কক্সবাংলা ডটকম(১ আগস্ট) :: মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সিঙ্গাপুরে অভিবাসন ব্যয় বরাবরই বেশি। ক্ষেত্রবিশেষে ৭ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয় দেশটিতে অভিবাসন প্রত্যাশী একজন কর্মীকে। এ পরিমাণ অর্থ উপার্জনে ওই শ্রমিকের প্রায় তিন বছর লেগে যায়। আবার কোনো কারণে যদি এক বছরের মধ্যে ফেরত আসতে হয়, তখন বড় অংকের ঋণের বোঝা বইতে হয় ওই শ্রমিককে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সিঙ্গাপুরে অভিবাসন ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, এখন থেকে সিঙ্গাপুরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সব ধরনের খরচসহ সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ২ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ টাকা। যদি কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারিত এ অভিবাসন ব্যয়ের বেশি অর্থ আদায় করে, তবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সরকার।
সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিবাসন ব্যয়ের ওপর আরোপিত সার্ভিস চার্জ ও অভিবাসন ব্যয়সীমা বেঁধে দিয়ে গত ২৭ জুলাই একটি সরকারি আদেশ জারি করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ড. মাসুমা পারভীন স্বাক্ষরিত ওই আদেশে সিঙ্গাপুরে অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে এ সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা নির্ধারণের কথা জানানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটিতে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ওভারসিজ ট্রেনিং সেন্টারের (ওটিসি) প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮০০ টাকা। আর অভিবাসন ব্যয় বাবদ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা। সে হিসাবে সিঙ্গাপুরে একজন কর্মী পাঠাতে সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় হবে ২ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ টাকা।
জানা গেছে, ওটিসির প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় নির্ধারিত ১ লাখ ২০ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে বিএসি টেস্ট ফি ২৫ হাজার ৮০০, ওটিসি ফি ২১ হাজার, প্রায়র অ্যাপ্রুভাল ফি ১২ হাজার, তিন মাসের প্রশিক্ষণ ফি ৩০ হাজার এবং আহার ও বাসস্থান বাবদ ৩২ হাজার টাকা।
এছাড়া অভিবাসন ব্যয়ের ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকার মধ্যে পাসপোর্ট খরচ ৭ হাজার, মেডিকেল ফি ৫ হাজার, কল্যাণ ফি ৩ হাজার ৫০০, ডাটা রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০, স্মার্ট কার্ড ২৫০, ট্রেনিং এন্ট্রি ফি ১২০, আয়কর ৪০০, পোশাক ৩ হাজার, ওয়েলফেয়ার ম্যাটেরিয়াল ২ হাজার, উড়োজাহাজ ভাড়া ২৭ হাজার, বিপণন ৪০ হাজার, রিক্রুটিং এজেন্সি সার্ভিস চার্জ ১৫ হাজার, স্থানীয় বীমা ৫ হাজার ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ফি বাবদ ৩৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জাবেদ আহমেদ বলেন, অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য খাতসংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিভিন্ন সময় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় উপস্থিত সবার কাছ থেকেই মতামত নেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে সিঙ্গাপুরের সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে একজন কর্মী সিঙ্গাপুরে গিয়ে তিন-পাঁচ মাসে যে অর্থ উপার্জন করবেন, অভিবাসন খরচ যাতে তার বেশি না হয়, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
নতুন আদেশ অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরে অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মীর কাছ থেকে সার্ভিস চার্জসহ পুরো অর্থই চেক বা ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির অফিশিয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করতে হবে এবং এ সময় কর্মীকে প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দিতে হবে। বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণের সময় এসব ডকুমেন্ট জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোয় জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আদেশে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে গেছেন ১৯ হাজার ৭৮৪ জন। ২০১৬ সালে ৫৪ হাজার ৭৩০ ও ২০১৫ সালে ৫৫ হাজার ৫২৩ জন বাংলাদেশী দেশটিতে গমন করে।
Posted ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta