রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সংগীত-স্মৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০১৭
549 ভিউ
সংগীত-স্মৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

কক্সবাংলা ডটকম(৬ আগস্ট) ::

“জুঁইকে বললাম

এই যে তুমি অনন্তকাল ধরে গাইছ

‌‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে’

তোমার অন্তর তো বিকশিত হয় না

দোষ কি তবে মন্ত্রের?

জুঁই বলল— জানি না!”

রবীন্দ্রনাথের গান কোন পথে কীভাবে শুশ্রূষা নিয়ে আসে সেটা ভাষায় ব্যক্ত করা সহজ নয়। কেউ কেউ যদিও সে চেষ্টা করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই গায়ক ছিলেন না—ছিলেন কবি, শিল্পরসিক। শঙ্খ ঘোষ জানিয়েছিলেন, কী করে গান শুনবার মুহূর্তে ‘এ আমির আবরণ’ খুলে যায়। গাইবার কালে বা গান-আস্বাদনের মুহূর্তে বস্তুসংঘাতময় চেনাপৃথিবীর অচেনা আবহই বিচলিত করে একজন গায়ক বা শ্রোতাকে। আমার ধারণা, এখানে ‘করে’ মানে ‘করতে পারে’। কারণ, আন্তরিক যোগ্যতা গায়ক হয়ে উঠবার জন্য মোটেই জরুরি কিছু নয়, কণ্ঠের যোগ্যতাই আসল। আন্তরিক যোগ্যতা বিবেচনা করলে তাঁর গান অনেককে দিয়ে গাওয়ানো যাবে না, এমন অভিমত ছিল রবীন্দ্রনাথের। সেই অভিমত থেকে জুঁইয়ের কাছে রক্ষিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে।

২০০০ সালের আগে আমি গায়ক ছিলাম। সে-বছর সেপ্টেম্বর মাসে সনজীদাদি’র সঙ্গে কলকাতা গিয়েছিলাম শঙ্খবাবুর সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করবার আশায়। শৈলজারঞ্জন মজুমদারের জন্মশতবর্ষে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে অনুষ্ঠান ছিল তখন।দিদির সঙ্গে পাপিয়া সেনগুপ্তের বাসায় উঠেছিলাম।ওই সময়টাতে নিয়মিত গলা সাধতাম। একই বাড়িতে থাকত সাকেত নামের একটি ছেলে—উত্তর প্রদেশ থেকে কলকাতায় আসা, বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া। প্রতিদিন সকালে সে কিছুটা ইশারায়, কিছুটা হিন্দিতে আমাকে একটা গান গাইবার অনুরোধ করত।

প্রতিদিনই ওকে রবীন্দ্রনাথের একটি গান শোনাতে হতো : ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাব না’। গানের বাণীটা সে বুঝত না।তখন জানলাম, সুরের কারণে গান কখনো-বা আঞ্চলিক হয়ে উঠতে পারে না পুরোপুরি। এটা দারুণ ব্যাপার নিঃসন্দেহে। অথচ, ব্যাপারটি দারুণ নয় মোটেই গায়কের জন্য, বাণীকে না বুঝে নিজ-ভাষায় রচিত কোনো গান গাইতে যাওয়া। কারণ, তখন তা প্রকৃত ‘মন্ত্রে’র কাজ করে না। জুঁইকে তাই বলি—‘মন্ত্রের কোনো দোষ নেই; দোষ তোমার। তুমি জানো না, তুমি কী গাইছ।’ সভাশোভন সজ্জা নেবার আগে আমি অনেক দিন জুঁইয়ের কাছে জানতে চেয়েছি মনে, ‘জুঁই বলো তো কী গাইছ?’ —বলতে পারেনি। অসামান্য গেয়ে সে যেদিন মঞ্চ থেকে নেমে এলো, সেদিনও জানতে চেয়েছি, ‘কী গাইলে বলো তো?’ —নিরুত্তর থেকেছে সে।তাঁর এই নিরুত্তর থাকাটা আমাকে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। তিনি ঋতু গুহের মতো আশ্চর্য কণ্ঠের গায়ককে খাতা দেখে গাইতে দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। ‘রবীন্দ্রসংগীতের আসরে’ নামের প্রবন্ধে সুনীল রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের ভয় দেখিয়েছিলেন এভাবে:

“এই সব গায়িকাদের আমি সাবধান করে দিচ্ছি। এরপরে, কোনো অনুষ্ঠানে যখন তাঁদের কেউ গান গাইতে যাবেন, গেটের কাছে গাড়ি থেকে নামবার সময়েই খোঁচা খোঁচা চুল, ঢ্যাঙা, মুখে বসন্তের দাগ, মিশমিশে কালো একজন গুণ্ডা মতন লোক তাঁর হাত থেকে গানের খাতাটা নিয়ে দৌড়ে পালাবে। সেই লোকটা আমি।”

প্রকৃতপক্ষে আমরা যদি খাতা দেখে না গাই, যদি সত্যিই জানতে চাই আমরা কী গাইছি, বা প্রকৃতই বাণীকে আত্মস্থ করি, তাহলে কিছু বিপত্তি ঘটে। এই ‘বিপত্তি’ই ছিল ২০০০ সালের পর আমার গান-শেখা ছেড়ে দেবার অন্যতম কারণ। সনজীদাদির কাছে ‘চোখের জলের লাগল জোয়ার’ গানটি শিখতে যাবো যেদিন, তার আগে দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়েছি, শক্ত করে বুক বেঁধেছি যেন ভেঙে না পড়ি, গ’লে না যাই ‘রক্তকরবী’র আশ্চর্য ওই গান গাইতে গিয়ে। সেদিন ঠিকঠাক গান শিখে চলে এলাম। ঠিক তার কিছুদিন পর ‘যদি এ আমার হৃদয়দুয়ার বন্ধ রহে গো কভু’ শিখতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। সঞ্চারি ও দ্বিতীয় অন্তরা গাইতে গিয়ে বুক ভেসে গেল। আমার আর গান শেখা হলো না তাঁর কাছে। কোথায় যেন পড়েছি, “রবিকা’ পারতেন, তাঁর সেই বুক ছিল।” আমার তো তেমন সংবরণের সামর্থ্য নেই।‘চিরদিবসের হে রাজা আমার, ফিরিয়া যেয়ো না প্রভু’ অবধি শেখা হলো না

দুই.

‘রাজা’ সম্পর্কিত রবীন্দ্রনাথের ভাবনাসূত্র তাঁর সকল শিল্প-আঙ্গিকে ছড়িয়ে আছে।আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘রাজা’কে হারাতে চাননি।‘রাজা’ নাটকের ঠাকুরদাকে আমরা বলতে শুনেছি, “…ছেলে তো গেলই, তাই বলে কি ঝগড়া করে রাজাকেও হারাব।এমনই বোকা!” এমন বোকামি রবীন্দ্রনাথ করেননি। পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যুর (১৯০৭) কুড়ি দিন পর লিখলেন মৃত্যুজনিত শূন্যতাবিহীন গান : ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’। দুঃখের এই অভিজ্ঞতাই ছিল তাঁর অবলম্বন, জীবনের তাৎপর্য অনুসন্ধানে। মৃত্যুর রূপ যে ‘প্রশান্ত ও মনোহর’ হতে পারে, তা আমরা জানতে পারি তাঁর প্রতিক্রিয়ায়, চৌদ্দ বছর বয়সে, মায়ের মৃত্যুর পর। তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’তে এসবের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।কাছাকাছি সময়ে, বোধ করি একই  বয়সে লেখা ‘তারকার আত্মহত্যা’ কবিতায় আমরা যেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টাকে পাই।পরম-প্রভাববিস্তরী সে মৃত্যুটি তখনও নিষ্পন্ন হয়নি—

‘…হৃদয় হৃদয় মোর, সাধ কি রে যায় তোর

ঘুমাইতে ওই মৃত তারাটির পাশে

ওই আঁধার সাগরে

ওই গভীর নিশীথে

ওই অতল আকাশে।’

কাছাকাছি সময়ে রচিত, ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলি’র ‘মরণ রে তুঁহুঁ মম শ্যামসমান’ গানটিতে, বিভিন্ন গানের আসরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে শ্যামসমান মনে করেছেন’; প্রকৃতপক্ষে, এটি রাধার জবানি, রবীন্দ্রনাথের নয়। রবীন্দ্রনাথের গানে মৃত্যু ও বেদনা থেকে উত্তরণের পথ খোলা থাকে, নিমজ্জন নয়। দুঃখের অন্তর রহস্য ব্যক্তিসীমায় বাঁধা পড়ে না তাঁর গানে। ২৪ বছর বয়সে রচিত গান তিনি ৬২ বছর বয়সে গেয়েছিলেন, ব্যক্তিগত শোক থেকে পরিত্রাণের আশায়, শান্তিনিকেতনে, সারারাত : ‘অন্ধজনে দেহো আলো মৃতজনে দেহো প্রাণ’।

মৃত্যুজনিত বেদনার বিড়ম্বনা রবীন্দ্রনাথের জীবনে যতটা রয়েছে, তা বিরল। খুব কাছাকাছি সময়ে (১৮৯৯-১৯০৭) ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ (১৮৯৯) ও নীতিন্দ্রনাথের মৃত্যু (১৯০১), স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু (১৯০২), মধ্যম কন্যা রণেুকার মৃত্যু (১৯০৩), প্রিয় শিষ্য সতীশচন্দ্র রায়ের মৃত্যু (১৯০৪), পিতা দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যু (১৯০৫), কানিষ্ঠপুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু (১৯০৭) তিনি দেখেছেন। অথচ, কোনো হারিয়ে যাওয়াকেই তিনি ক্ষতি বলে গণ্য করেননি। শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে তিনি যখন ট্রেনে করে শান্তিনেকেতন ফিরছিলেন, জানালার বাইরে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, শমীন্দ্র তাঁকে শূন্য করে যায়নি. তাঁর আকাশ আলোয় ভরে আছে। আর এভাবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দুঃখকে সুখের সারে পরিণত করেছিলেন। জীবনকে বাঁচিয়েছিলেন অপচয়ের হাত থেকে, বেদনায় সমাহিত হতে দেননি।

তিন.

অথচ, রবীন্দ্রনাথের গান এখন দেখবারও বিষয়। সবসময় তো আর সবকিছু দেখতে ভালো লাগে না; অন্তত গান শুনবার মুহূর্তে তো নয়ই। বিষয়-বিচ্যুত আমার তাই গাইবার সময় ভুল হয়ে যায়। আমার মেয়ে আমাকে অভিনয় করে দেখায়—বাবা, ওভাবে নয়, এভাবে গাইতে হবে, কাঁধটা একটু ঝাঁকিয়ে, ‘কুহু কুহু কুহু হায়…’। আমি ভুলটা কোথায় ঘটছে ঠিক বুঝে নিই, নিজেকে শুধরে নিই না। অন্যদিকে, শান্তিদেব ঘোষের সময় থেকেই, তাঁর লংপ্লেইংয়ে, এবং পরবর্তী সময়ের গানের আসরে উঠে আসছে গান-সৃষ্টির নেপথ্যের চমকপ্রদ সব তথ্য ও অতথ্য। প্রকৃতির মধ্যে কোনো বিদেশিনীর আনাগোনা দেখে রবীন্দ্রনাথ যখন ‘চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’ ভাবছেন, আমরা এর সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওপাম্পোকে জড়িয়ে নিতে ভালোবাসছি, যদিও তখন অবধি দেখাই হয়নি ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে। অথবা, নিরাকার কোনো ‘তুমি’র মধ্যে সাকার বৌদির মহিমা ছড়িয়ে দিচ্ছি। আমাদের জ্ঞানের গণ্ডি হয়ত বাড়ছে তাতে। তবে, এই যে অতিরিক্ত কৌতূহল, এই যে ‘বাইরে থেকে দেখব বলে পতঙ্গের মতো আগুনে ঝাঁপ’ দেয়া, তা আমাদেরকে ‘রাজা’র বদলে ‘সুবর্ণ’কেই দেখায়।

গুণীরা আমাদের উদ্রিক্ত রসনার দিকে চেয়ে চিরকাল বিধাতার কাছে দরবার করেছেন: ‘বিধি যত তাপ মোর দিকে হানিবে, অবিচল রব তাহে।/ রসিকের ধন অরসিকে ললাটে লিখো না হে, লিখো না হে।’ একটু ভিন্নভাবে, আমাদের মতোই, সুরেশচন্দ্র সমাজপতিরা তৎকালে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। ‘ওগো কাঙাল আমারে কাঙাল করেছ’ গানটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হলে বিদ্রূপ করেছিলেন—রবিবাবুর স্বাক্ষর না থাকলে তিনি বুঝতেই পারতেন না সেটা রবীন্দ্রনাথের গান, তেমনই জানিয়েছিলেন : গানটি যেন এতই পচা। সনজীদাদির কণ্ঠে গানটা শুনেছি, বোধ হয় শৈলজারঞ্জন মজুমদারের রেকর্ডেও অসামান্য এ গানটি রয়েছে। কালিদাস নাগের স্মৃতিকথার বরাত দিয়ে পার্থ বসু জানিয়েছেন তাঁর ‘গায়ক রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে—নোবেল প্রাপ্তির পর রবীন্দ্রনাথ কোনো এক আসরে গেয়েছিলেন, ‘এই মণিহার আমায় নাহি সাজে’, তা কেবল বিনয় থেকে নয়, তৎকালীন সুধিদের একাংশের বিরুদ্ধ আচরণের নিরীহ অথচ সংক্ষুব্ধ জবাব ছিল তা। সীতা দেবীও জানিয়েছেন, নোবেল প্রাপ্তির পর রবীন্দ্রনাথকে দেয়া অভিনন্দনের জবাব ছিল এই গান। সুশোভন সরকাররে একটি প্রবন্ধে জানা যায় কবির এই নোবেল প্রাপ্তিতে কবিকে নিয়ে আঁকা তৎকালীন ব্যঙ্গচিত্র কীরকম কুশ্রীতায় ভরপুর ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র রায়কে লেখা সমসাময়িক এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘কাজ যখন সাধনার চেয়ে বড়ো হয়ে উঠতে চায়, তখন তাকে ঝেঁটিয়ে ফেলে বেরিয়ে পড়বার সময় আসে—আমার সে সময় এসেছে।’

চার.

আমার তো কাজ নেই, সাধনাও নেই, তবু—

“সকালে রবীন্দ্রনাথের জন্য আমি ডাল রান্না করেছি

দুপুরে জুঁইদি এসে খেয়ে চলে গেছে

বিকেলে, ভেবেছি, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার যেটুকু স্মৃতি আছে

জুঁইদিকে শোনাব; বললাম, জুঁই, তুমি বিকেলে এসো—

বিকেলে জুঁইদি এলো না,

সারাদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার নিষ্ফল ঘরে বসে কাটলো!”

রবীন্দ্রনাথকে বললাম, ‘এই যে তোমাকে লিখছি রাত জেগে, তুমি কি রাগ করেছ?’ রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘কেন?’

বললাম : ভালোবাসলে তো সবাই রাগ করে!

বললেন : তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। তাছাড়া, তুমি অলস। তুমি কাঁদো শুধু জুঁইদির জন্য।

বললাম : জুঁইদির জন্যে নয়, রাজার চিঠির জন্য কাঁদি।অথচ চিঠি না পাওয়ায় আক্ষেপও নেই, কী আশ্চর্য বিরোধ!

বললেন : তোমার কাছে তো কখনো সে চিঠি আসবে না। তুমি ভুলতে পারো না কেন, তোমার যে নিষ্ফল কাটে আমাকে নিয়ে।‘আক্ষেপ যে নেই’ এই কথাটি তো ঠিকই মনে রেখেছ। তাই তুমি অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। মানবেতর।

বললাম: গুরুদেব, তুমি তো বলেছিলে, ‘মহামানব আসবেই’, ‘মানুষের দায়, মহামানবের দায়’। সভ্যতার সংকট কি তবে ঘুচে যাবে। স্বার্থের এলায়েন্স কি আর থাকবে না এই পৃথিবীতে? আমার ‘দিকে দিকে রোমাঞ্চ জাগে’ না কেন হে বস? সত্যিই কি সে আসবে রাজার চিঠির মতন?

বললেন: আসবে। মহামানব আসবেই। দেবতা আর মানুষ উভয়েই উদগীব হয়ে আছেন তাঁর জন্যে।

বললাম : মহামানব তো নিঃসঙ্গ। আর তাঁর প্রদীপ সংগোপনতায় ঢেকে রেখেছেন দীর্ঘকাল। আমরা তো সে আলোক আর দেখতে পাবো না। কী লাভ তবে?

বললেন : তুমি বুঝবে না

বললাম : আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথ, ‘সমুখে শান্তিপারাবার’ গানটি তোমার মৃত্যূর আগে গাইতে কেন বারণ করেছিলে? তুমি কি মরে গেছ রবীন্দ্রনাথ! কখনো আমার জীবন থেকে ঢেউয়ের মতন তুমি অদৃশ্য হয়ে গেলে, আমি কি চোখ মুছে বাড়ি ফিরে যাবো। ভুলে যাবো তোমাকে?

রবীন্দ্রনাথ তার জবাব দিলেন না আর। বিড়বিড় করতে লাগলেন, ‘জীবনকে মৃত্যুর জানলার ভিতর থেকে না দেখলে তাকে সত্যরূপে দেখা যায় না।’ তাঁর ‘শেষ লেখা’র কিছু  কবিতা কানে বাজতে লাগল। বিশেষ করে, ‘সমুখে শান্তিপারাবার’ কবিতাটি গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরে এলাম মধ্যরাতে, একা।

রাজার চিঠি আসে না বলে নয়; আমার জীবনটাই চোখের জলে লেখা। তা চোখের জল বলেই মাটিতে পড়ে যায়। প্রতিটি বাইশে শ্রাবণে আমি তা তুলে নিই, আবার দুচোখে রাখতে চাই। আমার ভালো লাগে তখন। জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে। কোথাও কেউ নেই, তবু মায়ায় ভরে ওঠে মন। সমস্ত জানালা খুলে যায় তখন। অমলের মতন আমার আর কোনো অসুখ থাকে না। আমিও সব তারাগুলি দেখতে পাই— অন্ধকারের ওপারকার সব তারা। আর সমস্ত প্রশ্ন গিলে ফেলতে থাকি— আনা তড়খড় কি রবীন্দ্রনাথকে সত্যিই ভালোবেসেছিল? তাঁর গান শুনে কী করে মরণ-দিনের থেকেও প্রাণ পেয়ে জেগে উঠতে পারে সে (আনা)। কোথায় থাকে আনার ‘মরণ দিন’। কোনো রেফারেন্স কি তার আছে এই বস্তুজগতে! উলটো মরণদিনের দিকে যাত্রা করবে, তা তো সে বোঝেনি। আনা কখনো চায়নি রবীন্দ্রনাথের সুন্দর মুখ ঢাকা পড়ে যাক দাড়িগোঁফে। অথচ আনার মৃত্যুর (১৮৮১) আগেই রবীন্দ্রনাথের শ্মশ্রূমণ্ডিত মুখ আমরা দেখেছি। রবীন্দ্রনাথ কি আনাকে ভালোবেসেছিল! ‘ভালোবাসা’ বলে তেমন কিছু নেই জানবার পরও এমনসব উলটা-পালটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে।

549 ভিউ

Posted ১:০৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com