শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশের নির্বাচনে চীন-ভারতের স্বার্থ কি ?

বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৮
438 ভিউ
বাংলাদেশের নির্বাচনে চীন-ভারতের স্বার্থ কি ?

কক্সবাংলা ডটকম(১৯ এপ্রিল) :: বাংলাদেশের নির্বাচনে চীন ও ভারতের কোন স্বার্থ রয়েছে কি না, সেই ভাবনা খানিকটা অস্বাভাবিকই বটে যেখানে বাংলাদেশের তেমন কোন কৌশলগত মূল্যই নেই। তবে, অনিচ্ছায় হলেও বাংলাদেশ আঞ্চলিক ‘গ্রেট গেমের’ মধ্যে দাবার গুটি হতে চলেছে।

এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ভারতের অবস্থানের অবনতির কারণে বিশেষ করে যে জায়গাগুলো ভারতের চিরাচরিত বিচরণ ক্ষেত্র ছিল, সেটা একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কটেও দেখা গেছে বাস্তবতা কতটা কঠিন যেখানে গতানুগতিক ক্ষমতাধরদের সাথে সম্পর্কও সবসময় কাজে লাগে না।

ভারত ও চীনের মধ্যে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা এবং বাংলাদেশের মতো কোমল দেশগুলোর ক্ষমতাহীনতা একটা কঠিন বাস্তবতা। যৌক্তিকভাবে, কোন হিসাবেই বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এত গুরুত্বের সাথে আসবে না। কিন্তু সিনো-ভারত অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চীনের কৌশল ও ভারতের স্বার্থ

ভারত আর চীনের দ্বন্দ্ব এত সহজ নয়। বাণিজ্যে তারা একে অন্যের সহযোগী কিন্তু কৌশলগত সম্পর্কের জায়গায় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র। চীন বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত একক মাতব্বরি বন্ধ করে দিয়েছে এবং ছোট দেশগুলোর জন্য এখন দুটো শক্তির মধ্যে একটিকে বা উভয়কে বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। একটি দেশের একক প্রভুত্বের দিন ফুরিয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়া এখন আর ভারতের একচেটিয়া রাজত্বের জায়গা নয়, এখানে এখন ইন্দো-চীন উভয়েরই অংশীদারিত্ব রয়েছে।

যে দেশের ব্যাপারে ধারণা করা যায়, সেই পাকিস্তানের মতো সীমিত সক্ষমতার দেশের সাথে বরাবর টক্কর দিয়ে এসেছে ভারত। কিন্তু চীনের সাথে সেটা অত সহজ নয় কারণ তারা দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যতক্ষণে সিগন্যাল পড়তে পেরেছে ভারত, চীন ততদিনে কবুতরের খাবারের মতো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ছড়িয়েছে চারিদিকে এবং ছোটখাট দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো লোভি হয়ে উঠেছে আর এ অঞ্চলে আরেকটি বড় খেলোয়াড়কে পেয়ে খুশি হয়ে উঠেছে। গতানুগতিক এই চিত্রটি হয়তো ভারত মেনে নিয়েছে কিন্তু এখন তার চারপাশে আধা শত্রুসুলভ প্রতিবেশী গড়ে উঠেছে।

নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে ভারতের আধিপত্যের দিন চলে গেছে। পাকিস্তান কোনদিনই এই আধিপত্যের মধ্যে ছিল না আর ভুটান চীনের এতটাই কাছে যে সেটা নিয়ে না ভাবলেও চলে। আফগানিস্তান কোনদিনও কারও অধীনে যায়নি। বাকি থাকে শুধু বাংলাদেশ যেটা এখনও ভারতের সাথে রয়েছে যদিও চীনের সাথে তার দৃষ্টি বিনিময় শুরু হয়ে গেছে। ভারত চারদিক থেকে ঠিক আটকা পড়েনি এরপরও বাংলাদেশ যদি লাল পতাকায় নিজেকে জড়াতে শুরু করে, ভারত হয়তো নিজেকে অসহায় ভাবতে শুরু করবে।

বাণিজ্য ও রাজনৈতিক ইস্যু ছাড়াও বাংলাদেশ সেই দেশ যার মধ্য দিয়ে স্পর্শকাতর উত্তর পূর্বাঞ্চলে ট্রানজিটের প্রসঙ্গ রয়ে গেছে। ভুটানের দোকলাম একটি বিষয় কিন্তু চীন আসলে ‘চিকেন নেকের’ দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অন্যান্য দেশের দেয়ার মতো কোন সীমান্ত নেই। সাম্প্রতিক অস্থিরতার পর মালদ্বীপ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কূটনীতিকভাবে ভারতের ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ যে দেশের সাথে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত রয়েছে, তার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। এটা বাংলাদেশ নিজে তৈরি করেনি বরং আরও বৃহৎ সিনো-ভারত সঙ্ঘাতের উপজাত হিসেবে এটা ঘটেছে।

বাংলাদেশের নির্বাচন এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা

অনেকেই মনে করেন আওয়ামী লীগ ভারতপন্থী এবং তাদের মধ্যে যে সম্ভাব্য সব ধরনের যোগাযোগ রয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়া পুরোপুরি বন্ধ করেছে, যে কারণে ভারত শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। বিএনপি তাদের শাসনামলে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপদ সুযোগ দিয়েছে। জানা যায়, ভারতীয়দের এখন ঢাকায় যথেষ্ট হাঁটা-চলার সুযোগ হয়েছে এবং বিদ্রোহীদের প্রচেষ্টা ঠেকানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আইএসআইকে ম্যানেজ করা এবং চীনাদের উপর নজর রাখাটাও সুবিধা হয়ে গেছে।

চীনও ব্যাপারটা জানে। কিন্তু দিল্লীর চেয়ে তাদের উদ্বেগ কম কারণ ঢাকায় তাদের স্বার্থ কম যেটা ভারতের সবচেয়ে ভাল এবং একমাত্র নিরাপদ মিত্র। কিন্তু চীন শুধু অর্থ সহায়তায় দিতে পারবে ঢাকাকে যেখানে ভারতের সাথে সম্পর্কটা রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। বাংলাদেশের আমলা শ্রেণীর সাথেও ভারতের গভীর যোগাযোগ রয়েছে যেটার উপর আওয়ামী লীগ সরকার রাজনীতিবিদদের চেয়েও বেশি নির্ভরশীল। তাই ভারতের অবস্থানটি এখান যথেষ্টই মজবুত।

সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লড়াইয়ে চীনের নিলাম ছিল ভারতের চেয়ে পরিমাণে বড় এবং অর্থ লবি চীনকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রেগুলেটরদের হস্তক্ষেপে সেটা উল্টে যায়। এতে বোঝা যায় ভারতের অবস্থান এখানে কতটা শক্ত। এছাড়া, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বের করে দেয়ার সিদ্ধান্তে সমর্থন দেয়ায় এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অর্থহীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে মধ্যস্থতা করার কারণে বাংলাদেশে চীনের স্টকের অবস্থান পড়ে গেছে।

তবে, অবকাঠামো এবং নির্মাণ বিষয়ক খাতে উচ্চ বিনিয়োগ এবং দ্রুত প্রাপ্তির মাধ্যমে ব্যবসায়ী লবির সাথে চীনের যে স্বার্থ জড়িয়ে আছে, সেটা বাংলাদেশের স্বল্পকালিন ক্ষমতাসীন ব্যবসায়ী শ্রেণীর মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, পরিবেশগতভাবে বিতর্কিত রামপাল প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের কারণে তারা মানুষের নেতিবাচক ধারণার মধ্যে রয়েছে। তবে, ভারতের এখানে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং সরকারী খেলোয়াড়রা তাদের পক্ষে। তাই, দ্বন্দ্ব একটা শুরু হয়েছে।

সব ডিম এক ঝুড়িতে?

ভারতের বাংলাদেশকে প্রয়োজন, এখানকার নির্দিষ্ট কোন দলকে নয়। তার আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে-ই হোক তারা যদি ভারতমুখী হয়, তাহলেই তারা খুশি। স্পষ্টতই একটা দৃশ্যমান সুষ্ঠু নির্বাচন চায় ভারত, কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে যে অস্থিরতা ছড়াবে, সেটাকে ভয় পায় ভারত।

কিন্তু বিএনপিও ভারতে দূত পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের বিশ্বাস ভারতের সমর্থন হয়তো জয়ের ব্যাপারে পার্থক্য তৈরি করতে পারবে। আওয়ামী লীগ অন্যদিকে নির্বাচনী দৌড়ে যথেষ্টই এগিয়ে গেছে, যেখানে আদালত, মামলা আর নিষিদ্ধ ঘোষণার মধ্যেই আটকে আছে বিএনপি।

নির্বাচন না হলে কেউই জানতে পারবে না অন্য দলগুলো কতটা জনপ্রিয় বা অজনপ্রিয়। কিন্তু গুঞ্জন থেকে যেটা মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তাই ২০১৮ সালে নির্বাচনী এবং ভোটার ব্যাবস্থাপনাটা একটা বড় প্রশ্ন।

এমন কোন প্রমাণ নেই যে, ভারত তাদের সবগুলো ডিম একটা ঝুড়িতেই রাখতে চায়। এমনকি ১৯৭১ সালেও একদিকে তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মুজিবনগর সরকারকে সমর্থন দিয়েছে অন্যদিকে, ভারতীয় জেনারেলের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ মুজিব বাহিনীও গড়ে তুলেছিল যেখানে আওয়ামী লীগের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

নির্বাচনে বাংলাদেশীদের স্বার্থ আর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের স্বার্থ আলাদা। কিন্তু দুটোরই মাত্রা তীব্র। তাই আপাত অনুমেয় পরিস্থিতির মধ্যেও একটা উচ্চ মাত্রার সন্দেহ দানা বেঁধেছে।

(আফসান চৌধুরী)

438 ভিউ

Posted ৪:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com