বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

খরার কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ

শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১
492 ভিউ
খরার কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ এপ্রিল) :: দেশে গ্রীষ্মের শুরু থেকেই বৃষ্টির দেখা মিলছে কালেভদ্রে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এপ্রিলে এসে ঠেকেছে সাত বছরে সর্বোচ্চে। গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ, পশু-পাখি। তাপদাহে পুড়ছে ক্ষেতের ফসল। পূর্বাভাস বলছে, প্রকৃতির এ উষ্ণ ভাব অব্যাহত থাকতে পারে মৌসুমজুড়ে। বৃষ্টিপাত হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। খরার কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান সিজনাল ক্লাইমেট আউটলুক ফোরাম (এসএএসসিওএফ) ও ক্লাইমেট সার্ভিস ইউজার্স ফোরাম এ পূর্বাভাস দিয়েছে। ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, ভুটান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে পূর্বাভাসটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই সময়ে পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। পূর্বাভাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম, আর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় পুরো অংশই পড়েছে।

এ বিষয়ে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা অন্যান্য বছরের একই সময় অপেক্ষা কিছুটা কম রয়েছে। একই সঙ্গে এ বছর কালবৈশাখীর মৌসুমের শুরুতে (মার্চ ও এপ্রিল) অন্যান্য বছর অপেক্ষা অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে মাটিতে আর্দ্রতার পরিমাণ অন্যান্য বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কম রয়েছে।

অধিকন্তু আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সর্বোপরি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা প্রায় ৩০ বছরের গড় মানের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা এল নিনো ও লা নিনার নিরপেক্ষ অবস্থা নির্দেশ করছে। এসব প্রভাবকের সমন্বিত প্রভাবে এ বছর বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টিপাত কম হলে তার বিরূপ প্রভাব সবার আগে পড়বে বাংলাদেশের কৃষিতে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও ফসলহানির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। এরই মধ্যে হিটশকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে এখনই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মাঝারি তাপপ্রবাহ হিসেবে অভিহিত করেন আবহাওয়াবিদরা। বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে গত ২৩ মার্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। সে সময় প্রায় সপ্তাহজুড়ে দেশের ১২টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় মাঝারি তাপপ্রবাহ।

চলতি এপ্রিলের প্রথম দিকে দেশের আরো বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তাপদাহ। দেশের প্রায় ৩৬ জেলার এ হিটশক সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের বৃষ্টিহীন উচ্চ তাপপ্রবাহ এ হিটশকের কারণ। এ হিটশকে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা এবং গোপালগঞ্জ, নড়াইল, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ দেশের বেশকিছু অঞ্চলে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিটশকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আসন্ন বর্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার কোথায় কেমন বৃষ্টিপাত হতে পারে তা একটি মানচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে এসএএসসিওএফ। এটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের একাংশ ও উত্তরবঙ্গের দিকে বৃষ্টিপাত হতে পারে সবচেয়ে কম। দেশের অন্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে এসব এলাকার চেয়ে কিছুটা বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাতের মাত্রা থাকতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে কম।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এম শাহজাহান মন্ডল বলেন, বৃষ্টিপাতের বিষয়ে পূর্বাভাস বা কোনো ধরনের মন্তব্য করাটা একটু কঠিন। এবারের প্রাক-বর্ষাকালে বৃষ্টি কম হয়েছে। এমন হতে পারে বর্ষাকালে ভারি বৃষ্টিপাত হলো, সেই সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রকৃতি সাধারণত ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। কোনো কোনো বছর বৃষ্টি বেশি হয়, কোনো কোনো বছর কম হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া প্রতিনিয়তই বিরূপ আচরণ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবারের গরম অন্যবারের তুলনায় বেশ বেশি। এ সময় তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল। শহরে গাছপালা কমে গেছে, গ্রামেও গাছপালা কমছে। শহরের আয়তন বাড়ছে। পরিবেশে সেসবের প্রভাবে এক ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পূর্বাভাসটি বিবেচনায় নিলে বৃষ্টি কম হলে তাপমাত্রা আরো বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। বৃষ্টি বেশি হলেও যেমন খারাপ আবার কম হলেও খারাপ। বৃষ্টি বেশি হলে বন্যা দেখা দেবে আর কম হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবে। ফলে তার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক ক্ষেত্রে। বৃষ্টি কম হলে দূষণ বেড়ে যায়। সাধারণ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বন্যার পানিতে দূষণের মাত্রা একটু কমে যায়। আর কৃষি খাতের কথা বলতে গেলে বৃষ্টি না হলে আমন ধানের একটু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমন ধানের শেষের দিকে গিয়ে সেচের দরকার হয়। এটিকে বলে সম্পূরক সেচ। তখন বৃষ্টি হলে সেচের খরচটা বেঁচে যায়। বৃষ্টি না হলে পরের মৌসুমে অন্য শস্য আবাদেও অসুবিধার মুখে পড়বেন কৃষক। নগরায়ণের ফলে এমনিতে শহরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। আবার যদি বৃষ্টিপাত কম হয় তাহলে সেই স্তর আরো নেমে যাবে। ফলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে পানির স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশসহ কিছু অঞ্চলে কম পূর্বাভাস ও তাপমাত্রা বেশি থাকার পূর্বাভাস দেয়া হলেও দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের বেশি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে এসএএসসিওএফ। হিমালয়ের পাদদেশ, নেপাল, পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এসব এলাকার তাপমাত্রাও থাকতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম। কোনো কোনো অঞ্চলে বৃষ্টিপাত আর তাপমাত্রার বিষয়গুলো ভারত মহাসাগরের আরচণের ওপর নির্ভর করার কথাও জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ মনে করেন, আগামী বর্ষায় কী ধরনের বৃষ্টিপাত হবে সেটির ওপর ধারণা করতেই এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সব সময়ই যে এ পূর্বাভাস মিলবে এমন নয়। অনেক সময় পূর্বাভাস পরিবর্তন হয়। এল লিনো, লা নিনার প্রভাব, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা—মূলত এসব পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়েই পূর্বাভাস দেয়া হয়। বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বেড়েছে তার একটি প্রভাব তো থাকবেই। এবার গত ডিসেম্বর থেকেই বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তবে আমাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাস থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে হয়তো টানা বৃষ্টিপাত হবে না।

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা দুই দশক ধরে অব্যাহতভাবে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য জনঘনত্ব আর নগরায়ণকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এজন্য পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (সিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, শিল্পায়নের ফলে গত ১০-১৫ বছরে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা বেড়েছে। যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় তাহলে তাপমাত্রা আরো বাড়বে। আর তাপমাত্রা বাড়লে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হারও বেড়ে যায়। ফলে কৃষিসহ অন্যান্য উৎপাদনে তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে। আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, গাছ লাগাতে হবে। নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যই পৃথিবীর তাপমাত্রা যাতে বেড়ে না যায় তার উদ্যোগ নিতে হবে।

492 ভিউ

Posted ৪:১৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com