ নেপাল ও ভুটানের ব্যাংক খাতও শক্তিশালী। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এ দুটি দেশের ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৮ ও ২৭ দশমিক ৭। ১৩ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে ভালো অবস্থানের জানান দিচ্ছে মালদ্বীপও। এক্ষেত্রে শ্রীলংকার স্কোর ১২ দশমিক ৮। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ব্যাংক খাতের জেড-স্কোরও বাংলাদেশের তুলনায় ভালো। দেশ দুটির জেড-স্কোর যথাক্রমে ১১ দশমিক ৭ ও ১০ দশমিক ৫। এ তালিকার তলানিতে থাকা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্কোর মাত্র ৭ দশমিক ১।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত যে খুব খারাপ, এটি বলার জন্য কোনো গবেষণার দরকার নেই বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা নিজের চোখেই দেখছি, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। দিন দিন এ বিপর্যয় আরো গভীর হচ্ছে। এজন্য বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বা স্কোরিংয়ের দরকার আছে বলে মনে হয় না।
তিনি আরো বলেন, ব্যাংক খাতের বিদ্যমান সংকটের চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে নিয়ন্ত্রকরা বিপর্যয়ের গভীরতাকে অস্বীকার করছেন। সংক্রামক ব্যাধিকে পোষা হচ্ছে। করপোরেট গভর্ন্যান্সের ঘাটতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ব্যাংক খাতকে পরিবারতন্ত্রের কাছে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে জেড-স্কোর কম থাকলেও খেলাপি ঋণের দিক থেকে বেশ ভালো অবস্থানে আছে আর্জেন্টিনা ও ইন্দোনেশিয়া। ২০১৯ সাল শেষে ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেশটির জেড-স্কোর মাত্র ৬। আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও ২০১৯ সাল শেষে আর্জেন্টিনার ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ। দেশটির ব্যাংক খাতের জেড-স্কোরও বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা কম, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর শেষে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। যদিও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই খেলাপি। জেড-স্কোরের দিক থেকে বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থানে আছে কেবল থাইল্যান্ড। দেশটির ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর ৭ দশমিক ৫। যদিও থাইল্যান্ডের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশে সীমাবদ্ধ।
গত কয়েক বছরে আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম চালিয়েছে ফিলিপাইন। তার প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি করা অর্থের গন্তব্য ফিলিপাইন হলেও বিশ্বব্যাংকের গবেষণা দেশটির ব্যাংক খাতের জেড-স্কোর ১৮। ফিলিপাইনের খেলাপি ঋণের হারও ২ শতাংশে সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন সক্ষমতা খুবই দুর্বল বলে জানান এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ। দীর্ঘদিন বিদেশী ব্যাংকে চাকরি করা এ ব্যাংকারের ভাষ্য, বর্তমানে বিশ্বের কোনো ব্যাংকের মূলধনই ১০ কোটি ডলারের কম নয়। দেশে ৪০টির বেশি বেসরকারি ব্যাংক। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকের মূলধনই অপর্যাপ্ত। এত কম মূলধন দিয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা হয় না। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অডিট করার সময় দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ, পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণ, অবলোপনকৃত ঋণ, ঠিকমতো পরিশোধ হয় না এমন ঋণগুলোকে বাদ দিয়ে মূলধনের হিসাব করে। তখন দেখা যায়, বেশির ভাগ ব্যাংকের মূলধনই থাকে না। জেড-স্কোরের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়গুলোকেই আমলে নেয়।
Posted ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta