কক্সবাংলা ডটকম(২ নভেম্বর) :: আগামী ৭ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্টেটে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কসহ সর্বত্র এখন নির্বাচনী আমেজ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে উদ্দীপনা। দিন দিন জোরদার মূলধারার রাজনীতির সাথে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততা।
এবার কাউন্সিলর পদে তিনজন বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীতার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও নিজ কমিউনিটির মধ্যে বিভাজনের কারণে দলীয় ককাসে তারা কেউই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারেননি।
তবে প্রাইমারিতে বাংলাদেশিরা এবার আশাতীত ফলাফল করেছে। ডেমোক্র্যাট দলের প্রাইমারিতে জয় না পেলেও মূল নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বাংলাদেশি মোহাম্মদ টি. রহমান।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের মতে, কমিউনিটি এক্যবদ্ধ থাকলে এবার একাধিক পদে বাংলাদেশিদের মূল নির্বাচনেই জয়ের সম্ভাবনা ছিল। এদিকে, নির্বাচনে বাংলাদেশি ভোটারদের সম্পৃক্ততা বাড়ার কারণে কর্তৃপক্ষ বাংলায় ভোটার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। দিন দিন মূল ধারার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশিরা।
আগামী ৭ নভেম্বরের নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বর্তমান মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির নিকোল ম্যালিওটাকিস। তবে নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি হওয়ায় এখানে মেয়র পদে আবারও বিল ডি ব্লাজিও’র জয়ের সম্ভাবনাই প্রবল।
এছাড়াও পাবলিক এডভোকেট, সিটি কম্পট্রোলার, বোরো প্রেসিডেন্ট, সিটি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার সিটি কাউন্সিলর পদে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে মোহাম্মদ টি. রহমান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
নির্বাচনী ব্যালট পেপারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম থাকার পাশাপাশি আরও তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন নিউইয়র্কের ভোটাররা। এগুলো হলোÑ সংবিধান সংশোধন, বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন।
কমিউনিটি বোর্ড-৮ এর সদস্য মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ তুহিন আজকাল’কে জানান, কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন ইস্যুটি গত ২০ বছর পর পর প্রপোজাল হিসেবে উপস্থাপিত হয়। নিউইয়র্কবাসী এতোদিন এই ইস্যুটিতে ‘নো’ ভোট দিয়ে এসেছে। কারণ বর্তমানে সংবিধানে নিউইয়র্কবাসীর অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে বলে মনে করা হয়। এই প্রপোজালে এবারও সবাইকে ‘নো’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মোহাম্মদ তুহিন।
মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিউইয়র্কে অফিসে-দফতরে ‘বাংলা’ ভাষার প্রচলনও বাড়ছে। দেড় দশক সময়েরও বেশি আগে বাংলা প্রচলন শুরু হয়েছিল শিক্ষা বিভাগ দিয়ে। ক্রমে ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়েছে নিউইয়র্কের অন্যান্য সরকারি অফিস ও বিভিন্ন দফতরে। এ সবখানেই গুরুত্বের সাথে স্থান করে নিয়েছে ভাষা বাংলা।
অনেকদিন ধরেই সিটির বেশ কিছু হাসপাতালে, বিশেষ করে বাংলাভাষী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাংলার ব্যবহার চালু হয়েছে। প্রবেশপথে লেখা হয়েছে ‘স্বাগতম’। রিসেপশন কাউন্টারে লেখা হয়েছে ‘অভ্যর্থনা’। অন্যান্য নির্দেশাবলীও বাংলায় লেখা।
শুধু বাহ্যিকভাবেই নয়, বিভিন্ন অফিস ও নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন দফতরে বাংলাভাষীদের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ইন্টারপ্রিটেশন ব্যবস্থায়। এই ব্যবস্থায় অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি এখন পাওয়া যাচ্ছে বাংলা দোভাষী। ইংরেজি বলতে অক্ষম বা ইংরেজিতে স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন বাংলাভাষীদের জন্য কাজ করছেন এই দোভাষীরা। তারা বাংলা থেকে ইংরেজিতে এবং ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তর করে দিচ্ছেন। এই ভাষান্তরের কাজগুলো হচ্ছে ত্রিমুখী টেলিফোনের মাধ্যমে। এক প্রান্ত থেকে দোভাষী ইংরেজি-বাংলা কথোপকথন ভাষান্তর করে দিচ্ছেন।
অন্যান্য আরো কিছু ভাষার পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজে সরকারিভাবে বাংলার প্রচলন প্রথম করেছিল সিটির শিক্ষা বিভাগ। তাদের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলে বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাধিক্যের দিকে লক্ষ্য রেখে গৃহীত হয়েছিল তাদের এই উদ্যোগ।
২০০১ সালে তাদের তৈরি সিটির স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রথম সংযোজিত হয়েছিল বাংলা ভাষা। প্রামাণ্যচিত্রের প্রারম্ভেই অন্য ভাষার সাথে সাথে একজন বাংলাদেশি শিক্ষিকাকে দিয়ে বলানো হয়েছিল বাংলা শব্দ ‘স্বাগতম’।
শিক্ষা বিভাগের পথ ধরে সিটির অন্যান্য দফতরও এগিয়ে এসেছে এই উদোগে। প্রথম প্রথম কিছু ভুল শব্দ, ভুল বানান বা ভুল প্রয়োগের ব্যাপার ঘটলেও এগিয়ে চলার সাথে সাথে এসব ভুল দূর হয়ে যাচ্ছে। এখন নির্ভুল ও চমৎকার ভাষায় এবং সুন্দর হরফে বাংলা বিজ্ঞপ্তি, ঘোষণা ইত্যাদি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমলেস সার্ভিসের বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তিতে বেশ শুদ্ধ ভাষায় বাংলার প্রয়োগ হচ্ছে।
তাদের বিজ্ঞপ্তির ১১টি ভাষার মধ্যে বাংলা একটি। তাদের একটি বিজ্ঞপ্তির বাংলা এ রকম, ‘আপনি কি বাংলায় কথা বলেন? অনুগ্রহ করে বসুন। আমি আপনার জন্য একজন দোভাষী ডাকবো’। শুদ্ধ বানানে সুন্দর ভাষায় লেখা বিজ্ঞপ্তিটি প্রশংসনীয়।
এছাড়া সম্প্রতি ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভেহিকেলস-ডিএমভি ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষাও বাংলায় দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ব্যালট পেপারও থাকছে বাংলা।
Posted ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta