কক্সবাংলা ডটকম(৩১ মে) :: ভারত সফর থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে ভারতীয় চিন্তাবিদদের মধ্যে। তিস্তা চুক্তি নিয় মোদির আশ্বাসের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, কারও ওপর তিনি ভরসা করেন না। আবার ভারত চিরকাল মনে রাখবে-এমন কথাও বলেছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের কাছ থেকে কখনও এই স্বরে এই ধরনের বক্তব্য আসেনি। এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে কী বলতে চেয়েছেন শেখ হাসিনা।
ভারতের গণমাধ্যম ওয়ান ইন্ডিয়া ও বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার বক্তব্য বিশ্লেষণ করেছেন দিল্লির থিংক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড এনালাইসিসের গবেষক স্ম্রুতি পাটনায়েক।
এই বিশ্লেষক মনে করেন, তিস্তা চুক্তি এখনও না হওয়ায় হতাশ শেখ হাসিনা। আর তার অসন্তোষ জানিয়ে দিয়েছেন এভাবেই।
বাংলাদেশ যা দিয়েছে ভারতের তা সারা জীবন মনে থাকবে-এই ধরনের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় শেখ হাসিনা ভারতের কাছে কৃতজ্ঞতা চেয়েছেন বলে মনে করছেন সে দেশের বিশ্লেষকরা।
গত ২৫ ও ২৬ মে পশ্চিমবঙ্গ সফরের প্রথম দিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক হয়েছে শেখ হাসিনার। দুই পক্ষ এই বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে কিছু প্রকাশ করেনি। কিন্তু কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার দাবি করেছে, মোদির কাছে প্রতিদান চেয়েছেন শেখ হাসিনা।
কী প্রতিদান চেয়েছেন, সংবাদ সম্মেনে এমন প্রশ্ন ছিল শেখ হাসিনার কাছে। জবাব আসে ঝাঁঝাল। বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে? আর কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম। দেয়ার অভ্যাস বেশি।’
‘আমরা ভারতকে যে দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে’- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয়ার কথা তুলে ধরেন।
‘প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি, আমরা শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা কোনো প্রতিদান চাই না।’
স্ম্রুতি পাটনায়েক মনে করেন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কটাকে দীর্ঘমেয়াদে দেখতে হবে। এখানে কোনো দেশের জেতার কিছু নেই। আর দুই দেশের সরকারকে বিষয়টি নিয়ে সেভাবেই ভাবতে হবে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনার জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, স্বীকার করেন পাটনায়েক। এর প্রভাব বাংলাদেশের উপরও থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
‘আমি এটা বলব না যে ভারত বেশি লাভ পেয়েছে আর বাংলাদেশ কম লাভ পেয়েছে। এভাবে কোন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হয় না।’
“বিষয়টা এ রকম নয় যে, ভারতের লাভ হলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে কিংবা বাংলাদেশের লাভ হলে ভারতের ক্ষতি হবে। বিষয়টিকে সেভাবে দেখার সুযোগ নেই। বর্তমানে দুদেশের সম্পর্ক যে অবস্থায় আছে সেটি ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ বা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক।”
আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষিত নীতি হলো নিজ ভূমিকে অন্য কোনো দেশের সন্ত্রাসীদের ব্যবহারের সুযোগ দেবে না। স্পষ্টতই এই নীতি ভারতের জন্য লাভজনক হয়েছে।
পাটনায়েক বলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা, যারা বাংলাদেশের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন তাদের ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে ভারতরে উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখন আগের তুলনায় অনেকটাই স্থিতিশীল।
এই ভারতীয় বিশ্লেষক বলেন, ‘শেখ হাসিনা বুঝাতে চেয়েছেন দেশের সম্পর্ক শুধু একটিমাত্র বিষয়ের উপর নির্ভর করে না। প্রতিটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কতগুলো দিক আছে। ভারতে স্থিতিশীলতা থাকলে বাংলাদেশেও স্থিতিশীলতা থাকবে।’
২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তার সরকার এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদেই হবে তিস্তা চুক্তি। কিন্তু এখনও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি।
শেখ হাসিনাকে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তিনি মোদির ঘোষণায় এখনও আস্থা রাখেন কি না। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমি কারও ওপর কোনো ভরসা করে চলি না। আমার দেশের পানির ব্যবস্থা আমার নিজের জন্য করতে হবে, সেটা আমি করে যাচ্ছি।’
এতদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, মোদির ঘোষণায় আস্থা আছে। এই প্রথম উল্টো কথা বললেন শেখ হাসিনা।
পাটনায়েক বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটি এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এনিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে হতাশা আছে। তবে তিস্তা ইস্যু বাদ দিলেও দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক অগ্রগতি হয়েছে।’
বর্তমান সরকারের আমলেই ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশ ১০ হাজার একর জমি বেশি পেয়েছে। জল সীমানাও চূড়ান্ত হয়েছে এই সরকারের মেয়াদেই।
আবার দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হয়ে থাকা সীমান্ত হত্যাও কমে এসেছে। চলতি বছর প্রথম পাঁচ মাসে সীমান্তে কোনো বাংলাদেশির প্রাণ যায়নি। এটি গত দুই দশকের মধ্যে বড় ধরনের অগ্রগতি।
সেই ২০০৯ সাল থেকে টানা বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনা। মাস কয়েক পর আরেকটি নির্বাচনের সামনে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। হ্যাট্রিক মেয়াদে বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে দেশসেবা করার ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এবং মানসিক-শারীরিকভাবে পূর্ণ সক্ষম শেখ হাসিনা।
সর্বশেষ ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে রাখা সাহসী ও বলিষ্ঠ বক্তব্যগুলো যেন শেখ হাসিনার এই আত্মবিশ্বাসের স্বাক্ষর বহন করছে।
জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শেখ হাসিনা এখনো দারুণ জীবনীশক্তির প্রদর্শন করে চলেছেন। রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির জটিল সব হিসাব মিলিয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায় ছাড়িয়ে নিজেকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সংকট ব্যবস্থাপনায় দারুণ সব সাফল্য দেখিয়ে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা তাই দেশের ইতিহাসের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এত কাজ করে, এত শ্রম দিয়ে, এত ঝুঁকি নিয়েও শেখ হাসিনাকে কোনোরকম ক্লান্ত বলে মনে হচ্ছে না।
শেখ হাসিনার দেহে যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত প্রবাহিত! সেদিন গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাচক্রে আমিও উপস্থিত ছিলাম। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হওয়ার সুবাদে দেশের আগ্রহী সব মানুষই এই প্রেস কনফারেন্স নিজেরাই তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী কথাগুলো শুনে দেশবাসী যেমন মুগ্ধ হয়েছেন, তেমনই কতিপয় মিডিয়া মুরুব্বির প্রশ্ন ও বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছেন!
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে কতখানি আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন, বাংলাদেশের বাঙালি হিসেবে কতখানি জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক সেটি এই সংবাদ সম্মেলনে ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনা তৈলমর্দন কতখানি অপছন্দ করেন সেটিও আমরা সেদিন প্রত্যক্ষ করলাম। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যার মতই কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। যে নোবেল শান্তি পুরস্কার মজলুম রোহিঙ্গাদের রক্তে রাঙ্গানো, যে শান্তির নোবেল মজলুম ফিলিস্তিনিদের রক্তে রঞ্জিত, সে নোবেল আমাদের শেখ হাসিনার লাগবে কেন? তাও আবার লবিস্ট নিয়োগ করে শেখ হাসিনার জন্য নোবেল আনতে হবে?
রোহিঙ্গা সংকট চলাকালীন নোবেল ইস্যু আলোচিত হলে একটা কলাম লিখে বলেছিলাম, ‘মজলুমের ভালোবাসার নোবেল পেয়ে গেছেন শেখ হাসিনা’।
সেদিন প্রেস কনফারেন্সে আমাদের মনের কথাগুলোই বলেছেন শেখ হাসিনা। একজন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রনায়ক এমনই হন। শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ঘুষ দিয়ে লবি করে প্রাপ্ত নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁর দরকার নেই। জনগণের ভালোবাসাই তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার। দেশের এক মুরুব্বি সাংবাদিক প্রশ্ন করার ছলে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, তাঁকে এখনো নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়নি! সাথে সাথে শেখ হাসিনার শক্ত জবাব।
যে নোবেল পুরস্কারে মানুষের রক্তের দাগ লেগে থাকে, যে নোবেল পুরস্কার আনতে কোটি কোটি ডলার মূল্যের লবিস্ট নিয়োগ করতে হয়, সে ‘শান্তির’ নোবেল তাঁর লাগবে না। বঙ্গবন্ধুই নোবেল পাননি, শেখ হাসিনা কীভাবে পাবেন? নোবেল শান্তি পুরস্কার শুধু তাঁদের জন্যই রাখা হয় যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু কখনো সাম্রাজ্যবাদের দালাল ছিলেন না। শেখ হাসিনাও বাবার মতই। তিনিও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছেন। একই সাথে জামাত, পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সবাই তাঁর শত্রু। সাম্রাজ্যবাদের শত্রু হয়ে তিনি কীভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবেন? সাম্রাজ্যবাদের বন্ধুরাই কেবল এই শান্তি পুরস্কার পেয়ে থাকেন।
দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার মেরুদণ্ড কতখানি শক্ত। তারই যেন একটু আভাস দিলেন সেদিনের প্রেস কনফারেন্সে। এক তরুণ সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়ে। খুবই সাহসী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী উত্তর দিলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বললেন, ভারতের কাছে কিছু চাইতে যাননি তিনি। তিস্তার পানিসহ অন্যান্য ন্যায্য অধিকার কীভাবে আদায় করতে হয় সেটি তিনি ভালো করেই জানেন। ভারতকে বরং বাংলাদেশ যা দিয়েছে, সেটি আজীবন ভারত মনে রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। বিদেশের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারে না বলে যারা মনে করেন এবং এমন ধারণা জিইয়ে রাখতে চান, তাদের দলে নন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বরং এটা করে দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল একটি রাষ্ট্র হতে পারে।
শেখ হাসিনা এটা করে দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশের প্রতি ভারতসহ অপরাপর বিশ্ব এখন সমীহ প্রদর্শন করে, বাংলাদেশ শুনলে সম্মান করে; এই নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করেছেন শেখ হাসিনা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্বাধীন করতে মহাসংগ্রামের ঘোষণা আর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলছেন জাতির পিতার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বড় হাতিয়ার বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু এর বড় প্রমাণ।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। বর্তমানে বাংলাদেশের ১০ম জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান এবং ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকার ৩২ নং বাড়িতে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের অংশ হিসেবে হত্যা করা হয়। দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সেসময় বিদেশে থাকায় হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পান। বাবার লাশও দেখতে দেয়া হয়নি দুই মেয়েকে। খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানের সরকার দীর্ঘ ৬ বছর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে দেশে ফিরতে দেয়নি। আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। অবশেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তারিখে নিজ দেশে ফিরেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর বাবা। বাংলাদেশের বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এনে দিয়ে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর পাকিস্তানের নেতৃত্বাধীন অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে জাতি ও রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে দেয়নি।
দেশে ফিরে শুধু শহীদ পিতার সন্তান হয়েই বেঁচে থাকেননি শেখ হাসিনা। একদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করেছেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জনের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। এ পর্যন্ত ২০ বার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন এবং নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা পরিচয়ের পাশাপাশি শেখ হাসিনা আজ পুরো বিশ্বে শীর্ষ ও আলোচিত নেতৃত্বের একজন। শেখ হাসিনার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব হয়ে উঠার উপাখ্যান আমাদের জানা। আমরা জানি ঠিকই, কিন্তু অনেকে মানতে চাই না। এই হীনমন্যতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনার মত সাহসী, দূরদর্শী, উদ্যমী, সৎ ও আন্তরিক নেতা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কেউ নেই।
হ্যাঁ, দেশে দুর্নীতি আছে, অব্যবস্থাপনা আছে। গণপরিবহনে নৈরাজ্য আছে, আছে বেকারত্ব। কিন্তু এগুলো তো অর্ধেক গ্লাসের গল্প। বাকি অর্ধেক গ্লাস যে সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করে চলেছে।
বিশ্বব্যাংকই বলছে যে, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১২ শতাংশ দারিদ্র হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। নানা সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতকেও পেছনে ফেলেছে। ব্যাংক রিজার্ভ রেকর্ড ভঙ্গ করেছে, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এত কিছুর পরেও আমাদের যত কষ্ট আছে তার জন্য তো আমরা নিজেরাও অনেকাংশে দায়ী। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা বিত্ত বৈভবের মালিক হন, আমাদের প্রকৌশলী-ঠিকাদাররা নিম্নমানের কাজ করে চুরি করেন, আমাদের প্রশাসকরাই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন। আমরা নিজেরাই তো একেকজন ভোগ-বিলাসপ্রিয়, বিত্তপ্রিয় স্বার্থপর পুঁজিবাদী। তাহলে সব দোষ একা কেন শেখ হাসিনার হবে?
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা একা যতটুকু পারেন, করে দেখাচ্ছেন। বাকিরাও নিজের দায়িত্বটুকু পালন করে দেখাক। শেখ হাসিনা আছেন বলেই এখনো আমরা সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখি, আশায় বুক বাঁধি। এই সাহসী ও উদ্যমী শেখ হাসিনাকে তাই বাংলাদেশের খুব দরকার।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Posted ৩:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta