কক্সবাংলা ডটকম(৮ আগস্ট ) :: ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ সাহিত্য জগতকে অন্ধকার করে দিয়ে কবিগুরু আমাদের ছেড়ে চলে যান। কবি চার বছর আগে থেকেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন । তিনি অসুস্থ থাকলেও তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি থেমে থাকেনি।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কিডনির সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠেছিল। কালিম্পং থেকে ফিরে এসেছিলেন অসুস্থ কবি শান্তিনিকেতনে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে আবার কালিম্পং এ যান প্রকৃতির সৌন্দর্যের টানে। সেখানে ছিলেন পুত্রবধূ প্রতিভা দেবী। কবির সৌন্দর্য পিপাসু মন হার মানিয়ে দিয়েছিল অসুস্থতাকে।
কিন্তু ২৬শে সেপ্টেম্বর পুনরায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দার্জিলিং থেকে আসেন সিভিল সার্জন । তিনি জানান অবিলম্বে অস্ত্রোপচার না করলে কবির প্রাণ সংশয় রয়েছে। কবি নিজেও অস্ত্রোপচার চাননি।
প্রতিভা দেবী ও মৈত্র দেবীও অস্ত্রোপচারের পক্ষে ছিলেন না। কবি কলকাতা থেকে কালিম্পং গেছিলেন সুস্থ অবস্থায় আর ফিরলেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে।
কবিগুরুর চিকিত্সা করতেন বিখ্যাত ডাক্তার নীলরতন সরকার। তিনি কবির গুরুতর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পারেননি। এর আগেও অস্ত্রোপচারের প্রসঙ্গ উঠলে নীলরতন সরকার তাতে সম্মতি দেননি।
পত্নীবিয়োগের কারণে তিনি গিরিডিতে একাকী বাস করছিলেন। তাই কবির অসুস্থতার খবর তিনি পাননি । আবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের তরফ থেকেও কবির অসুস্থতার খবর অনেক দেরি করে পাঠানো হয় তাঁর কাছে।
অসুস্থ কবিগুরু ফিরতে চাইলেন শেষবারের মতো শান্তিনিকেতনে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর জীবনের অন্তিম লগ্ন উপস্থিত। কিন্তু ততক্ষণে কবির শরীর ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। তাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে অস্ত্রোপচারের ।
তত্কালীন সময়ের বিখ্যাত ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় অবিলম্বে অস্ত্রোপচার করার নির্দেশ দেন।
জোড়াসাঁকোর মহর্ষি মহলের দোতালার পূর্বদিকে ঘরে কবির জন্য বানানো হয় অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার। কারণ কবিকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু অস্ত্রোপচার করেও কাল সংকট কাটলো না। কবির অবস্থা আরো গুরুতর হয়ে পড়ে।
জীবনের প্রান্ত পর্যায়ে উপস্থিত। আচ্ছন্নতা ভাব আরও বেড়ে গিয়েছে। হারিয়ে ফেলেছেন কথা। কবি ছিলেন অত্যন্ত খাদ্য রসিক, কিন্তু এই সময় অরুচির জন্য প্রায় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
কবির অসুস্থতার খবর পেলেন নীলরতন সরকার। নীলরতন সরকার শুধুমাত্র কবির চিকিত্সক ছিলেন না, ছিলেন একজন সুহৃদ বন্ধুও ।
নীলরতন সরকার যখন কবির ঘরে প্রবেশ করলেন ,তখন কবি প্রায় জ্ঞান হারিয়েছেন। ছল ছল চোখে ফিরে আসলেন নীলরতন সরকার। প্রতিমুহূর্তে আকাশবাণীতে আপডেট দেয়া হচ্ছে কবির শারীরিক অবস্থা নিয়ে।
জহরলাল নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধী সমানে খবর নিয়ে চলেছেন কবির। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ২২শে শ্রাবণ সাহিত্যজগত্ অন্ধকার করে দিয়ে চলে গেলেন কবিগুরু ।
জীবনের শেষ পর্যায়ে শয্যাশায়ী হয়েও তিনি আমাদের উপহার দিয়ে গেছে রোগশয্যা ,আরোগ্য জন্মদিনের মত কবিতা । কবিগুরুর এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাঁকে নিয়ে বলা শুরু হলে শেষ হবে না ।
তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁর অসাধারণ প্রতিভার গুণে সারা বিশ্ববাসীর কাছে আজ তিনি স্মরণীয় ।
Posted ১২:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ আগস্ট ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta