তারাপদ আচার্য্য(১৯ মে) :: তখন সন্ধ্যা,মেয়েকে বললাম মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখতে,যাতে রাত একটায় খুব সহজে উটতে পারি। ঘুম থেকে যতাসময়ে উঠলাম ,পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হলাম। তারপর নিজের ঘরে ধ্যানে বসলাম।দেখা হলো ঠাকুরমার সাথে , দেখা হলো স্বর্গীয় পিতা -মাতা-জ্যাঠামশাই জেঠিমা আর গুরুদেবের সাথে।ধ্যান করতে করতে দুইটায় উঠলাম। স্ত্রীকে বললাম,চা দাও । চা পান করতে করতে ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ২টা ১৪ মিনিট। গোটা দেশের কোটি কোটি চোখ তখন টিভির পর্দায় ।ঠিক তখনই স্বপ্ন হলো সত্যি!
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি সেন্টারের লন্ঞিং প্যাড থেকে তীব্র বেগে মহাকাশে ছুটল বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘ বঙ্গবন্ধু -১’। এই দৃশ্য দেখে পরম তৃপ্তি পেলাম। আনন্দে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল । ১০ বছর আগে মনে হয়নি এমন মাহেন্দ্রক্ষণ আসবে আমাদের জাতীয় জীবনে । আমরা মহাকাশে জায়গা করে নেবো।
দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১’ মহাকাশের ডানা মেলার এই মাহেন্দ্রক্ষণ দেখার জন্য গত কয়েক দিন ধরেই উৎসুক দেশের মানুস , উৎসুক প্রবাসী বাংলাদেশীরা। অপূর্ব এই দৃশ্যটি একনজর দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে যেমন প্রবাসী বাংলাদেশীরা আগে থেকে ফ্লোরিডায় অবস্থান করছিলেন। তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে গেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা । এই দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে মিলন মেলায় পরিণত হয়। এ যেন আরেক বাংলাদেশ হয়ে উঠলো ফ্লোরিডা।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ফ্যালকন -৯ ব্লক-৫ রকেটে চেপে আকাশে উড়াল দেয় সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইট । রকেটটি মহাকাশে বাংলাদেশের ভাড়া নেওয়া অরবিটার ১১৯.৯ ডিগ্রিতে নিয়ে যায় স্যাটেলাইটটিকে। উৎক্ষেপণের পর দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েচেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ’স্লোগান এখন সারাবিশ্বের আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচেছ ।যেখানে মানুষ পৌঁছাতে পারেনা , যা অসীম মহাশূন্য সেখানেও পৌঁছে যাবে বঙ্গবন্ধুর নাম এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ।
কারণ ্একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঞ্জীবণী স্লোগান বুকে, শরীরে ধারণ করেই মহাকাশে উড়াল দিয়েছে আমাদের গর্ব, স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে যাওয়ায় নিজস্ব
স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আত্নপ্রকাশ ঘটবে। এছাড়া এই স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেমন নির্ভরতা কমবে অন্য দেশের ওপর ,তেমনি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল , ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান , ভি -স্যাট সংস্থা বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ খাতে ব্যয় করছে বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কারণে বিপুল অর্থ দেশেই থেকেই যাবে।
প্রত্যাশা এভাবেই অনাগত দিনে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথা , আর বিষ্ময়কর উথ্থান , অগ্রগতির গল্প রচিত হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের জনগনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে অবিস্মরনীয় এক অর্জন হলো বাংলাদেশের । বহু আগেই বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেরের স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার মহাকাশেও লাল সবুজের গৌরবগাঁথা দেখল বিশ্ব।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে গণমাধ্যমে।প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কিংবা বিরোধিতার কারনে সমালোচনা যাই করুক না কেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে যেমন স্থান করে নিয়েছে, তেমনি দেশের প্রযুক্তি খাত এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল -সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর েইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু -১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রাম ও রয়েছে। উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক সভায় ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার ‘ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ’ প্রকল্প অনুমোদন পায়।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবির থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ । এ ছাড়া বিডার্স ফাইন্যান্সিং -এর মাধ্যমে এ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এখানে বিশেষভাবে উল্ল্যেখ , তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে অদ্যায়ের সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমান। তাঁর সুদুর প্রসারী ভাবনা থেকে ১৯৭২ সালে, বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ স্থাপনের মাধ্যমে। সেই উপগ্রহই ছিল মহাকাশের সঙ্গে দেশের যোগাযোগের প্রথম সেতুবন্ধ। তখন বিদেশি স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বা
ভাস সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া ছির সেই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের কাজ। জাতির পিতা সেদিন স্বপ্নের যে বীজ বুনেছিলেন , তার পথ ধরেই আজ আকাশে উড়ছে দেশের প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট । এর নামও জাতির পিতার নামেই, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা , প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সার্ব
ক্ষনিক তত্ত্বাবধান এবং দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ এখন গৌরবময় বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে। যেখানে মানুষ পৌঁছাতে পারেনা , যা অসীম মহাশূন্য সেখানেও পৌঁছে গেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নাম । এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট এক সাফল্যগাঁথা।
লেখকঃ বাংলাদেশের বিশিষ্ট আয়কর উপদেষ্টা ,ধর্মীয় গ্রন্থের প্রণেতা ও সমাজ সেবক। অনুলিপি : পপি মিত্র