কক্সবাংলা ডটকম(৩ নভেম্বর) :: ভারতে তৈরি প্রথম করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দিল ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (হু)। বুধবার ‘হু’-র বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে কোভ্যাক্সিনকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
হু-র এই সিদ্ধান্তের ফলে কোভ্যাক্সিনের দু’টি টিকা নিয়ে যাঁরা শিক্ষা বা চাকরির জন্য আমেরিকা-ইউরোপে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁদের পক্ষে অনুমতি পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুমোদন দিয়েছে ভারতে তৈরি প্রথম কোভিড-১৯ টিকাকে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়ায় ভারতের এই টিকা এখন অন্যান্য দেশেও অনুমোদন পাবে। এছাড়া যেসব ভারতীয় এই টিকা নিয়েছেন বা নেবেন, তারাও বিদেশ সফরে গেলে আর কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে না অথবা করোনার অন্যান্য বিধি-নিষেধের আওতায় পড়বেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘কোভ্যাক্সিনকে (ভারত বায়োটেকের তৈরি) জরুরি ব্যবহারের তালিকাভুক্ত করেছে ডব্লিউএইচও। এর ফলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ভ্যাকসিনের ক্রমবর্ধমান তালিকায় যুক্ত হলো কোভ্যাক্সিন’।
কার্যকারিতা ও মানের বিষয়ে দীর্ঘ এবং কঠোর পর্যালোচনার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেল ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনার টিকা কোভ্যাক্সিন। এই প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি টিকার অনুমোদনের জন্য গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন করেছিল।
পরে জুলাই মাসে প্রয়োজনীয় ডেটা সরবরাহ করে ভারত বায়োটেক। দীর্ঘ এই সময়ে কোভ্যাক্সিনের সুরক্ষা, কার্যকারিতা এবং অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বের পাশাপাশি ভ্যাকসিন উৎপাদন স্থাপনাও পর্যালোচনা করে ডব্লিউএইচও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় লাখ লাখ ভারতীয়- বিশেষ করে বিদেশগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, করোনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবার এবং অন্যান্যরা ভোগান্তিতে পড়েন।
গত সপ্তাহে কোভ্যাক্সিনের ‘চূড়ান্ত ঝুঁকি-উপকারিতা মূল্যায়ন’র জন্য ভারত বায়োটেকের কাছে অতিরিক্ত তথ্য-উপাত্ত চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ।
কোভ্যাক্সিনের অনুমোদনের পর এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে একাধিক টুইট করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক টুইটে সংস্থাটি বলেছে, ১৪ অথবা তারও বেশি দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ নেওয়া হলে কোভিড-১৯ এর যেকোনও ধরনের তীব্রতার বিরুদ্ধে কোভ্যাক্সিন প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর বলে নিশ্চিত হয়েছে ডব্লিউএইচও। সংরক্ষণের ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এই টিকা।
ভারতের স্থানীয়ভাবে তৈরি একমাত্র টিকা হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেল কোভ্যাক্সিন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকাদান কর্মসূচির মূলভিত্তি হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত কোভিশিল্ডের পাশাপাশি কোভ্যাক্সিনও ব্যবহার করা হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটিতে ১২ কোটি ১৪ লাখ মানুষকে কোভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে।
ভারত বায়োটেক বলছে, তাদের তৈরি টিকা উপসর্গযুক্ত করোনা প্রতিরোধে ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ কার্যকর। এছাড়া করোনার অতি-সংক্রামক ধরন ডেল্টার বিরুদ্ধে ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে কোভ্যাক্সিন।
কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন, মডার্না এবং চীনের সিনোফার্মের টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
এদিকে, কোভ্যাক্সিনের গুণাগুণ অব্যবহৃত অবস্থায় ১ বছর পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকে বলে বুধবার জানিয়েছে ভারত বায়োটেক। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) এ বিষয়ে একটি সনদপত্র ভারত বায়োটেককে দিয়েছে।
সিডিএসসিওর সনদ অনুযায়ী, টিকা প্রস্তুতের দিন থেকে পরবর্তী ১২ মাস পর্যন্ত মেয়াদ ও গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে কোভ্যাক্সিনের।
বর্তমানে বাজারে যেসব করোনা টিকা পাওয়া যায়, সেসবের অধিকাংশেরই মেয়াদ ৬ মাস। অর্থাৎ প্রস্তুতের দিন থেকে ৬ মাসের মধ্যে ব্যবহার না করা হলে নষ্ট হয়ে যায় সেসব টিকার ডোজ। এছাড়া ফাইজার-মডার্নার করোনা টিকা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ তাপমাত্রার। সেই তাপমাত্রায় রাখা না হলে এমনিতেই টিকার প্রতিরোধী গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই কোভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করা সম্ভব।
ভারতে তৈরি হল জনসনের এক কোটি করোনা ভ্যাকসিন, রপ্তানি হবে বিদেশেও
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও এক ধাপ এগোল ভারত। এবার ভারতেই সম্পূর্ণরূপে তৈরি হল জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন। এটি আমেরিকান সংস্থা হলেও হায়দরাবাদে ভারতের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি করেছে তারা। গত সপ্তাহেই প্রায় এক কোটিরও বেশি টিকার ডোজ সরবরাহের জন্য সম্মতি দিয়েছে সরকার। হিমাচল প্রদেশের সেন্ট্রাল ড্রাগস ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে টিকাটি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক উচ্চ আধিকারিকের কথায়, ‘ হিমাচল প্রদেশের পরীক্ষাগার টিকাটিকে ছাড়পত্র দিয়েছে। সংস্থাটিও জানিয়েছে, শীঘ্রই টিকা সরবরাহ শুরু করবে তারা। ২৮ তারিখের মধ্যে লাইসেন্স পেয়ে যাবে তারা। তারপর থেকেই শুরু হবে সরবরাহের কাজ।
ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল ড্রাগস ল্যাবরেটরির রিপোর্টে সম্মতি দিলেই গোটাদেশে ছড়িয়ে পড়বে টিকাটি। তবে শুধু দেশবাসীর জন্য নয়। এর আগে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বৈঠকে কেন্দ্রীয় বিদেশ সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা বলেছিলেন, ‘অক্টোবরের শেষের মধ্যেই গোটাবিশ্বের জন্য ৮০ লক্ষ জনসন অ্যান্ড জনসন টিকার ব্যবস্থা করবে ভারত। কোয়াডের অন্তর্গত সমস্ত দেশ এই টিকার খরচ বহন করবে।’
সেপ্টেম্বর মাস থেকেই অবশ্য অনুমোদনের জন্য পড়েছিল টিকাগুলি। তবে সেগুলিকে অবশেষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের উচ্চ আধিকারিকের কথায়, ‘ অবশেষে অক্টোবরের শেষদিকে চুড়ান্ত তথ্য জমা দিয়ছে সংস্থাটি। গত শুক্রবার সেন্ট্রাল ড্রাগস ল্যাবরেটরির রিপোর্ট এসেছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেলের কাছে।
Posted ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ নভেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta