রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কী জবাব দেবে রাষ্ট্র

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
264 ভিউ
কী জবাব দেবে রাষ্ট্র

কক্সবাংলা ডটকম(১১ ফেব্রুয়ারি) :: সৈয়দ মুজতবা আলী পানশিরের আবদুর রহমানের রান্নার বহর দেখে অধিক শোকে পাথর হয়েছিলেন। আর আমাদের মানু রানী পাথর হয়েছেন পাঁচ–পাঁচটা ছেলের লাশের সারি দেখে। মুজতবা আলীর ‘আনন্দের’ শোকের ঘটনা ঘটে আফগানিস্তানের রাজধানী ছোঁয়া খাজামোল্লা গ্রামে। আর আমাদের মানু রানীদের বেদনার গ্রাম বাংলাদেশের হাসিনাপাড়ায়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ৬৫ কিলোমিটার দূরে।

আবদুর রহমানদের বার্তা সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখনীতে কাবুল পেরিয়ে বিশ্ব অবধি পৌঁছালেও, আমাদের মানুদের বার্তা খোদ ‘রাজধানী’ অবধি পৌঁছায় না। নির্বিকার চিত্তে, আনন্দের নৃত্যে চলে রাষ্ট্রযন্ত্র। কোনো টুঁ শব্দটি নেই—এ যে নিত্যদিনের ঘটনা। সড়কের মড়ক এখন এখানকার সংস্কৃতিতে পদার্পণ করেছে। ঘর পোড়া, মন পোড়া মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বাড়ছে খুনখারাবি, পারিবারিক অসন্তোষ আর আত্মহত্যার মতো ঘটনা। এখানে শ্রমিকেরা মরে, কৃষকেরা ঝরে—কিন্তু কেউ কিচ্ছুটি করছে না।

কাবুলের বরফীয় জলে মুজতবা আলীদের মুখের অবয়ব রিলিফের মানচিত্রের মতো হওয়ার কথা জানা গেলেও আমাদের মানু রানীদের হৃদয়ের মানচিত্র কেউ জানার চেষ্টাও করি না। স্বামী সুরেশ চন্দ্রকে হারানোর ১০ দিনের মাথায় ৯ সন্তানের মধ্যে ৫ সন্তানকে হারিয়েছেন মানু রানী। দুই ছেলে এক মেয়েও আহত। এর মধ্যে এক ছেলেকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হয়েছে। এক মেয়ে সুস্থ থাকলেও আহত মেয়ের অবস্থা ভালো নয়। পা কেটে ফেলার মতো ঘটনারও আশঙ্কা করছেন স্বজনেরা। ৮ ফেব্রুয়ারির এ ঘটনা দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে মানু রানীর নিহত পাঁচ ছেলের ছবি।

শুধু মানু রানীরা নন, পুরো সোনার দেশটাই যেন শোকে পাথর হয়ে আছে। বিভিন্ন সময় দেশটা অল্প শোকে কাতরিয়েছে। এখন আর সে দমও নেই। যে দেশের মানুষ মুরগির বাচ্চার মৃত্যুতে ছটফট করত, সে দেশের মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে আজ এসব ঢোকে না। মানুষের হৃদয় বলতে যা ছিল সেটাও বিপর্যস্ত জনজীবন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর নিরাপত্তাহীনতার নানা আতঙ্কের মুখোমুখি। নিজের হৃদয় বাঁচাতে ব্যস্ত, মানুষ আর পড়শির খবর নেওয়ার জো কই?

সড়কে মৃত্যুমিছিলই বুঝিয়ে দেয়, রাষ্ট্রীয় সুশাসন কতটা জরুরি। আইন হয়তো কার্যকর হয় না, কার্যকর হলেও কোনো প্রভাব পড়ে না। আর প্রতিদিন মানু রানীদের সন্তানদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। আর আমরা গুনতে থাকব এক, দুই, তিন…। কখন এই নামতা গোনার দিন শেষ হবে?

দেশে ভূরি ভূরি পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল তো আছেই। আগামী দিনের পত্রিকায় কী কী খবর বেরোবে তার একটা ফর্দ পাঠকেরা আগে থেকেই করে দিতে পারে। বিশেষ ব্যক্তিবন্দনার পাশাপাশি পত্রিকাগুলোতে কোনো না–কোনো দুর্ঘটনার খবর যে প্রকাশ পাবে, তা সবার অনুমেয়। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা সবার থেকে এগিয়ে। অর্থাৎ আমরা মেনে নিয়েছি, এ ধরনের প্রাণহানির সংবাদ থাকবেই পত্রিকা বা টিভিতে।

দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত ও ৯ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছেন বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংগ্রহ করা তথ্যে উঠে এসেছে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল। নয়তো হলফ করে বলা যায়, এর সংখ্যা আরও বাড়ত। এরপরও এ সংখ্যা আগের বছরের পরিসংখ্যানকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রকৃত সংখ্যা জানতে পারলে এ সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা। কারণ সাধারণত এমন প্রতিষ্ঠানগুলো এসব তথ্য নিয়ে থাকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে। সংগঠনটির হিসাবমতে, এর বাইরে গত বছর রেলপথে ৩৯৬ জন নিহত, ১৩৪ জন আহত হন। নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত ও ৫৭৮ জন আহত হন, নিখোঁজ হন ৫৪৪ জন। ২০২০ সালে সড়কের এ চিত্র ছিল ৬ হাজার ৬৮৬ জনের প্রাণহানি আর ৮ হাজার ৬০০ জনের আহত হওয়া। এ ছাড়া সে সময় রেলপথে ৩১৮ ও নৌ দুর্ঘটনায় ৩১৩ জন নিহত হন। চলতি ২০২২ সালে এই মড়ক ‘ক্রমাগত বাড়ছেই’।

সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে, মানু রানীর সন্তানদের দ্বিতীয়বারের মতো চাপা দিয়ে মেরেছে পিকআপ ভ্যানটি। বেঁচে ফেরা আরেক মেয়ে মুন্নী সুশীল (২৩) সেটিই জানিয়েছেন। তাঁর তথ্যের সূত্র ধরে পরিবার এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করছে। আর এলাকাবাসীর ভাষ্য, তাঁদের সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। এর মধ্যে কেউ কেউ এর সঙ্গে ভূত দেখার বিষয় সামনে নিয়ে আসছেন। তাঁদের ধারণা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অংশ নিতে তাঁর সন্তানেরা মন্দিরে গিয়েছিলেন ধর্মীয় আচার সারতে। বিশেষ করে ছেলেদের সবার গায়ে ছিল অশৌচকালীন সাদা কাপড়ের উত্তরীয়। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে চালক তাঁদের ভূত ভেবেছিলেন। এ কথা খুবই ভয়ংকর। এটা অপরাধীকে পার পেয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। চালকের ভুলও যদি হয়ে থাকে, দ্বিতীয়বার চাপা দিতে নিশ্চয়ই তিনি ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃতভাবে পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে যে সড়কে চালকেরা কাউকে আহত করে রেখে যান না, মেরে ফেলেন। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এর ব্যাখ্যা কী? বেঁচে থাকলে বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। যেমনটা দিতে হয়েছে গ্রিন লাইনের বাসে এক পা হারানো রাসেল সরকারকে। নাকি সাক্ষী গায়েবসহ গাড়ির মালিকদের অন্য কোনো অলিখিত নিয়ম রয়েছে?

এত বড় শোক কখনো কি লাঘব হওয়া সম্ভব? সেই শোক নিয়েই হয়তো জীবনের বাকি দিন পার করতে হবে মানু রানীকে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারানো তাঁর পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যৎ কি হবে, তা কি দিন দশেক পর আমাদের কারও মনে থাকবে? আমরাই তো বলে থাকি, ‘আজ মরলে কাল দুই দিন’। আর যাঁরা আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে জীবন কাটান, তাঁদের কথা ভাবারও কে আছে এ দেশে।

সড়কে মৃত্যুমিছিলই বুঝিয়ে দেয়, রাষ্ট্রীয় সুশাসন কতটা জরুরি। আইন হয়তো কার্যকর হয় না, কার্যকর হলেও কোনো প্রভাব পড়ে না। আর প্রতিদিন মানু রানীদের সন্তানদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। আর আমরা গুনতে থাকব এক, দুই, তিন…। কখন এই নামতা গোনার দিন শেষ হবে?

    মো. ছানাউল্লাহ,প্রথম আলোর সহসম্পাদক

264 ভিউ

Posted ১১:৫৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com