বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

২০২০ সালে প্রবাসী কর্মীর লাশ এসেছে ২ হাজার ৮৮৪টি

রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১
329 ভিউ
২০২০ সালে প্রবাসী কর্মীর লাশ এসেছে ২ হাজার ৮৮৪টি

কক্সবাংলা ডটকম(৩ জুলাই) :: এক সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের রিয়াদে মোহাম্মদ নুরুল আমিন নামে একজন প্রবাসী কর্মী মারা যান। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে। তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য প্রবাসীরা জানান, রাতে খাবারের পর ঘুমিয়ে পড়লে সকালে আর ওঠেননি। তাদের ধারণা স্ট্রোকে কিংবা হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। শুধু স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুবরণ করে ওমান থেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন ৪৮ বছর বয়সী আক্তার মিয়া, কুয়েত থেকে ৩৯ বছর বয়সী সুন্দর আলী, দুবাই থেকে ৩৯ বছর বয়সী রতন মিয়া, সৌদি আরব থেকে ৪৮ বছর বয়সী শাহ্ আলম, কাতার থেকে ২৯ বছর বয়সী বশির উদ্দিন, বাহরাইন থেকে ৩৫ বছর বয়সী জিয়াবুল হোসেন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব মধ্যবয়সী কর্মীদের লাশ আসছে তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু স্ট্রোকের কারণে।

বিশ্বের ১৬৪ দেশে কাজ করেন প্রবাসী কর্মীরা। করোনার থাবায় কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই কারও কাছে। করোনায় মৃত কর্মীর লাশও দেশে আসেনি, দাফন হয়েছে বিদেশের মাটিতেই। করোনার বাইরে নানা কারণে গত দেড় বছরে ৪ হাজার ২৬২ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এদের বেশিরভাগই স্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এই বছরের মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তা জানা গেছে। তাদের বেশিরভাগের বয়স ২৮-৪১ বছরের মধ্যে।

তথ্য যাচাই করে আরও জানা যায়, ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি লাশ এসেছে সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া থেকে। সৌদি আরব থেকে এসেছে ৭৬২টি এবং মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৬৯৬টি লাশ। লাশ বেশি আসার এই তালিকায় আরও আছে কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে লাশ আসার পরিমাণ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে মোট লাশ এসেছে ২ হাজার ৮৮৪টি।

২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত লাশ এসেছে ১ হাজার ৫৫৪টি। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৫২১টি, মালয়েশিয়া থেকে ৩২৯টি, কুয়েত থেকে ১০০টি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১২৮টি , কাতার থেকে ১০০টি এবং ওমান থেকে ১২৭টি। অর্থাৎ বেশির ভাগ লাশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৮ বছরে ৫ মাসে ৪১ হাজার ৩২টি লাশ দেশে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ এসেছে ২০১৭-১৯ সালে, প্রতিবছর ৩ হাজারের ওপরে। তাছাড়া অনেক স্বজনরা লাশ ফেরত নিতে চান না। তাই সেসব কর্মীর লাশ দেশেও আসে না এবং থাকে হিসাবের বাইরে।

বিদেশে কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর হার এত বেশি কেন তা কখনও খতিয়ে দেখা হয়নি। আবার এত বেশি কর্মী স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাকে কেন মারা যাচ্ছে তার সঠিক কারণ জানতেও অনুসন্ধান করা হয়নি। তাদের মৃত্যুর কারণে যা লেখা হয় তাও পুনরায় খতিয়ে দেখারও কোনও নজির নেই। প্রবাসী কর্মীদের অভিযোগ- কর্মস্থলে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ এড়াতেও স্ট্রোকে কিংবা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর কথা ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়।

প্রবাসী কর্মীদের এই ধরনের অকাল মৃত্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার পুরো পরিবার। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, ৯৫ শতাংশ অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুর পর আর্থিক সঙ্কটে পড়ে যায় তার পুরো পরিবার। তার মধ্যে ৫১ শতাংশ পরিবারের ৮০-শতভাগ আয় কমে যায়। পাশাপাশি ৮১ শতাংশ পরিবার স্বাস্থ্যসেবা পেতে সঙ্কটে পড়ে, ৬১ শতাংশ পরিবারের সন্তানেরা স্কুলে যাওয়ার সক্ষমতা হারায় আর ৯০ শতাংশ পরিবারই দৈনিক খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুর পর ৪৮ শতাংশ পরিবারই বিষণ্নতায় ভুগে, ৪০ শতাংশ পরিবারের ঘুমের জটিলতা তৈরি হয়। তাছাড়া কিছু কিছু পরিবারের এক ধরনের দায় চাপাচাপির মতো পরিবেশ তৈরি হয়।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বিদেশে মৃতদের বেশিরভাগই হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, দুর্ঘটনাজনিত কারণে মারা যান। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, একটা মানুষ বিদেশ যাওয়ার আগে তাকে বেসিক ধারণা দিতে হবে। সৌদি আরবে আবহাওয়া কেমন, সেখানে কোনও ধরনের খাবার খাওয়া উপযোগী। দেশভিত্তিক এই ধরনের বিষয়ে সচেতনতা যেমন একদিকে দরকার, আরেক দিকে মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করা। বলা হয় আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা , আসলেই তাই কিনা।

আমরা যদি মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করতে পারি তাহলে কিন্তু বিদেশগামী কর্মীদের সেভাবে সচেতন করতে পারি। আমাদের অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি এত বেশি উপেক্ষিত থেকে যায়, বিদেশে একসঙ্গে অনেকজন গাদাগাদি করে থাকে, সারাক্ষণ মাথার মধ্যে চিন্তা, দেনা শোধ করার চিন্তা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। এসব কিছু মিলিয়ে কিন্তু মৃত্যুর দিকে যায়। গত ১৩-১৪ বছরের আমাদের ৪০ হাজারের মতো প্রবাসী মারা গেলেও এটা নিয়ে খুব একটা বড় কাজ আমাদের হয়নি। অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি।

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, অভিবাসী কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা পুনরায় ময়নাতদন্ত করার সুযোগ বের করা দরকার। যে মৃত্যু বলা হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকে সেটার কারণ কি অথবা যে রিপোর্টগুলো হচ্ছে সেটা কি যা হচ্ছে তাই দিচ্ছে নাকি ম্যানিপুলেশন আছে সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ নিয়োগকর্তার দায় এড়ানোর সুযোগের জায়গা থেকে এমনটা করা হতেই পারে। বেশিরভাগই যারা হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছে তারা খুব কম বয়সের। এই হার্ট অ্যাটাকের কারণটি আসলে কি সেটা জানা দরকার।

তিনি আরও বলেন, একজন কর্মীর মৃত্যুর পর তার পরিবারের আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়। আমরা যখন অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষার কথা বলি, তখন এই মারা যাওয়ার প্রেক্ষিতে নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে কতটুকু কাজ করা হয়? কর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা আছে , সেক্ষেত্রেও বীমার টাকা আদায়ে দূতাবাস একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু আমরা জানি না বিভিন্ন কারণে মারা যাওয়া কর্মীদের বীমার টাকা দাবি করা হয় কিনা। এই বিষয়গুলা একটু ভালো করে খতিয়ে দেখার দরকার আছে।

কিভাবে প্রবাসী মৃত ব্যাক্তির লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়?

আমাদের দেশের অনেক মানুষ প্রবাসে থাকে। প্রবাসে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন। প্রায়ই বিদেশের মাটিতে আমাদের কোন প্রবাসী ভাই বা বোনের মৃত্যুর খবর শোনা যায়। ঠিক এই শোকের সময় মৃত ব্যক্তির পরিবার ও নিকটাত্মীয়রা দুশ্চিন্তায় পরে যায় একটি বিষয় নিয়ে আর তা হল কিভাবে প্রবাসী মৃত ব্যাক্তির লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়?

আমরা অনেকেই বিদেশ থেকে দেশে লাশ আনার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানি না সেই কারনে আমরা আমাদের প্রবাসী ভাই-বোন বা আত্মীয়ের লাশ দেশে আনতে পারি না।

আজ আমরা জানবো কিভাবে প্রবাসী মৃত ব্যাক্তির লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়?

প্রবাসে কোন বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করলে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা অথবা মৃত ব্যক্তির পরিবার বা নিকটাত্মীয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রবাসে তার লাশ সনাক্ত বা দাফনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) এর সঙ্গে সমন্বয় করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পরিবার বা নিকট আত্মীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগ বরাবর মৃত ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্যসহ একটি আবেদন করতে হয়।

মৃত ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্যসমুহ হলঃ

১. বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রমাণের সনদপত্র
২. পাসপোর্ট (প্রথম পাঁচ পাতা)
৩. ট্রাভেল পারমিট-এর অনুলিপি
৪. চাকরি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি (যেমন, চাকরিস্থল, চাকরিদাতার পূর্ণাঙ্গ নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর ইত্যাদি এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য তথ্যাদি যদি থাকে)।

উপর্যুক্ত তথ্য সম্বলিত আবেদনপত্র প্রাপ্তির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণত তিন কর্মদিবসের মধ্যে আবেদনপত্রটি প্রয়োজনীয় কার্যার্থে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে প্রেরণ করে থাকে।

উল্লেখ্য, লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার পর তা পরিবার বা নিকট আত্মীয়ের নিকট হস্তান্তর এবং এই সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) করে থাকে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) এর ঠিকানাঃ

৮৯/২, কাকরাইল, ঢাকা।
ফোনঃ ৯৩৩৯৭০৫, ৯৩৫০৮৪৮;
ফ্যাক্সঃ ৮৩১৯৯৪৮)

প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির কোন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তি যদি তাঁর সঙ্গে থাকে তবে তিনি সেই দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে এই একই রকম ভাবে সহযোগিতা করবে।

 

 

329 ভিউ

Posted ২:২৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com