রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশিদের জন্য পারিবারিক মার্কিন ইমিগ্রেশন বন্ধ হচ্ছে !

রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭
469 ভিউ
বাংলাদেশিদের জন্য পারিবারিক মার্কিন ইমিগ্রেশন বন্ধ হচ্ছে !

কক্সবাংলা ডটকম(১৭ ডিসেম্বর) ::  ১১ ডিসেম্বর নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে পাইপবোমা বিস্ফোরণের জন্য দায়ী আকায়েদ উল্লাহ এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী স্বদেশিদের কাছেও এক ঘৃণিত নাম। নিউ জার্সিতে বসবাসরত প্রবাসী আলেয়া বেগম ভাবতেই পারছেন না, আকায়েদ উল্লাহ কেন এ কাজ করতে গেলেন। নিজে মরতে চেয়েছিলেন, পারেননি, তবে মেরে গেছেন অভিবাসীদের। আমেরিকায় আসার স্বপ্নের ওপর আঘাত করতে পেরেছে আলেয়া বেগমের মতো অগুনতি লোকজনের।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও যেন অপেক্ষা করছিলেন এমন কোনো ঘটনার। একদিকে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু নারী প্রকাশ্যে নেমে পড়েন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নারীদের পীড়ন করেছেন—এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন প্রভাবশালী বেশ কিছু কংগ্রেসম্যান।

তাঁরা সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ম্যানহাটনে আকায়েদ উল্লাহর ঘটনা ঘটেছে গুরুত্বপূর্ণ আলাবামা সিনেট নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে। এই সিনেট নির্বাচনকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গণভোট বলে প্রচার চলছিল।

মোক্ষম এই সময়েই আকায়েদ উল্লাহর ঘটনা লুফে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার চলমান অভিবাসন বিতর্ককে উসকে দিয়েছেন। অভিবাসনের সবচেয়ে বড় অংশে আঘাত করে পারিবারিক অভিবাসনকে বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর আগে উজবেকিস্তান থেকে আসা

এক অভিবাসী ম্যানহাটনে একই ঘটনা ঘটিয়েছেন গাড়ি হামলা করে। দুটি ঘটনা এক করে সহজেই দেখানো সম্ভব হচ্ছে, পারিবারিক চেইন অভিবাসন না থাকলে নিকটবর্তী দুটি হামলার জন্য দায়ী কারোরই আমেরিকায় প্রবেশের কোনো সুযোগ ছিল না। নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত আমেরিকানদের কাছে কথাটি খুব সহজেই বিক্রি হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন এই সুযোগে চেইন অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়ার সরাসরি ঘোষণা দিচ্ছেন। কংগ্রেসকে আইন পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে কংগ্রেস দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে পারিবারিক বা চেইন ইমিগ্রেশনের পরিবর্তন যে দ্রুততার সঙ্গে করা হবে, তা নিয়ে অভিবাসী মহলের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।

আলেয়া বেগমের মতো অধিকাংশ অভিবাসী আমেরিকায় এসেছেন পারিবারিক অভিবাসনে। বাংলাদেশ থেকে গত ১২ বছরে প্রায় দেড় লাখ লোকের অভিবাসন ঘটেছে এই চেইন অভিবাসনের আওতায়।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালে আমেরিকায় ১৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি এসেছেন এই চেইন ইমিগ্রেশনের ফলে। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শুধু এই ভিসায় আমেরিকায় আসা অভিবাসীর সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি। প্রতি দুজন অভিবাসী চেইন ইমিগ্রেশনের সুযোগে সাতজন করে লোকের অভিবাসন করিয়ে থাকেন আমেরিকায়।

এসব অভিবাসনের জন্য অভিবাসীর অন্য কোনো যোগ্যতা নয়, যোগ্যতা কেবল মার্কিন অভিবাসীর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক। এসব অভিবাসীর অধিকাংশই অদক্ষ, কোনো অপরিহার্য শ্রমিক হিসেবেও তাঁদের দেখা হয় না। অনেকেই বার্ধক্যে আসেন। ফলে চিকিৎসাসহ অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তার বোঝা নিতে হয় আমেরিকাকে।

এর পরিবর্তে মেধাভিত্তিক অভিবাসন হলে আমেরিকা পছন্দ করে লোক নিয়ে আসবে। তারা ইচ্ছে করলে, কোনো দেশ থেকে, কী যোগ্যতার লোক আনবে তা নির্ধারণ করতে পারবে। এমন যুক্তি দেখিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে চেইন ইমিগ্রেশন বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বছরে যে দেড় লাখ চাকরিভিত্তিক ভিসা প্রদান করা হয়ে থাকে, তার অর্ধেক চাকরি ভিসায় আসা অভিবাসীদের পরিবারের জন্য চলে যায়।

এ বিষয়কে মার্কিন অভিবাসনের মারাত্মক ত্রুটি হিসেবে দেখানোর এখন সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আকায়েদ উল্লাহ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হন সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের পরিচালক লুই ফ্রান্সিস কিসনা।

তিনি প্রেসিডেন্টের বার্তাটি স্পষ্ট করেই দিলেন সংবাদ সম্মেলনে। দ্রুততার সঙ্গে পারিবারিক এই চেইন অভিবাসন বন্ধ করার প্রেসিডেন্টের ইচ্ছার কথা জানালেন। আইন পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। অন্য যেকোনো বিষয়ে বিভক্ত মার্কিন কংগ্রেসে অভিবাসনের আইন দ্রুত বদলে দেওয়া নিয়েও বিতর্ক হবে। সহজে ঐক্যবদ্ধ আইন প্রস্তাব খুব সহজ হবে না, এমন ধারণা করা যেতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট এ ক্ষেত্রেও নির্বাহী আদেশ জারি করে পরিবর্তনের জন্য চাপ দিতে পারেন বলে আভাস দেওয়া হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আকায়েদ উল্লাহকে নিয়ে কথা হয়েছে। আমেরিকায় আসার আগে এই আকায়েদ উল্লাহর কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো তথ্য আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক লুই ফ্রান্সিস কিসনা বলেছেন, তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারীদের পীড়নের অভিযোগ এবং তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মুখপাত্র সারা হাকাবি স্যান্ডার্স।

আর এই এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে আকায়েদ উল্লাহ আর চেইন অভিবাসনকে। রাজনীতির মোক্ষম এই অস্ত্র ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে তাঁর এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে যাবেন, তা বলাই বাহুল্য।

এ পর্যন্ত অভিবাসনবিরোধিতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাফল্য পেয়েছেন। তাঁর নির্বাহী আদেশ আংশিক হলেও কার্যকর হয়েছে। তিনি কিছু দেশকে চিহ্নিত করেছেন, যেখান থেকে আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন।

এ ধরনের দেশের তালিকা তিনি বৃদ্ধি করতে পারেন। সেখানে বাংলাদেশের কিছু অর্বাচীন আকায়েদ উল্লাহ, নাফিজসহ আগের একাধিক ব্যক্তির তৎপরতাকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া হতে পারে। যদিও জঙ্গিবাদ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট।

আকায়েদ উল্লাহর ঘটনার পরপরই ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস দ্রুত বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ বা জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতি কঠোর অবস্থানে, এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহর পরিবারের বাংলাদেশের অবস্থান চিহ্নিত করে তদন্তে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ।

এসবের পরও অনেকেই মনে করছেন, কতিপয় অর্বাচীনের ন্যক্কারজনক তাণ্ডবে ‘ড্যামেজ ইজ অলরেডি ডান’ বা ক্ষতি যা তা হয়ে গেছে। নিউইয়র্কসহ আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা তীব্র ভাষায় এই কর্মকাণ্ডের নিন্দায় সোচ্চার হয়ে উঠছেন। যদিও কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী মিন মিন করে বলার চেষ্টা করছে, আকায়েদ উল্লাহর ঘটনার পেছনে অন্য কিছু আছে কি না, তলিয়ে দেখা দরকার।

পারিবারিক অভিবাসনের আবেদনে বাংলাদেশের ঠিক কত লোকের আবেদন জমা আছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে আমেরিকাপ্রবাসী প্রায় প্রতিটি পরিবারের লোকজন এই অভিবাসন আবেদনের আওতায় আছেন। অনেকেই বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন।

আত্মীয়তার জের ধরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কোনো কোনো আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরও অপেক্ষা করতে হয় ১০ থেকে ১২ বছর। চেইন অভিবাসনের ওপর খড়্‌গ নামলে এ ধরনের আবেদনের কী হবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত বাংলাদেশিরা। যাঁরা আশ্রয় বা অ্যাসাইলাম বা অন্য ক্যাটাগরিতে আমেরিকায় অভিবাসন পেয়েছেন, তাঁদেরও স্বপ্ন ও প্রয়াস রয়েছে নিকটাত্মীয়দের আমেরিকায় অভিবাসন করানো।

বাংলাদেশ থেকে কর্ম ভিসা বা অন্য ধরনের ভিসায় আমেরিকায় অভিবাসনের সংখ্যা তেমন বেশি না থাকায় অভিবাসনের এই পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে বাংলাদেশিদের আমেরিকায় আগমনের ক্ষেত্রে। এখন চেইন অভিবাসন বন্ধের অজুহাতে নাম উঠছে বাংলাদেশের আকায়েদ উল্লাহর। এ কারণেই প্রবাসীদের কাছে ধিক্কার আর ঘৃণার সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর নাম।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডাইভার্সিটি ভিসা বা লটারি ভিসা বন্ধ করতে চান। পারিবারিক চেইন অভিবাসন বন্ধ করে কেবল স্বামী, স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের জন্য অভিবাসনের দরজা খোলা রাখতে চান। তাঁর এই উদ্যোগ কতটা তাড়াতাড়ি, কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন, তা এখন দেখার অপেক্ষায় উৎকণ্ঠিত প্রবাসীরা।

সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের আইনের অধ্যাপক রামজি কাশিম গত মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে অভিবাসনকে এক করে দেখাটা রাজনৈতিক ও বিদ্বেষপ্রসূত। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন এই বিদ্বেষের পথেই হাঁটছেন এবং এর বলি হতে হচ্ছে আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশী লোকজনকে।

469 ভিউ

Posted ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com