বৃহস্পতিবার ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের ব্যাংক খাতে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৯২৩ জন

সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
18 ভিউ
দেশের ব্যাংক খাতে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৯২৩ জন

কক্সবাংলা ডটকম :: দেশের ব্যাংক খাত ঘিরে সংকট ক্রমেই বাড়ছে। একদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, অন্যদিকে ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংখ্যাও বেড়েছে উদ্বেগজনক মাত্রায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৯২৩ জন। গত জুন শেষে মোট বিতরণ করা ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে খেলাপির সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৬ জন—অর্থাৎ মোট ঋণগ্রহীতার প্রায় এক-ষষ্ঠাংশই খেলাপি। এ ছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৪৮৩ জন। এই বিপুলসংখ্যক খেলাপির কাছে আটকে আছে প্রায় ৬ লাখ ৬৭ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, ঋণ অবলোপন হয়েছে—এমন গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৩৬ জনে। অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ পাওয়া হিসাবগুলো যুক্ত করলে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৬৪ হাজার ৫৪২ কোটি টাকায়।

এ ছাড়া আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে আটকে আছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭ হাজার ২৯৬ কোটি টাকায়।

এর মধ্যে ব্যাংক খাতেরই খেলাপি ৬ লাখ ৬৭ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। আর অবলোপনকৃত ঋণসহ হিসাব করলে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখন ঝুঁকিপূর্ণ বা অনাদায়ী অবস্থায় আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ব্যাংক খাতের প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এতদিন পর্যন্ত অনেক প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতার ঋণ গোপন বা নিয়মিত হিসেবে দেখানো হতো। কিন্তু নতুন প্রশাসনের অধীনে যখন এসব হিসাব পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তখনই বেরিয়ে আসছে প্রকৃত খেলাপির সংখ্যা ও অঙ্ক।

তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত এক বছরে বেড়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, এক বছরের ব্যবধানে তা প্রায় তিন গুণে পৌঁছেছে। মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা দেশের আর্থিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্লেষণ বলছে, হঠাৎ খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি বড় কারণ রয়েছে। প্রথমত, আগের সরকারের সময় নানা প্রভাবশালী মহল বহু নামে-বেনামে ঋণ নিয়েছিল, যা গোপন রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলো চিহ্নিত হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঘোষণার সময়সীমা ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা হয়েছে, ফলে খেলাপির হিসাব দ্রুত বাড়ছে। তৃতীয়ত, কৃষি ও ক্ষুদ্র-মাঝারি খাতের (এসএমই) ঋণে আগে যে বিশেষ সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঘোষণায় ছাড় দেওয়া হতো, সেটি বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আগের সরকারের সময় কিছু গ্রাহক আদালতের বিশেষ আদেশে খেলাপি ঋণকেও নিয়মিত দেখাত। এখন সেই সুযোগ নেই। তা ছাড়া ৫ আগস্টের পর অনেক চালু ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে, যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সেই ঋণগুলোও খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ঋণ আদায়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের নীতি সহায়তা দেওয়া হবে, কিন্তু ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী প্রান্তিক থেকে এ নীতি বাস্তবায়ন শুরু হলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।’

তথ্য বলছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। বর্তমানে এসব ব্যাংকের মোট ঋণের ৪৫ শতাংশ খেলাপি, যা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৪২.৮৩ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপির হারও বেড়ে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে—গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি ছিল ১৫.৬০ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর গত ১৬ বছরে এটি বেড়েছে ৩০ গুণেরও বেশি। এই সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ তুলেছে, যেগুলোর অনেকটাই বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, বিশেষ করে ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এগুলো হলো— ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংকের বেশিরভাগই আগে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ব্যাংকগুলোর এস আলমের প্রভাবমুক্ত হওয়ার পর এগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে এই পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত (মার্জার) করার প্রস্তুতি নিয়েছে, যাতে এ খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘ঋণখেলাপি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে জটিল সমস্যা। এত দিন এটা লুকানো হতো, এখন প্রকাশ পাচ্ছে। যে কোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম শর্ত হলো সমস্যা স্বীকার করা।

বর্তমান সরকার সেটাই করছে। আগের সরকারের অনেক প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতা দেশ ছেড়েছেন। তাদের অনাদায়ী ঋণ ও লুকিয়ে রাখা খেলাপিগুলো মিলেই এখন বড় অঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই খেলাপিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নেপালের মতো আমাদেরও উচিত ব্যাংক খেলাপিদের নাম প্রকাশ করে সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ করা।’

বর্তমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের সমান। এই ঋণ আদায় না হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিচ্ছে, সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি তৈরি করছে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

একজন সিনিয়র ব্যাংকারের ভাষায়, এখন ব্যাংক খাতে এক ধরনের ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ চলছে। বড় খেলাপিরা ঋণ ফেরত দিচ্ছে না, ফলে ব্যাংকের টাকা আটকে আছে। ব্যাংক নতুন ঋণ দিতে পারছে না, ফলে চলমান ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে। আবার ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় নতুন করে খেলাপি বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদুজ্জামান বলেন, ‘এই মুহূর্তে ব্যাংক খাতকে বাঁচাতে হলে কঠোরভাবে ঋণ আদায় শুরু করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় আর কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। খেলাপিদের সম্পদ জব্দ ও বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’

খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমত, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও সম্পদ জব্দের উদ্যোগ; দ্বিতীয়ত, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য নীতি সহায়তা প্রদান, যাতে তারা উৎপাদন সচল রেখে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন; তৃতীয়ত, দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ (মার্জার) প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে আগামী এক থেকে দুই প্রান্তিকের মধ্যেই ব্যাংক খাত কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে। তবে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে স্থায়ী সমাধান আসবে না।

18 ভিউ

Posted ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

SunMonTueWedThuFriSat
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com