রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ও আমাদের নতুন উপলব্ধি

বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১
470 ভিউ
নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ও আমাদের নতুন উপলব্ধি

শ্যামল দত্ত :: ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায় গত রবিবার ঢাকা ডেটলাইনে লিখেছেন ‘পড়শী মুলুকে মতুয়া তীর্থে ঢু মেরে কৌশলে সীমান্তের ওপারের আবেগের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।’ ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষণে এটাও হয়তো একটা দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু বাংলাদেশ তো দেখবে তার নিজের আয়না দিয়ে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে দুদেশের নানা মহলে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হবে, সেটাও স্বাভাবিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সশরীরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, যারা আসতে পারেননি, তারা এই ঐতিহাসিক দিনকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। ৪১ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্যে ৫০ বছরের বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা উঠে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

সবকিছু ছাপিয়ে উদযাপনের সমাপনী দিনে যিনি আলো ছড়িয়েছেন, তিনি হচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার বক্তব্য ছিল অত্যন্ত জোরালো, আবেগপূর্ণ, মেধা ও মননের উপস্থাপনায় সমৃদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ রক্তের প্রবাহ স্রোতের প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করে রাখা এই বক্তব্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ওপর সফলতার সঙ্গে মসৃণতা আনার চেষ্টা করেছেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ করে জেলে যাওয়া একসময়কার তরুণ রাজনৈতিক নেতা নরেন্দ্র দামোদর মোদি।

বিষয়টি যখন মুক্তিযুদ্ধ, বিষয়টি যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, তখন বাংলাদেশের পাশে ভারতের সমান মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দ্বিতীয় কোনো দেশ তো নেই। বাংলাদেশের এখন অনেক নতুন মিত্র আছে, নতুন বন্ধুও আছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইস্যুতে ভারতের সমান আর কারো ভূমিকা রাখার সুযোগ তো নেই।

ভারতের মাটিতে প্রাণ হারিয়েছেন সে দেশে আশ্রয়গ্রহণকারী লাখো বাংলাদেশি শরণার্থী। আর বাংলাদেশের মুক্তির জন্য এ দেশের মাটিতে প্রাণ দিয়েছে হাজারো ভারতীয় সেনা। রক্তের বন্ধনের ইতিহাস তো লেখা যায় না, তৈরি করাও যায় না। ইতিহাস রচিত হয় ইতিহাসের ঘটনা পরম্পরায়। ভারতের বিভিন্ন ইস্যুতে নানা মত থাকতে পারে, নানা বিশ্লেষণও থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভারত এবং সে সময়কার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, এমনকি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করবে বাঙালি জাতি। ইতিহাসের এই পাতাগুলোতো সোনার অক্ষরে লেখা।

তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে আসবেন তার গুরুত্ব হবে ভিন্ন। কয়টা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো, কী কী দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেল- তার চেয়ে এই সফরের মাত্রা এবং গুরুত্ব অপরিসীম অন্য কারণে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দলীয় পরিচয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি বিজেপির হন বা কংগ্রেসের হন বা অন্য কোনো দলের। বাংলাদেশে যখন আসেন তখন তিনি ভারতের প্রতিনিধি। তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতকে, কোনো দলকে নয়। তিস্তার পানি বণ্টন ঝুলে থাকতে পারে, সীমান্ত হত্যার দগদগে ঘা দুদেশের সম্পর্কে উত্তেজনা আরো উসকে দিতে পারে; কিন্তু অমীমাংসিত নানা বিষয়ের ক্ষেত্রে আলোচনা অব্যাহত রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নামই হচ্ছে সৌহার্দ্য, এর নামই হচ্ছে বোঝাপড়া। বোঝাপড়ার জায়গা ঠিক কতখানি মজবুত তা দেখা গেল এবারের সফরে।

এই সফরের মধ্য দিয়ে আরো অনেক অন্তর্নিহিত সত্য উঠে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে যখন সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির বক্তব্য রাখছেন, তখন রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের সামনে মোদির সফরের বিরোধিতা করে লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ছে একটি ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে পুরো বাংলাদেশ যখন উৎসবমুখর, তখন থানা আক্রমণ হচ্ছে, রেললাইন পুড়ছে, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হচ্ছে, ভূমি অফিস আক্রমণ হচ্ছে। মোদির সফরের বিরোধিতা করে স্বাধীনতাবিরোধী একটি সুযোগ-সন্ধানী একাত্তরের পুরনো চেহারায় আবার আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অন্তরাত্মায় এখনো যে সংকট রয়ে গেছে সেটা বোঝা গেল এই সহিংসতার মাত্রা দেখে।

স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ- এগুলো এদের কাছে কোনো বড় বিষয় নয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ঘাতকচক্র পুরনো খোলস ভেঙে বেরিয়ে এসেছে আসল চেহারায়। তাদের সহিংসতার চেহারা দেখে মনে হলো, যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল, ৫০ বছর উদযাপনের সময় তার অভাব বড় বেশি উপলব্ধি করতে পারছি। মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার সেই জায়গাটি আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। মোদির সফরের বিরোধিতায় উগ্র ডানপন্থি মৌলবাদী ও বামপন্থিদের যে অভূতপূর্ব মিল, সেটাও নতুন করে আবার দেখিয়ে দিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল ডানপন্থি ও বামপন্থি- উভয় গোষ্ঠী। প্রকাশ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী শক্তি ছিল এই দুই পক্ষ। মোদির সফরের বিরোধিতায় দেখা গেল তাদের সেই ঐক্য এখনো অটুট আছে।

হেফাজতের মোদিবিরোধী মিছিলে পুলিশের অভিযানের প্রতিবাদে নেমেছে বামপন্থি দল। মোদির সফরের বিরোধিতায় আমরা আরো দেখলাম, একটি মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার গণতান্ত্রিক ও সামাজিক-সম্প্রীতির দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় সমাজের ভেতর লুকিয়ে থাকা অপশক্তিগুলো এখনো কতখানি তৎপর। মোদির সফর থেকে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা এই বাস্তব চিত্র- এটাও কম পাওয়া নয়।

অনেকেই মনে করেন, বিষধর সাপকে পোষ মানিয়ে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সুযোগ পেলেই সেই সাপ ছোবল মারবে। হেফাজতের সঙ্গে আপস বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সরকারি দলের নেতারা এখন লজ্জায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করেছে এই ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি। এখন সরকারকে টেনে-হিঁচড়ে নামানোর হুমকিও আসছে অরাজনৈতিক বলে দাবিদার হেফাজতের নেতাদের মুখ থেকে। নেপথ্যে কলকাঠি কারা নাড়ছে, তা আর বলার প্রয়োজন বোধহয় নেই। যারা এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর নেতাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করানোর জন্য গণভবন পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন, দফায় দফায় মিটিং করেছেন হেফাজতের আস্তানা হাটহাজারী মাদ্রাসায়, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দেয়া হয়েছে হেফাজত নেতাদের, তাদের মুখে এখন তালা মারা। মোদির সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের এই দিকটি যেমন উঠে এসেছে, তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শত্রু-মিত্রের চেহারা বদল হলেও চেনা বন্ধু যে অচেনা মিত্রের চাইতেও সে অনেক বিশ্বাসযোগ্য, সেই পুরনো প্রবাদটি আবার শক্ত হয়ে উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির এই সফরের ওপর গভীর নজরদারি ছিল চীন ও পাকিস্তানের। সাম্প্রতিক সময়ে চীন পাকিস্তানি ইস্যুতে বেশ কিছু রাজনৈতিক ঘটনাবলি সেরকম বাস্তবতার ইঙ্গিতও দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ইতিহাসে পাকিস্তান ও চীনের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গণহত্যায় পাকিস্তানের ভূমিকা এবং তার সমর্থনে চীন ১৯৭১ সালে যে ভূমিকা পালন করেছে, ২৬ মার্চে দাঁড়িয়ে তারা তো তা অস্বীকার করতে পারছে না।

শেষ করতে চাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মুক্তি বাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা লাভ করা যেমন কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা করা তেমনি কঠিন।’ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্বাধীনতার প্রকৃত মর্যাদা রক্ষা করার কঠিন কাজটি শুরু করা বোধহয় খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

লেখক : সম্পাদক দৈনিক ভোরের কাগজ।

470 ভিউ

Posted ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com