শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে নতুন সমীকরণ

মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই ২০১৮
433 ভিউ
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে নতুন সমীকরণ

কক্সবাংলা ডটকম(২৪ জুলাই) :: নভেম্বর ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক সম্পন্ন হলো গত ১৬ জুলাই। যদিও এর আগে দুই নেতা বেশ কয়েকবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।

সর্বশেষ উত্তর মেরুর খুব কাছের দেশ ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে অনুষ্ঠিত হয় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক। আর বৈঠক-উত্তর দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যেতে পারে সেটি এই আলোচনার প্রাসঙ্গিক বিষয়। এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাম্প-পুতিন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ওয়াশিংটন-মস্কোর মধ্যে বিদ্যমান শীতলতা দূর হবে কি না?

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল-উত্তর বিশ্ব রাজনীতির গতিপথে এসেছে সুস্পষ্ট পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের পথ ধরে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। বিশেষ করে মাত্র কয়েক মাস আগে রুশ ডাবল এজেন্ট স্ক্রিপালকে কেন্দ্র করে ইঙ্গ- রুশ সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত প্রায় ৩৫ জন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার ও একটি রুশ কনস্যুলেট অফিস বন্ধ করে।

ফলে রুশ- মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মারাত্মক নাজুক হয়ে পড়ে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে সমসংখ্যক মার্কিন কূটনীতিক বহিষ্কার ও একটি মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ ঘোষণা করে। মস্কো থেকে কূটনীতিক বহিষ্কারের ওই ঘটনাটি সাম্প্রতিককালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নেওয়া রাশিয়ার প্রথম বড় পদক্ষেপ। এই অবস্থার মধ্যেই অনুষ্ঠেয় বৈঠক-উত্তর রুশ-মার্কিন সম্পর্ক কতটুকু স্বাভাবিক হতে পারে সেটি গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্র্ণ ব্যাপার হলো, বহুল আলোচিত সর্বশেষ বৈঠকে দুই নেতা কি আলোচনা করলেন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কূটনীতিকের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, ‘দুই নেতার বৈঠকটি ছিল আলোচ্যসূচি ছাড়া।’ যদিও তারা দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। তবে আলোচনা শুরুর আগে হেলসিংকি পৌঁছেই স্বভাবসুলভ কায়দায় সবাইকে রীতিমতো অবাক করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আখ্যায়িত করে মস্কো-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য নিজের পূর্বসূরিদের দায়ী করেন। এ এক অভিনব ঘটনা।

এমন কায়দায় আলোচনার আগেই রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে কি বার্তা দিলেন তিনি? অন্যদিকে এই বক্তব্যের অল্পবিস্তর পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য সমর্থন করেন। ফলে আলোচনা শুরুর আগেই দুই নেতার মধ্যে একটি কৌশলগত সহাবস্থানের সম্ভাবনা প্রবল হয়। বাস্তবিক অবস্থায় অনেকটাই এরকমই দৃশ্যমান হয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ‘মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অবস্থার সঙ্গে অনেকটাই দ্বিমত ট্রাম্প।’ এ ব্যাপারে তিনি রুশ নেতার কাছে জানতে চাইলে পুতিন তা বরাবরের মতো অস্বীকার করেন। যদিও বৈঠক-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে পুতিন সরাসরিই বলেন তিনি নিজে ‘ট্রাম্পের বিজয় চেয়েছিলেন।’

এছাড়া দুই নেতার মধ্যে আলোচনার বিস্তারিত অনেকটাই অস্পষ্ট। অন্যদিকে আলোচনা শুরুর আগে হেলসিংকি বৈঠক নিয়ে যত আগ্রহ দেখা দিয়েছিল বৈঠক-উত্তর পরিস্থিতি ততটাই নিষ্প্রভ।

সিরিয়া, ইরান পরমাণু চুক্তি, ন্যাটো, ইউরোপের সামরিক পরিস্থিতি ও উত্তর কোরিয়ার নিরস্ত্রীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুতে আলোচনায় কতটা গুরুত্ব পেয়েছে তা স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে স্ট্যার্ট চুক্তিদ্বয়ের ভবিষ্যৎ, কৌশলগত মজুদ অস্ত্রসমূহের হ্রাসকরণ, মহাকাশ সহযোগিতা, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতি, ক্রিমিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে দুই দেশের মতপার্থক্য কতটা কমে এলো তা বুঝা যাচ্ছে না।

কিন্তু এসব ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য কমে না এলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি প্রত্যাশা করা হবে ভুল। এছাড়াও দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের স্বাভাবিকতা ফেরানোর কোনো লক্ষণ এই বৈঠকে দেখা যায়নি। তা হলে এই আলোচনার ফলাফল কি?

দুই নেতার বৈঠকটি আসলে একটি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ। এর বাইরে অগ্রগতির কোনো আলামত আপাতত দৃশ্যমান হচ্ছে না। অনেকেই আলোচনাকেই গুরুত্বপূর্র্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। এতে করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থবিরতা কেটে ভবিষ্যৎ আলোচনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আসলে এমনটিও মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করা সত্ত্বেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বন্ধ ছিল না কখনই।

এই হেলসিংকিতেই অতীতে বহুবার দুই দেশের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা মতৈক্যে পৌঁছেছেন। যে কারণে এবারের আলোচনার দিকে তাকিয়ে ছিল সারা বিশ্ব। কিন্তু প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায়, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক কার্যত সুনির্দিষ্ট কোনো ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে হেলসিংকি আলোচনা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া সঞ্চার করতে সক্ষম হবে না।

তবে রুশ-মার্কিন যেকোনো আলোচনার কিছু প্রতিক্রিয়া থাকেই। ধারণা করা হচ্ছে দুই নেতা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন। এছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক আলোচনার গুরুত্বপূর্র্ণ এজেন্ডা ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এক্ষেত্রে পুতিন এই চুক্তির কার্যকারিতার ব্যাপারে রুশ উৎকণ্ঠার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এই ইস্যুতে ট্রাম্প তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি নিরাপত্তা প্রশ্নে একটি টেকসই কর্মকৌশলের কথা শোনা গেলেও তা নিশ্চিত নয়। এছাড়া অন্যান্য সব আলোচনাই অত্যন্ত গতানুগতিক বলেই ধরে নেওয়া যায়।

তবে আলোচনা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ওয়াশিংটন বেশকিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়। যেগুলো আলোচনায় সরাসরি প্রভাব বিস্তার না করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক দুই দফায় সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা যায়, এই ঘটনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়াবিষয়ক রুশ নীতির প্রতি মার্কিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

একই সঙ্গে আলোচনা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, ‘ইরান যতদিন সিরিয়ায় থাকবে ততদিন মার্কিন সেনারাও সেখানে অবস্থান করবে।’ এই বক্তব্যের গুরুত্ব নিশ্চয় মস্কো অনুধাবন করতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে সবার কাছেই সিরিয়াবিষয়ক বাস্তবতা পরিষ্কার হয়ে উঠবে।

অন্যদিকে রুশ-মার্কিন শীর্ষ আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে মস্কো। ক্রেমলিনে এ নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের স্পিকার থেকে পুতিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সবাই এই ঘটনাকে ইতিবাচক আখ্যায়িত করেছেন, পক্ষান্তরে মার্কিন প্রশাসনের কোনো কোনো অংশ এই আলোচনাকে নিজেদের জন্য খুব বেশি লাভজনক বলে মনে করছে না। তাই হেলসিংকি আলোচনার সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করা কিছুটা কঠিন। তবে রুশ- মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও স্বাভাবিক করতে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্র্ণ প্রভাব বিস্তার করবে এটি বলা যায়।

হাসান জাবির: বিশ্লেষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা

433 ভিউ

Posted ২:৫৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com