কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জুন) :: বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনীতিবিদ ও বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রয়াস সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবনতি ঘটে চলেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু অস্থায়ী শিবিরে অবস্থান করছে। প্রধানত থেরাবাদী বৌদ্ধবাদী মিয়ানমার এখন পর্যন্ত তাদের প্রত্যাবর্তন অসম্ভব করে তুলেছে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এই সঙ্কট সুরাহায় এগিয়ে আসেনি। এদিকে বাংলাদেশ বঙ্গোপসারের ভাসান চরে তাদের পুনর্বাসনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেটিও বড় ধরনের ঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কাছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সঙ্কট দুই বছর ধরে চলছে। আসন্ন বর্ষা মওসুমে তাদের নড়বড়ে ও জনাকীর্ণ ঘরগুলো মারাত্মক বিপদে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অতীতে নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছিল। এ ধরনের পরিস্থিতির যাতে নতুন করে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সবই ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ ইন্দোনেশিয়ার জেনারেল বিরানতো চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। থেরাবাদী বৌদ্ধবাদী থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রাবিত ওনউনও প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তার সাথে সুপ্রিম জেনারেল মিন আং লাইনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু তিনিও সফল হতে পারেননি।
বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ায় সমাধান পাওয়ার ব্যাপারে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
কারো কারো মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে সভ্যতাগত দ্বন্দ্ব দেখার ফলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। এ ধরনের চিন্তাভাবনা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে। কৃত্রিম এ ধরনের পরিস্থিতি কারো কাম্য নয়।
এই প্রেক্ষাপটে সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এখনো কিছু করা সম্ভব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য।
অতীতে সম্মিলিত প্রয়াসে নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৯২-৯৩ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানের পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও অন্যদের প্রয়াসের ফলে প্যারিস শান্তিচুক্তি হয়েছিল। এর ফলে লাখ লাখ কম্বোডিয়ান উদ্বাস্তু দেশে ফিরে যেতে পেরেছিল।
ফলে সম্মিলিত উদ্যোগই নতুন পথের সৃষ্টি করতে পারে। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচন নতুন পররাষ্ট্র উদ্যোগের সূচনা করতে পারে। এসব রাষ্ট্রের সাথে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় যোগ দিতে পারে। তারা মিয়ানমারকে তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি করাতে পারে।
এ ব্যাপারে আসিয়ান সদস্য থাইল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। তারা আসিয়ানের মধ্যে যাতে অনৈক্য ও বিভেদের সৃষ্টি না হয়, সেই চেষ্টায় মিয়ানমারকে এই সঙ্কট দ্রুত সুরাহা করার জন্য বোঝাতে পারে। মিয়ানমারের সাথে থাইল্যান্ডের ঘনিষ্ঠতা থাকায় তারা এ ব্যাপারে অত্যন্ত সফল হতে পারে। তাছাড়া থাইল্যান্ড এখন আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। কাজেই তাদের এ ব্যাপারে অনেক কিছু করার আছে।
একইভাবে ইন্দোনেশিয়া নিশ্চয়তা দিতে পারে। রোহিঙ্গাদের মতো একই ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তারা উগ্রবাদের বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থার সুপারিশ করতে পারে।
অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারকে বিশেষ করে দেশটির সামরিক বাহিনীকে বোঝাতে পারে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সঙ্কট ঝুলিয়ে রাখা হলে আন্তর্জাতিক অবরোধসহ নানা সমস্যার বিষয়টি তাদের অবগত করতে পারে।
মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা সমস্যা কেবল রাখাইন রাজ্য বা মিয়ানমারের সমস্যা নয়, এটি ভবিষ্যতে আসিয়ানকেও প্রভাবিত করতে পারে।
লেখক : জন ব্লাক্সল্যান্ড
অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টিলিজেন্স স্টাডিজ, প্রধান, স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স স্টাডিজ সেন্টার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
Posted ৯:৪১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ জুন ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta