কক্সবাংলা ডটকম(২৭ অক্টোবর) :: জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) দ্বারা সমন্বিত একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বছর বাংলাদেশের আনুমানিক ১১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে, মার্কিন ডলারের বর্তমান বিনিময় হারে যা ৯ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
আজ মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ‘স্টেট অন দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া ২০২০’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এশিয়াজুড়ে চরম আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ, এবং খরচ হয়েছে কয়েক বিলিয়ন ডলার। সেইসঙ্গে বিপুল ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামো ও বাস্তুতন্ত্রের।
এশিয়ায় প্রতি বছরই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরা আঘাত হানে। এর ফলে প্রতি বছর গড়ে কয়েকশো বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন-এর (এসকাপ) হিসাবের বরাত দিয়ে একথা বলা হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।
২০২০ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে রয়েছে।
এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে চীন। বছরে দেশটি আনুমানিক ২৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ক্ষতি নিয়ে চীনের পরেই আছে প্রতিবেশী ভারত। এরপর জাপানের ক্ষতি ৮ হাজার ৩০০ কোটি ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষতি দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
এশিয়ায় ২ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। এরপর যথাক্রমে আছে পাকিস্তান (১৫.৮ বিলিয়ন ডলার), থাইল্যান্ড (১২.৫ বিলিয়ন ডলার), ইরান (১২.৩ বিলিয়ন ডলার), বাংলাদেশ (১১.৩ বিলিয়ন ডলার) এবং ভিয়েতনাম (১০.৮ বিলিয়ন ডলার)।
তবে চীন, ভারতের মতো ক্ষতিতে শীর্ষ দেশগুলোর অর্থনীতি ও আয়তন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়, তাই ক্ষতির অংকেও এগিয়ে তারা। কিন্তু, তুলনামূলক ছোট অর্থনীতি ও আকার নিয়েও প্রচণ্ড ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ।
গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে বাংলাদেশে ১৩ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।
১৯ জেলার মোট এক কোটি মানুষ আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, তিন লাখ ৩০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এক লাখ ৭৬ হাজার হেক্টরের বেশি কৃষি জমি (ফসল ও মাছ/চিংড়ির খামার) নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ১৪ হাজার গবাদিপশু প্রাণ হারায়।
অন্যদিকে, ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) এই মাসের শুরুতে বলেছিল যে পরিবেশগত হুমকির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। সংস্থাটির পরিবেশগত হুমকি প্রতিবেদন ২০২১-এ ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৩তম স্থানে রয়েছে।
এদিকে, ডব্লিউএমও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এশিয়ার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ম্যানগ্রোভ বাংলাদেশ (২৩%), মায়ানমার (১৯%), ভারত (১৭%) এবং থাইল্যান্ডে (১৪%) আছে। এর মধ্যে ১৯৯২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ম্যানগ্রোভ বন কমেছে ১৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, এশিয়ায় ২০২০ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। এ বছর গড় তাপমাত্রা ১৯৮১-২০১০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ১ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
জলবায়ু মোকাবিলায় টেকসই বিনিয়োগ পরিকল্পনার পরামর্শ আইএমএফের
এক ইমেইল সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে আইএমএফের মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, যেহেতু জলবায়ু অর্থায়নের চাহিদা বড়, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক তহবিলের সংমিশ্রণ (দাতাদের সহায়তায় বড় অংশে অর্থায়ন) প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক সকল দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, কিন্তু মনে হচ্ছে বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আর্থিক সীমিত সক্ষমতা, ব্যাপক আকারের এবং ব্যয়বহুল জলবায়ু টেকসই বিনিয়োগকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। তাই দাতার অর্থ আকর্ষণের জন্য যৌক্তিক ব্যয় এবং আর্থিকভাবে টেকসই বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রয়োজন।
তিনি উল্লেখ করেন, জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু ঝুঁকির প্রভাব প্রশমনের লক্ষ্যে কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমস্ত রপ্তানি খাতে আরও দক্ষ, পরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য স্বল্প সুদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) চালু করা।
রাহুল আনন্দ আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে ব্যাংকগুলো এবং ২০১৩ সালে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। এই নির্দেশিকায় প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রিন ব্যাংকিং নীতি, পরিচালন ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল (সিআরএফ) গঠনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বাংলাদেশের কর রাজস্ব থেকে জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশেরও কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, যা টেকসই অবকাঠামোতে ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিকাঠামোগত লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সরকারের ক্ষমতাকে সীমিত করে।
অতএব, কর উৎসের সম্প্রসারণ এবং কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতি সাধনই এক্ষেত্রে একমাত্র অগ্রাধিকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আরও ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ মূল্যায়ন উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঋণ প্রদান এবং তত্ত্বাবধান জলবায়ু অর্থায়নের আর্থিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। সংস্কারের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং বিধি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিকে শক্তিশালী করা, কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের উন্নতি এবং আইনি ব্যবস্থার সংস্কার।
রাহুল আনন্দ বলেন, কর্তৃপক্ষ আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করার জন্য বেশ কয়েকটি বিধান ও আইন সংশোধন করছে এবং এগুলোকে সেরা আন্তর্জাতিক অনুশীলনের সঙ্গে সমন্বিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
Posted ১২:০০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta