কক্সবাংলা ডটকম(২ আগস্ট) :: আগস্ট মাস এলেই আমার চিন্তা এলোমেলো হয়ে যায়। কিছুতেই গুছিয়ে কিছু বলে উঠতে পারি না। তবে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হয়ে খন্দকার মোস্তাক যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তার কয়েকটি কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। সে কথাগুলো ছিল এরকম— “সকলেই এই শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছিল। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন চাইছিল। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন সম্ভব ছিল না বলেই সরকার পরিবর্তনে সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়। ঐতিহাসিক প্রয়োজনে সেনাবাহিনী জনগণের জন্য সুযোগের স্বর্ণোদ্বার খুলে দিয়েছে”।
আমরা সকলেই সেদিন বুঝে নিয়েছিলাম যে জনগণের জন্য নয়, সুযোগের স্বর্ণোদ্বার খুলে গিয়েছে মোস্তাকের মতো পাকিস্তান প্রেমিকদের জন্য। বুঝে ফেলেছিলাম যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নাটকে এই নতুন অংকে নিহত পাকিস্তানের ভোটই মঞ্চ দখল করে রাখবে।
তবে খন্দকার মোস্তাক বা আর কোনো ব্যক্তি নয়, সাম্রাজ্যবাদের মদদেই যে বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছিলেন এখন তো সকলেরই কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। তাই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থানের দৃঢ় থেকেই আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত উত্তরাধিকার বহনে সক্ষম হব। একথাও না বুঝার কোনো কারণ নেই।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারে তাজউদ্দিনসহ যারা সোচ্চার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছিলেন, তারা প্রায় কেউই সে সরকারে থাকতে পারেননি। যারা টিকেছিলেন, সাম্রাজ্যবাদের দালালদের প্রবল দৌরাত্ম্যে তারাও ছিলেন কুনটাসা। এরকম পরিস্থিতিটি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রতিকূল হলেও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী তথা মনে-প্রাণে পাকিস্তান পন্থিদের জন্য হয়ে উঠে একান্ত অনুকূল। সেই অনুকূল পরিস্থিতিই পুরোপুরি সুযোগ তারা গ্রহণ করে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর আনুকূল্য তারা পুরোপুরিই পেয়ে যায়।
স্বাধীন বাংলাদেশে আইএসআই-এর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমরা অবশ্যই অবহিত এবং সচেতন। সময়ে-অসময়ে সেই অবহিতি ও সচেতনতার সোচ্ছার প্রকাশও আমরা ঘটাই। কিন্তু আইএসএস যে একটা শিখণ্ডি মাত্র পাকিস্তানের এই গোয়েন্দা সংস্থাকে সামনে রেখে মার্কিন সিআই-এর ষড়যন্ত্রই যে সর্বদা ক্রিয়াশীল দেশ সেই আসল সত্যটি সম্পর্কে আমরা কি সচেতন? মেজর ডালিম কিংবা খন্দকার মোস্তাক ও তার সহযোগীবৃন্দ এবং আরো অনেকের বিরুদ্ধে সঠিকভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী রূপে অভিযোগের আঙ্গুল তুলা হয় বটে কিন্তু সেই সঙ্গে সেই হত্যাকাণ্ডে আসল হোতা সিআইওকে আড়াল করে রাখার প্রয়াস বঙ্গবঙ্গুর অনুসারী বলে আত্ম বিজ্ঞাপন প্রচারকারী অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এরা সবাই সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী এমন কথা আমি বলি না।
বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকা অবস্থাতেই তাকে অপঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন যারা, তারা সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা শুনেছি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মনি সিংহ এবং ন্যাপ নেতা মোজাফফরও বঙ্গবন্ধুকে তাদের আশংকা ও উদ্যোগের কথা জানিয়ে তাকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাদের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরকমই উড়িয়ে দিয়েছিলেন বৈদেশিক উত্স থেকে প্রাপ্ত সতর্কবাণীও। তার কথা ছিল বাংলাদেশের সকল মানুষ তাকে এতো ভালোবাসে যে তাদের দিক থেকে তার কোনো বিপদ আসার কথা কল্পনাও করা যায় না।
[লেখক-যতীন সরকার : প্রাবন্ধিক ও বুদ্ধিজীবী]
Posted ১:২১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০২ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta