শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

১৫ আগস্ট ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র

বুধবার, ১৫ আগস্ট ২০১৮
631 ভিউ
১৫ আগস্ট ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র

কক্সবাংলা ডটকম(১৫ আগস্ট) :: ১৫ আগস্ট শুধু বেদনাবিধুর মর্মান্তিক শোকের দিনই নয়, এ ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে তারই নেতৃত্বে ’৭১-এ অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা নস্যাৎ করে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের এক নীল নকশা। জাতি এখনো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়মুক্তি পায়নি। যুদ্ধাপরাধী ও কিছু ঘাতকের ফাঁসি এই দায়মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে, পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে নিয়ে গিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে নিয়ে গিয়েছিল সেই শঙ্কা বা হুমকি থেকে আমরা কি এখন মুক্ত? যারা এখনো ’৭১-এর বছরকে গণ্ডগোলের বছর বলে স্বাধীনতা যুদ্ধ মানে না, জাতির পিতাকে স্বীকার করে না তাদের সঙ্গে নিয়ে দেশে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব? এদের মনমানসিকতা যদি নির্মূল না হয় তাহলে সুযোগ-সন্ধানী এদের কারণে জাতিকে এক দিন চরম মূল্য দিতে হবে। দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ বাঁচাতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য।

১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনের একটি বেদনাত্মক দিন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময়কালে আমি সেনাবাহিনীতে রংপুর সেনানিবাসে ১৫তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্বে ছিলাম। এর আগে কিছু সময়ের জন্য চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ৮ম ও ১৮তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলাম এবং তারও আগে স্বাধীনতার পর পর ঢাকা সেনানিবাসে প্রায় দুই বছরের অধিককাল দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহ-অধিনায়ক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের দায়িত্ব পালন করি।

তৎকালীন সামরিক বাহিনীর একজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে আমার দৃষ্টিতে এবং আমার জানা মতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করব। এর আগে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,  মোশতাক গংরা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনা মনেপ্রাণে লালন করে আসছিল। সেদিন ভারতের মাটিতে মোশতাককে কেন্দ্র করে একটি চক্র গড়ে উঠেছিল। এদের মধ্যে তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মাহবুবুল আলম চাষী, হোসেন আলী (কলকাতায় তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত) এদের নাম উল্লেখযোগ্য।

এই চক্রটি সেই সময়ে স্বাধীন বাংলা সরকারের দায়িত্বে থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করত এবং নিজেদের ভিন্ন সত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তখন থেকেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে সুনিশ্চিত জেনেও মোশতাকের নেতৃত্বে এই চক্রটি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে নিয়ে Confederation গঠনের মত প্রকাশ করেছিল এই বলে, আপনারা স্বাধীনতা চান, না কি শেখ সাহেবকে চান? কারণ সেদিন একটি সংবাদ বহুল প্রচারিত ছিল যে পাকিস্তানের কারাগারে শেখ সাহেবের বিচার প্রায় সমাপ্তির পথে এবং যে কোনো মুহূর্তে তার ফাঁসি হয়ে যেতে পারে। ঠিক সেই সময়ে ভারতে বসে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন মহলে মোশতাকের এই উক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। এমনও প্রচার আছে যে, মোশতাক সেদিন স্বাধীন বাংলা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সুবাদে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে গোপনে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন।

স্বাধীন বাংলা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সরকারের মূল চালিকাশক্তি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামারুজ্জামানসহ অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে নিজের প্রাধান্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাতেন। স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধুকে কেউ মোশতাকের যুদ্ধকালীন সময়ের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করেছিল কিনা জানি না। বঙ্গবন্ধু তাকে তার সরকারের বাণিজ্য ও পরে পানিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু মোশতাক তার ভিতরে লুকিয়ে রাখা ষড়যন্ত্র লালন অব্যাহত রেখেছিলেন যার বহিঃপ্রকাশ পরবর্তীতে তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে নানাভাবে জোগান দিচ্ছিলেন এবং ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়নে একটি সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর এই ষড়যন্ত্রে গভীরভাবে জড়িত ছিল সেনাবাহিনীর কিছু চাকরিরত অফিসার ও কিছু অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। এই ঘটনাটি কোনো সামরিক অভ্যুত্থান ছিল না, কারণ ১৫ আগস্ট রাতে পুরো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যখন ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদসহ কিছু সংখ্যক অফিসারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর মাত্র দুটি ইউনিট নৈশ প্রশিক্ষণের নামে মাঝরাতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোর রাতের মধ্যেই একের পর এক সব অপারেশন সমাপ্ত করে।

উল্লিখিত দুটি রেজিমেন্ট ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দরের কাছাকাছি জায়গায় প্রথম বেঙ্গল লেন্সার সমবেত হয়। সেখান থেকে একটি অংশ প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ সংগ্রহ করে সবাই তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের নিকটবর্তী জায়গায় গভীর রাতে সর্বশেষ ব্রিফিং ও শপথ নেওয়ার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট সবাই মায়ের দুধের কসম নিয়ে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। এক গ্রুপ বঙ্গভবন, এক গ্রুপ বাংলাদেশ বেতার স্টেশন, এক গ্রুপ রক্ষী বাহিনীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থান এবং অন্যরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, সেরনিয়াবাতের বাড়ি ও শেখ মণির বাড়ির জন্য নির্ধারিত হয়। হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে রাত শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগমুহূর্তে নিজ নিজ টার্গেটে পৌঁছার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। যে দুটি গ্রুপ সেরনিয়াবাত ও শেখ মণি ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছিল তাদের নিকট কোনো ট্যাংক বহর ছিল না। সেরনিয়াবাতসহ প্রায় সাতজনকে হত্যা করা হয় সেরনিয়াবাতের বাড়িতে। শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

যে গ্রুপটি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল তাদের ট্যাংকও ছিল। বাড়ির নিচতলায় বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের ও শেখ কামালকে হত্যা করা হয়। একজন পুলিশ অফিসারও এই হত্যার শিকার হয়েছিলেন। গোলাগুলির আওয়াজ শুনে বঙ্গবন্ধু সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে টেলিফোন করেছিলেন। তাত্ক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও সময়ের অভাবের কারণে সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো ফোর্স সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এর মূল কারণ ছিল Information gap, সম্ভবত শফিউল্লাহর সঙ্গে কথা বলার পর লাল টেলিফোনে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আগেই নিচতলায় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু অসীম সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তা না হলে সিঁড়ির প্রথম ধাপে দাঁড়িয়ে এত বড় বিশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করতেন না— ‘তোরা কী চাস’? কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চাইনিজ গানের গুলি স্তব্ধ করে দিল চিরতরে ওই বজ্র কণ্ঠস্বর।

লুটিয়ে পড়লেন সিঁড়ির পরবর্তী ধাপের মধ্যে। কয়েকজন তখন ঢুকে পড়ল দোতলায় বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষে। সেখানে অবস্থান করছিলেন বেগম মুজিব, তাদের ছোট শিশু সন্তান রাসেল, লে. শেখ জামাল ও তাদের বধূদ্বয়। এরা ঢুকেই সবাই অটোমেটিক গান দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি করল। সে এক করুণ দৃশ্য। ক্ষণিকের মধ্যেই কক্ষে রক্তের বন্যা বয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু যদি দোতলা থেকে না আসতেন জে. শফিউল্লাহ বা অন্য কেউ যদি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খবরটি সময় মতো পৌঁছে দিতেন তাহলে দোতলার গেট ভেঙে ঢুকতে বেশ কিছু সময়ের ব্যাপার ছিল। এতে করে পুরো অপারেশন বিলম্বিত হতো। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধারের জন্য হয়তো সেনাবাহিনী ও অন্যান্য ফোর্স এগিয়ে আসতে পারত।

যে গ্রুপটি ট্যাংক বহর নিয়ে শেরেবাংলা নগর রক্ষীবাহিনীর অবস্থানে গিয়েছিল তাদের কাছে কিন্তু ট্যাংকের গোলা ছিল না— এটা রক্ষীবাহিনী বা অন্যরা জানত না। গোলাভর্তি ট্যাংককে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় বলে কেউ কাউন্টার অ্যাটাক করেনি। ট্যাংক বহরের লোকেরাও সেদিন ঝুঁকিপূর্ণ সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। এই গ্রুপগুলোতে ট্যাংক রেজিমেন্ট ও দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের চাকরিরত অফিসাররা ছাড়াও চাকরিচ্যুত মেজর ডালিম, ক্যাপ্টেন নূর, মেজর শাহরিয়ার ও অন্যরা ওইদিন ইউনিফর্ম পরিধান করেই নেতৃত্বে ছিল। জেনারেল শফিউল্লাহর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শেষ কথা যে হয়েছিল— সেই প্রেক্ষিতে বলতে হয় তার অনেক কিছু করণীয় ছিল।

বঙ্গবন্ধু যেন উপরের কক্ষ থেকে বের না হন এ জন্য এই পরামর্শ দিয়ে ঢাকা সেনানিবাস থেকে ৪৬ ব্রিগেডের ট্রুপস জরুরি ভিত্তিতে মুভ করে একটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারত। বঙ্গবন্ধু জে. শফিউল্লাহ ছাড়াও পুলিশ, রক্ষীবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে লাল টেলিফোনে হয়তো আলাপ করেছিলেন তারাও সঠিক কোনো পদক্ষেপ  গ্রহণ করেননি।

631 ভিউ

Posted ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৫ আগস্ট ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com